গৌতম ব্রহ্ম: দৃষ্টিশক্তি অসাধারণ। প্রতিক্রিয়া অসম্ভব দ্রুত। তাই জাল বোনারও দরকার পড়ে না। স্রেফ লাফিয়েই শিকারের কম্মো কাবার করে দিতে পারে। এমনই দু'টি নতুন লাফানো মাকড়সার প্রজাতির সন্ধান পেলেন জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা জেডএসআই-এর বিজ্ঞানীরা। ড. সৌভিক সেন এবং ড. সুধীন পি পির নেতৃত্বে দলটি মেঘালয়ের জীববৈচিত্রময় অঞ্চলে তাদের সন্ধান পেয়েছে। আন্তর্জাতিক সাময়িক পত্রিকা 'জুটাক্সা'-র নতুন সংখ্যায় এই বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
আসেমোনিয়া ডেনটিস এবং কোলিটাস নংওয়ার নামের এই নতুন প্রজাতিগুলি সালটিসিডি বা লাফানো মাকড়সার পরিবারভুক্ত। তাদের অসাধারণ দৃষ্টিশক্তি, দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং জাল না বুনে শিকার অনুসরণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ে খাদ্য আহরণের ক্ষমতা তাদের অন্যান্য মাকড়সার থেকে আলাদা করে। জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া বা জেডএসআই-এর বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। এই আবিষ্কার উত্তর পূর্ব ভারতের ইন্দো-মায়ানমার মহাজীববৈচিত্র অধ্যুষিত অঞ্চলের অংশের আন্তর্জাতিক গুরুত্বকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মূল আবিষ্কার ও বৈশিষ্ট্য
আসেমোনিয়া ডেনটিস
এটি দেশে আসেমোনিয়া পরিবারের মাত্র তৃতীয় প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত হল। আকারে ছোট এই প্রজাতির ভারতবর্ষে অত্যন্ত অল্প অনুসন্ধান করা হয়েছে। প্রজাতিটির নামকরণ হয়েছে ডেনটিস শব্দ অনুসারে। কারণ পুরুষ মাকড়সার 'পালপাল ফিমার' অংশে দাঁতের মতন বিশেষ প্রত্যঙ্গ লক্ষ করা গেছে। এটি এই বিশেষ প্রজাতির পরিচয়ের প্রধান চিহ্ন। পুরুষ মাকড়সার দেহ সবুজ- বাদামি এবং পেটের অংশে উলটো ভি আকৃতির হালকা হলুদ চিহ্ন থাকে। আবার অন্যদিকে স্ত্রী মাকড়সা কালচে নকশা ছাড়া দুধের সরের মতো সাদা রঙের হয়।
কোলিটাস নংওয়ার
এটি কোলিটাস পরিবারের মাত্র দ্বিতীয় প্রাচ্যের প্রজাতি হিসেবে ভারতবর্ষে সনাক্ত হল। প্রজাতিটির নামকরণ করা হয়েছে এটির আবিষ্কার স্থল মেঘালয়ের নংওয়ার গ্রামের নামে। পুরুষ ও স্ত্রী দু'টিরই গায়ে ডিম্বাকৃতি লালচে বাদামি 'ক্যারাপেস' এবং হালকা বাদামি পেট থাকে। পেটের সামনের দিকে সাদা ডোরাকাটা দাগ এবং পিছনের দিকে পাঁচটি 'সেভ্রন' আকৃতির সাদা দাগ থাকে।
গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ড. সৌভিক সেন এবং ড. সুধীন পি পি জানাচ্ছেন, এই আবিষ্কার উত্তর-পূর্ব ভারতের অসাধারণ জীববৈচিত্রের আভাসমাত্র। আরও বহু প্রজাতি আবিষ্কৃত হওয়া সময়ের অপেক্ষা। এদিকে জেডএসআই এর পরিচালক ড. ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ধরনের সন্ধান, বিশেষত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে, ভারতের বিশাল ও অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ নথিভুক্ত করতে আরও বিস্তৃত জরিপের প্রয়োজনীয়তার উজ্জ্বল প্রমাণ। মেঘালয়ের পবিত্র অরণ্যভূমি এবং পর্বতমালা আমাদের অনন্য পরিবেশ সম্পদ।
