shono
Advertisement

Breaking News

এক অঙ্গে কৃষ্ণ-কালীর সহাবস্থান, ব্যতিক্রমী সবুজ কালী হুগলির এই বাড়িতে

দেবীর প্রিয় জুঁইফুল, ইলিশমাছ!
Posted: 04:58 PM Aug 21, 2023Updated: 05:02 PM Aug 21, 2023

সুমন করাতি, হুগলি: নীল কিংবা কালো নয়, কালীর গায়ের রং সবুজ! এমনই ব্যতিক্রমী কালীমূর্তির অধিষ্ঠান হুগলির (Hooghly) হরিপালের অধিকারী পরিবারের। শ্রীপতিপুর পশ্চিম গ্রামের ৭৪ বছরের সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতার মন্দির ও অধিকারী বাড়িতে পুজো হয় সবুজ কালীর। স্বপ্নাদেশে অবিকল এমনই দেবীমূর্তি পেয়েছিলেন বৈষ্ণব পরিবারের গৃহকর্তা। স্বপ্নে তাঁকে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজোর আদেশ দেন দেবী। সেই থেকে শ্রীপতিপুর গ্রামের অধিকারী পরিবারে পূজিতা হয়ে আসছেন কচি কলাপাতা (Green) গাত্রবর্ণের কালী।

Advertisement

হুগলি জেলার সুপ্রাচীন বর্ধিষ্ণু গ্রাম হরিপাল। এই অঞ্চলে একটি ছোট জনপদ শ্রীপতিপুর গ্রাম। এই গ্রামের অধিকারী পরিবারে দীর্ঘদিন যাবৎ পূজিতা মা সবুজ কালী (Goddess Kali)। এখানে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যপার হল মা কালীর গায়ের রঙ কচি কলাপাতার মতো সবুজ। এই গ্রামেরই এক দরিদ্র গোঁড়া বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। বৈষ্ণব সুলভ আচরণ ছোট থেকেই জন্মসূত্রে পেয়েছিলেন তিনি। তৎকালীন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করার পর কয়েক বছর ভিনরাজ্যে চাকরি করেছেন তিনি।

[আরও পড়ুন: ‘জোটে লাভ নেই, নির্দিষ্ট ইস্যু নিয়ে জনতার কাছে যেতে হবে’, INDIA-র সমালোচনায় পিকে ‘স্যর’]

তারপর ভাগ্যচক্রে আবারও গ্রামে এসে চাষাবাদ (Farming) করতে শুরু করেন। সব ঠিকঠাক চলার পর একপ্রকার জোর করেই পরিবার সূত্রে আঙুরবালা দেবীর সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু সংসারে তাঁর মতি ছিল না। মাঠেঘাটে শ্মশানে ঘুরে বেড়াতেন, এরকম কিছু বছর চলার পর জানা যায়, কোনও এক মাঠে তিনি গরুর খোঁটা বাঁধছিলেন। সেই মুহূর্তে তাঁর পিছন থেকে এক সাদা বস্ত্র পরিহিত সন্ন্যাসী এসে বলেন, ”অমুক স্থানে অমুক সময়ে তোমার দীক্ষা হবে, এরপরের ঘটনা সবটাই গুপ্ত।”

তারপর তিনি শ্মশানে সাধনা করতে করতে সিদ্ধিলাভ করেন। স্বপ্ন দেখে মা কালীর মন্দির তিনি প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কুলীন বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম তাঁর বাড়িতে কেউ তিলক সেবা রাধা গোবিন্দের নাম না করে জল স্পর্শ করেন না। সেই বৈষ্ণব বাড়িতে কালীপুজো তৎকালীন সমাজের মাথারা বললেন, ”নৈব নৈব চ।” কিন্তু সমস্ত বাধা অতিক্রম করে তিনি বাড়িতে কালীর ঘট স্থাপন করলেন।

পরে আবারও স্বপ্নদৃষ্ট হোন যে মায়ের মূর্তি প্রতিস্থাপনের, কিন্তু এ কী! এ তো কালো বা নীল নয়, এ তো নবদুর্বার উপর শ্যাম ও শ্যামা একসঙ্গে এবং কৃষ্ণ ও কালীর আদেশে বটকৃষ্ণ ঠাকুর রটন্তী কালীপূজার দিন প্রতিষ্ঠা করেন এই সবুজ কালীমাতাকে। এখানে দেবী পরম বৈষ্ণব। রটন্তী কালীপুজো নেপথ্যে কাহিনি, শ্রীকৃষ্ণ ও রাধিকা যখন লীলা করছিলেন সেই খবর গিয়ে পৌছায় রাধিকার স্বামী আয়ান ঘোষের কাছে। রাধিকার স্বামী আয়ান ঘোষ এসে দেখেন, রাধিকা কালীপুজো করছেন, প্রেমিকাকে অপমানের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ কালীর রূপ ধরেন, যা কৃষ্ণকালী নামে পরিচিত, রাধিকার কালীপূজার এই কথা রটে গিয়েছিল বলে এই তিথিতে কালী পূজাকে রটন্তী কালী পূজা বলা হয়। এখন বটকৃষ্ণ ঠাকুরের সুযোগ্য পুত্র কালিপদ অধিকারী (পণ্ডিত শিবানন্দপুরী) এই পঞ্চমুণ্ডির মন্দিরে সাধনা করেন। 

[আরও পড়ুন: নিয়োগ দুর্নীতির শিকড়ে পৌঁছতে মরিয়া ইডি, ‘কালীঘাটের কাকু’র সম্পত্তির খোঁজে একাধিক জায়গায় হানা]

সারাবছর এই বৈষ্ণব বাড়িতে পূজিতা হোন মা সবুজ কালী। এছাড়া মাকে বাঁশি বাজিয়ে শোনানো হয়। যেহেতু মা কৃষ্ণ ও কালির রূপ। আর এখানে নেই কোনও বলি প্রথা। এই সবুজ কালী মায়ের পছন্দ ইলিশ মাছ আর জুই ফুল। সবুজ কালীর এই বিশেষ রূপ দর্শন করতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু মানুষ ছুটে আসেন এই বাড়িতে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement