অভিরূপ দাস: মহাকাশে অন্য কোথাও রয়েছে প্রাণের স্পন্দন! কোন ভাষায় কথা বলে তারা, কীরকম দেখতে সে প্রাণীদের। জওহরলাল নেহরু রোডের একটা কালো পাথর ঘিরে সারা পৃথিবী জুড়ে কৌতূহল। ভিনগ্রহের সেই পাথর এই মুহূর্তে রয়েছে জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার উল্কা সংগ্রহশালায়। দেশের একমাত্র এই উল্কা সংগ্রহশালায় শয়ে শয়ে পাথর। কোনওটা তিনকোনা, কোনওটা চৌকো, কোনওটা ট্যারাব্যাঁকা। সবমিলিয়ে ৬৪৩টি। এই এত এত পাথর পৃথিবীর কোনও ভূখণ্ড থেকে তুলে আনা নয়। সমস্ত পাথর এসেছে মহাকাশ থেকে!
তেমনই একটি উল্কা ২০১৭ সালের জুন মাসে রাজস্থানের মুকুন্দপুরায় পড়েছিল। যাকে ঘিরে এখন রহস্য তুঙ্গে। কারণ? গবেষকরা বলছেন, এই উল্কাখণ্ডকে কার্বনেশিয়াস কনড্রাইট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে! অর্থাৎ এই কলকাতায় মুকুন্দপুরার সেই উল্কা। পাথরে রয়েছে প্রচুর কার্বন, ক্লে মিনারেল, আর জল। জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার উল্কা গবেষণাগারের প্রধান অমিত মণ্ডল জানিয়েছেন, নাসার বিজ্ঞানীরাও মনে করছেন, এমন কোনও গ্রহ থেকে এই পাথর ছুটে এসেছে যেখানে রয়েছে ভিনগ্রহের প্রাণী। সমান্তরালভাবে গবেষণা চালাচ্ছে 'দ্য ন্যাশনাল অ্যারনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন আর জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া'।
কীভাবে উল্কা আসে পৃথিবীতে? উল্কাপাত, সাদা বাংলায় যাকে বলা হয় 'তারাখসা'। মহাকাশে ভেসে বেড়ায় নানা মাপের পাথরের খণ্ড, গ্রহাণু। ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে পৃথিবীর অভিকর্ষের ঘেরাটোপে এলে এরা ছুটে আসে ভূপৃষ্ঠের দিকে। মহাকাশে এরা আকারে যত বড় থাকে, মাটিতে পড়ার পর সেই আকার থাকে না। কারণ, বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এলেই জ্বলে ওঠে উল্কারা। সিংহভাগ ছোট অথবা মাঝারি আকারের উল্কা পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়ার আগে জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যায়। যেগুলি আকারে বিশাল বড় সেগুলি জ্বলে পুড়ে গেলেও উল্কাখণ্ডের কিছু অংশ এসে পড়ে ভূপৃষ্ঠে। তেমনই একটি রাজস্থানের ওই উল্কাখণ্ড। কাচের বাক্সের মধ্যে রাখা রয়েছে তা।
ভূবিজ্ঞানী অমিত মণ্ডলের কথায়, "নাসাও এই পাথরটা নিয়ে কাজ করছে। যে গ্রহ থেকে এই উল্কাখণ্ড পৃথিবীতে এসে পড়েছে তাকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তবে একটি ইঙ্গিত রয়েছে যে গ্রহ থেকে এই পাথরের টুকরো এসেছে সেখানে জীবনের চিহ্ন থাকাটা অসম্ভব নয়। কারণ এই উল্কা টুকরোর মধ্যে অরগ্যানিক কিছু নমুনা মিলেছে।" আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে এই গবেষণা সম্পূর্ণ হবে বলে আশা করছেন জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার উল্কা গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান অমিত মণ্ডল।
কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, উল্কা নিয়ে গবেষণায় প্রধান বাধা চোরাকারবারিরা। ভারতীয় আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখা যায় না উল্কা। তা রাখার স্বত্বাধিকার একমাত্র জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার। কোনও এলাকায় উল্কা পড়লেই স্থানীয় প্রশাসন মারফত খবর আসে জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ায়। তাদের আধিকারিকরা পৌঁছে যান সেখানে। কিন্তু মহাকাশ থেকে ছিটকে আসা এই পাথরের টুকরো দিয়ে ঘর সাজাতে চান অনেক ধনকুবের। সেক্ষেত্রে উল্কা পড়লেই যে জিএসআই-এর হাতে আসে তেমনটা নয়। অনেক সময় গ্রামবাসীরদের কাছ থেকে মোটা টাকা দিয়ে উল্কা কিনে নেয় চোরাকারবারিরা। খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছে জিএসআই-এর আধিকারিকরা দেখেন, স্রেফ পাথর পড়ে। সম্প্রতি বিহারে এক টুকরো উল্কা পড়েছিল। বিহার প্রশাসন তা দিতে চায়নি জিএসআই-কে। জিও সায়েন্টিস্ট অমিত মণ্ডল, "এমন ঘটনা চূড়ান্ত অনভিপ্রেত। উল্কা কোনও রাজ্যের সম্পত্তি নয়। ভারতীয় আইন অনুযায়ী উল্কা সংগ্রহে রাখতে পারে একমাত্র জিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া।"
