নিরুফা খাতুন: 'রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে'। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই মর্মার্থ বুঝি মিথ্যে এবার! আলোর দূষণে মুখ ঢেকেছে কলকাতার আকাশ। তাই সন্ধ্যা নামলেও খালি চোখে আর সেভাবে দেখা মিলছে না তারাদের। গত কয়েক বছর ধরে শহরের আকাশে দেখা নেই কালপুরুষ, সপ্তর্ষিমণ্ডল। ধ্রুবতারাটিও যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে!
পৃথিবী থেকে শত শত আলোকবর্ষ দূরে নক্ষত্রদের অবস্থান। সুদূরের সেসব আলোক'বিন্দু' ঘিরে মানুষের কৌতূহলের সীমা নেই। অসীম আকাশে দৃশ্যমান তারাদের নিয়ে ছবিও এঁকেছেন বিজ্ঞানীরা। কাল্পনিক হলেও চোখের সামনে স্পষ্ট হয়েছে তারামণ্ডলের ছবি। সবচেয়ে পরিচিত তারামাণ্ডল সপ্তর্ষি, কালপুরুষ। সন্ধ্যা হলেই আকাশে ফুটে ওঠে তারারা। জোনাকির মতো আকাশজুড়ে তারা বিরাজ করে। কিন্তু এখন আলো ও ধূলিকণার দূষণমাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, শহরের আকাশে খালি চোখে তারা প্রায় দেখা যায় না। এম পি বিড়লা তারামণ্ডলের কিউরেটর ড. শুভব্রত দত্ত বলছেন, "কলকাতা এখন অনেক ঝাঁ-চকচকে হয়েছে। সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দূষণও। বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ তো বাড়ছে। রাত হলে আলোর দূষণও বেড়ে যায়। শীতকালে শহরে আকাশে সপ্তর্ষিমণ্ডলকে দেখা যেত। কিন্তু গত বছর তা দেখা যায়নি।''
কলকাতায় আকাশ দেখার জায়গা এম পি বিড়লা তারামণ্ডল।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, ''বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শহরে আলোকায়নের কাজ করা হচ্ছে না। যে কারণে শহর আলোকিত করতে গিয়ে দূষণমাত্রা বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে। কোথায় কতটা আলো দরকার, তার কোনও সমীক্ষা করা হয় না। কিছু কিছু জায়গায় সারারাত অকারণে অতিরিক্ত আলো জ্বলে। এতে রাতভর আলোর দূষণে ভরে ওঠে মহানগর। দিনে সূর্যের আলোর জন্য তারাদের দেখা যায় না। রাতেও এই অতিরিক্ত আলোই আমাদের নজর থেকে তারাদের আড়াল করে রাখছে।''
আলোর দূষণে দূষণের পাশাপাশি দোসর হয়ে উঠেছে গগনচুম্বী বহুতলগুলি। টেলিস্কোপের দৃষ্টিপথেও এসব বহুতল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে এম পি বিড়লা তারামণ্ডলের কর্তৃপক্ষ। এবছর মহাকুম্ভ মেলার সময় সাত গ্রহ বুধ, শনি, শুক্র, বৃহস্পতি, মঙ্গল, নেপচুন ও ইউরেনাস এক সরলরেখায় এসেছিল। কিন্তু কলকাতার আকাশে টেলিস্কোপ দিয়েও ওই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে পারেনি তারামণ্ডল কর্তৃপক্ষ। কিউরেটর জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে বেশ কয়েকটি গ্রহ কাছাকাছি এসেছিল। তাদের দেখার জন্য টেলিস্কোপ রাখা হয়েছিল। কিন্তু দিগন্তে বহুতল ও বড় বড় গাছ থাকায় ওই মহাজাগতিক ঘটনা চাক্ষুষ করা যায়নি সেবারও।
