সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI) থেকে অপসারিত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)। আইসিসি-তে তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর। সেই দেওয়াললিখনও স্পষ্ট। এরকম আবহে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পাশে এসে দাঁড়ালেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) উদ্দেশে মমতার সরাসরি বার্তা, ”সৌরভের সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়। আইসিসি নির্বাচনের জন্য সৌরভকে পাঠানো হোক।”
গত কয়েকদিন ধরে সৌরভকে নিয়ে জোর চর্চা দেশে। আগের সপ্তাহেই গোটা দেশ জেনে ফেলেছিল বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে ইনিংস শেষ সৌরভের। তাঁর পরিবর্তে রজার বিনিকে বেছে নেওয়া হয়েছে পরবর্তী বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হিসেবে। এই খবরের বিস্ফোরণে রীতিমতো কেঁপে যায় দেশ। বোর্ড থেকে বাদ যাওয়ার পরে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রথম বার মুখ খোলেন সৌরভ। সেখানেই জানিয়ে দেন, চিরকাল প্রশাসক হিসেবে কেউ কাজ চালিয়ে যেতে পারে না। আরও বড় মঞ্চে আগামিদিনে তাঁকে দেখা যাবে, এমন বার্তাও দেন মহারাজ। সৌরভের সেই মন্তব্য নিয়েও জোর চর্চা হয়। তবে কি তিনি ক্রিকেট প্রশাসনেই থাকবেন? এমনও প্রশ্নও ওঠে।
এর পরে চমক আরও বাকি ছিল। ইডেনে দাঁড়িয়ে সৌরভ স্বয়ং জানিয়ে দেন নিজের প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ। সিএবি নির্বাচনে সভাপতি পদে দাঁড়াবেন তিনি। আর আজ সপ্তাহের শুরুতেই কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মালবাজারে যাওয়ার আগে দমদম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে মমতা বললেন, ”সুপ্রিম কোর্টের রায় সৌরভের জন্যও ছিল, অমিত শাহের ছেলের জন্যও ছিল। সৌরভ নেই অথচ বিসিসিআইয়ে থেকে গেলেন অমিতবাবুর ছেলে। সে থাকুন, আমার কিছু আসে যায় না। কিন্তু আমার প্রশ্ন সৌরভকে বাদ দেওয়া হল কেন? আমি এটা জানতে চাই।” মমতার মুখে অমিত শাহর পুত্রের নাম শোনার পরে অনেকেই বলছেন, গোটা ঘটনায় নতুন করে রাজনৈতিক রং লেগে গেল।
[আরও পড়ুন: ‘বিশ্বকাপে খেলাতেই হবে শামিকে’, ম্যাচ জেতানো ওভারের পর দাবি বঙ্গ পেসারের কোচের]
মুখ্যমন্ত্রীর মতোই গোটা রাজ্য, দেশ জানতে চায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো এক ক্রিকেট আইকনকে কী কারণে বাদ পড়তে হল ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড থেকে। এর পিছনে কি রয়েছে কোনও রাজনৈতিক গন্ধ? যদিও বোর্ড থেকে বলা হচ্ছে, একই ব্যক্তি টানা দু’ বার বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে বসেননি কখনও। কিন্তু সেই থিওরিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না কেউ। অনেকেই মনে করেন, সৌরভের সরে যাওয়ার পিছনে রয়েছে গভীর রাজনৈতিক কারণ। আইসিসি-র নির্বাচনের জন্যও এখন সৌরভের নাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে না বোর্ডের অন্দরমহলে।
এই প্রেক্ষিতে মমতা বলছেন, ”সৌরভকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর একমাত্র ক্ষতিপূরণ হতে পারে সৌরভকে আইসিসি-তে পাঠানো। অতীতে জগমোহন ডালমিয়া, শরদ পাওয়ার আইসিসি-তে গিয়েছেন। ভারতবর্ষ থেকে দু-তিন জন আইসিসি-তে যাওয়ার জন্য এনটাইটেলড। সৌরভ আইসিসিতে যাওয়ার যোগ্য।”
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে মমতার আবেদন, ”প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একান্ত অনুরোধ আইসিসি নির্বাচনের জন্য সৌরভকে পাঠানো হোক। সৌরভ বঞ্চিত। ওকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সৌরভকে সবাই চেনেন। শুধু বাংলা নয়, গোটা বিশ্ব ওকে চেনে। সৌরভ জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। দেশের গর্ব। যাঁরাই ক্রিকেট খেলেছে, তাঁরাই সৌরভকে চেনেন। আমি গোটা ঘটনায় শক্ড। সরকারের কাছে অনুরোধ করব, সৌরভের সঙ্গে প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়। ও কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। ক্রিকেটের স্বার্থে, খেলাধুলার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক।”
মোক্ষম সময়ে দাদার হয়ে ব্যাট ধরলেন দিদি। সৌরভকে নিয়ে ঘটনাপ্রবাহ এবার কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই দেখার।