shono
Advertisement

Breaking News

অধিকার ছিল না উপাসনার, শরীরে রাম নামের উল্কি এঁকেই উপাসনা ‘রামনামী’সম্প্রদায়ের

তুলসীদাস রচিত রামচরিত মানস সামনে রেখেই মনে প্রাণে রামকে অনুভব করেন তাঁরা।
Posted: 04:41 PM Mar 30, 2023Updated: 04:41 PM Mar 30, 2023

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রভু রামই তাঁদের জীবনের আধার। রামকে ঘিরেই তাঁদের সব কিছু। উলটোদিকে স্বয়ং শ্রীরামও যেন সবসময় তাঁদের মধ্যেই বিরাজ করছেন। সারা শরীরে, বাড়ির দেওয়ালে সর্বত্রই তো রাম নামের ছড়াছড়ি। অথচ একসময় এঁদের ‘অচ্ছুৎ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এঁদের ছায়া মাড়ালেও জাত যাবে, এমনটাই মনে করতেন তৎকালীন উচ্চবর্ণের হিন্দুরা।

Advertisement

এঁরা রামনামী। মূল সমাজের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রভু রামকে অবলম্বন করে গড়ে ওঠা এক সম্প্রদায়। ছত্তিশগড়ের রাজগড়, বিলাসপুর, চম্পা-সহ একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছেন এঁরা। সকলেই অবশ্য রাম নামের সূত্রে গাঁথা। প্রভু রামের অবস্থান এঁদের সমাজ জীবনের সর্বত্র। প্রভু রামের অবস্থান এঁদের সারা শরীরেও। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেরই সারা শরীর জুড়ে রাম নামের উল্কি আঁকা। এমনকী অনেকের মুণ্ডিত মস্তক। সেখানেও রামনাম। বাড়ির দেওয়ালেও বড় বড় অক্ষরে প্রভু রামের নাম লিখে রাখেন এঁরা। যেন সত্যিই শয়নে স্বপনে তাঁদের ঘিরে আছে শ্রীরাম।

[আরও পড়ুন: রামনবমীর পরেও রামের পুজো চলে বাংলায়, জেনে নিন বাংলার রামঠাকুরের কাহিনি]

কিন্তু এমন উপাসনার প্রেক্ষাপট ঠিক কী? অধ্যাপক রামদাস তাঁর এক বইতে এই রামনামী সম্প্রদায় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন। সেখান থেকেই এঁদের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবনা সম্পর্কে বিশদে জানা যায়। পুর্বে এঁরা ছিল চর্মকার বা মুচি। চামড়ার জিনিস তৈরি করাই ছিল এঁদের প্রধান পেশা। তাই উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এঁদের কার্যত অচ্ছুৎ বলেই মনে করতেন। কোনও সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না এঁদের। এমনকি মন্দিরে ঢোকার অধিকারও দেওয়া হত না।

অধ্যাপকের মতে, হিন্দু সমাজের উচ্চবর্ণের এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে একসময় বেশ কিছু চর্মকার পেশা বদল করেন। কেউ শুরু করেন চাষবাস, আবার কেউ বেছে নেন মৃৎশিল্প। অনেকে আবার ধাতুশিল্পকেও পেশা হিসেবে বেছে নেন। আর ধর্মের দিক দিয়ে এঁরা আকড়ে ধরেন মর্যাদা পুরুষোত্তম রামচন্দ্রকে। রামায়ণ বলে, বনবাসকালে সমাজের প্রান্তিক মানুষদের বুকে টেনে নিয়েছিলেন শ্রীরাম। সূর্যবংশীয় অহংবোধ এতটুকু স্পর্শ করতে পারেনি তাঁকে। সেই রামচন্দ্রকেই নিজেদের সহায় সম্বল হিসেবে আঁকড়ে ধরেন এই অত্যাচারিত মানুষগুলো। নিজেদের নামের সঙ্গে তাঁরা জুড়ে দেন রামের নাম। রামের মূর্তি ছোঁয়ার অধিকার ছিল না। তাই সারা শরীরে রামের নাম উল্কি করে ফেলেন তাঁরা।

এঁদের সমাজে সকলেই সমান। সকলের পদবীই রাম। তবে সারা গায়ে রাম নামের উল্কি করার প্রবণতা বর্তমানে কমেছে। বেশ কিছু বয়স্ক মানুষ এখনও জীবিত আছেন যাঁদের সারা শরীরে রাম নামের উল্কি রয়েছে। তবে এখন অনেক রামনামীই এমনটা করেন না। বদলে রামের নাম লেখা একটা নাবাবলি গায়ে জড়িয়ে রাখেন এঁরা। মাথায় পরেন ময়ূরের পালক দিয়ে তৈরি একটি মুকুট। রাম নাম জপ করাই এঁদের প্রধান কাজ। বিভিন্ন মেলা পার্বণে রামকথা শোনানোর ডাক পান এঁরা।

বিশেষত ছত্তিশগড়ের রায়পুর জেলায় প্রতিবছর এক বিশাল মেলা বসে শুধুমাত্র রামনামী দের জন্যই। সেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তাঁরা। ঘুঙুর পরে রামের নাম করতে করতে অদ্ভুত এক নাচের প্রচলন রয়েছে এই মেলায়। প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হন এই মেলায়। যাঁদের অধিকাংশই রামনামী সম্প্রদায়ভুক্ত। এছাড়া বিভিন্ন গ্রামে এঁদের নিজস্ব প্রার্থনা গৃহও রয়েছে। সেখানেও নিয়মিত রামের নামগান করেন সকলে। তবে মন্দিরে আলাদ করে কোনও বিগ্রহ নেই। তুলসীদাস রচিত রামচরিত মানস সামনে রেখেই মনে প্রাণে রামকে অনুভব করেন এঁরা। আর তখন প্রভু যেন স্বয়ং মর্ত্যে নেমে এসে বিভোর হয়ে সেই প্রার্থনা শোনেন।

[আরও পড়ুন: রাম নাম লেখা পাথরও ভাসে জলে, রামের প্রতি ভক্তিতেই জন্ম অজস্র জনশ্রুতির]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement