shono
Advertisement

ইতিহাস ও সৌন্দর্যের হাতছানি দেবে এই বর্ষাকালীন দুর্গবিলাস

বর্ষাকে মাথায় রেখেই মাণ্ডু সেজে উঠেছিল একের পর এক মহলে। সঙ্গত কারণেই বর্ষার জলের পর্দা আধুনিক জীবনকে ঢেকে আপনাকে এনে দেবে ইতিহাসযাপনের নিভৃতি। The post ইতিহাস ও সৌন্দর্যের হাতছানি দেবে এই বর্ষাকালীন দুর্গবিলাস appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:35 PM Jul 24, 2016Updated: 04:21 PM Feb 27, 2019

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মণ্ডপ দুর্গ। বিন্ধ্য পর্বতের শিখরে, অধুনা মালওয়া জেলায় যখন এই দুর্গ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল সগর্বে, তখন সে পেয়েছিল এই নাম।
মণ্ডপ তো বটেই! সুনীল আকাশ এই দুর্গের মাথায় রচনা করেছিল ঘন মেঘের মণ্ডপ। সবুজ গাছের ছায়া শীতল হাওয়ার মণ্ডপে মুড়ে দিয়েছিল দুর্গের আনাচ-কানাচ।
সেটা আনুমানিক ৬১২ বিক্রম সম্বৎ।

Advertisement


তার পরে যত দিন গিয়েছে, মণ্ডপ নামটি লোকমুখে ভাঙতে ভাঙতে রূপ নিয়েছে মাণ্ডবে। সেখান থেকে আরও ছোট নামে মাণ্ডু। নামের মতোই রাজনৈতিক ভাঙনের হাত ধরে ভারতীয় সুলতানদের বর্ষাকালীন দুর্গবিলাস।
মধ্য প্রদেশের ধর জেলাশহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরের এই মাণ্ডুর দিকে এক ঝলক তাকালে মেঘ আর জল ছাড়া অন্য কিছুর কথা তেমন করে হয়তো মাথায় আসবেও না। পাহাড়ের মাথায় এই দুর্গ সাক্ষাৎ মেঘদূত। জল আর নীলের যুগলবন্দিতে সে যুগের পর যুগ যেমন কাছে টেনেছে ইতিহাসখ্যাত প্রেমিক আর তাঁদের প্রেয়সীদের, তেমনই রচনা করেছে বিরহেরও পটভূমি।


স্বাভাবিক ভাবেই মাণ্ডু ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও নিজস্ব একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। সেটা মূলত ক্ষমতা বিস্তারের রাজনৈতিক গাথা। পারমার-বংশীয় হিন্দু রাজাদের হাতে নির্মাণ, তার পর আলাউদ্দিন খিলজির হাতে অধিগ্রহণ এবং এক সময় আকবরের চোখ পড়া! সেটুকু বাদ দিলে মাণ্ডু সব ভুলিয়ে দিয়ে এখনও বলে চলে দুজনের কথা। বাজ বাহাদুর আর তাঁর হিন্দু মহিষী রূপমতীর প্রণয়ের কথা।


মাণ্ডুর দখলদারি নিয়ে নানা সময়ে নানা শাসক নিজেদের মধ্যে বিবাদে মত্ত হলেও এখানকার শেষ সুলতান বাজ বাহাদুর যতটা পারেন, বিবাদ থেকে দূরেই ছিলেন। কেন না, তাঁর জীবনে ছিল দুই অমোঘ শান্তির দূত- একটি কবিতা, অন্যটি রানি রূপমতী। ইতিহাস বলে, বাজবাহাদুরের কবিতা গান হয়ে ফুটে উঠত রূপমতীর গলায়। রূপমতীর জন্যই আকবর দখল করতে চান মাণ্ডু। বাজবাহাদুর যুদ্ধে হেরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন, আত্মহত্যা করেন রূপমতী।
মাণ্ডু যদিও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকে বিন্ধ্য পাহাড়ের কোলে, নর্মদা নদীকে সাক্ষী রেখে।


সন্দেহ নেই, মাণ্ডু ঘুরে দেখতে চাইলে ইতিহাস কিছুটা জেনে নিতেই হবে! নইলে সে ভাবে স্পর্শ করা যাবে না এই দুর্গনগরীর অন্তস্থল। তবে, ইতিহাসকে একটু আলগা করে ছুঁলেও তেমন কোনও ক্ষতি নেই। কেন না, দুর্গনগরীতে পা রাখা মাত্র আপনি সরাসরি পৌঁছে যাবেন ইতিহাসের জগতেই।
যার শুরুটা হবে পাহাড়ি পথে বিশালাকার দুর্গ-দ্বারের সামনে এসে। মাণ্ডুতে প্রবেশের জন্য সব মিলিয়ে ১২টি তোরণ রয়েছে। প্রধান ফটকটির নাম দিল্লি দরওয়াজা। এর স্থাপত্য যেমন মুগ্ধ করবে, তেমনই মনে এনে দেবে অতীতযাপনের ইচ্ছা।


সেই অতীতযাপনের জন্যই দুর্গদ্বার উন্মুক্ত করে রেখেছে মাণ্ডু। সারা বছরের যে কোনও সময় এখানে আসতে পারেন, তবে সেরা সময় বর্ষা। কেন না, মূলত বর্ষাকে মাথায় রেখেই মাণ্ডু সেজে উঠেছিল একের পর এক মহলে। সঙ্গত কারণেই বর্ষার জলের পর্দা আধুনিক জীবনকে ঢেকে আপনাকে এনে দেবে ইতিহাসযাপনের নিভৃতি।


বর্ষার সঙ্গে সঙ্গত করেই মাণ্ডুতে সুলতান গিয়াসউদ্দিন খিলজি তৈরি করেছিলেন জাহাজ মহল। দুই দিকে দুই বিশাল কৃত্রিম জলাশয়- মুঞ্জ তালাও আর কাপুর তালাও। তার মাঝে ঠিক এক জাহাজের ভাস্কর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে জাহাজ মহল। মনে হবে, আপনি যেন দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক পাথরের জাহাজের বুকে।
তবে, জল আর নীল নিয়ে শুধু এই জাহাজ মহলেই মাণ্ডুর চমক শেষ নয়। দুর্গের মধ্যে রয়েছে রেবা কুণ্ড আর তার মাঝে জলমহল। এই জলমহলও বর্ষাযাপনের এক সুলতানি বিলাস।


বর্ষামঙ্গল থেকে সরে এলে মাণ্ডু আপনার কানে কানে বলবে প্রেমের মঙ্গলগাথাও। সেই মঙ্গলগান উদযাপনে পায়ে পায়ে ঘুরে দেখে নিন রূপমতী মহল আর বাজবাহাদুর মহল। মুখোমুখি দুই প্রাসাদ, ঠিক প্রেমিক-প্রেমিকার মতোই আজও একে অপরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।


অবশ্য, শুধুই বর্ষা আর প্রেম নয়। মাণ্ডুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার এক সময়ের শাসক হোসাং শাহ-র নামও। মাণ্ডুতে হোসাং শাহর সমাধি, তাঁর হাতে নির্মিত জামা মসজিদ মনে ভরে দেবে আধ্যাত্মিক আবিলতা। সে সব পেরিয়ে ফের ইতিহাসের আরেকটি অধ্যায়ে নিয়ে যাবে হিন্দোলা মহল। বালি পাথরের এই স্থাপত্য এক ঝলক দেখলেই মনে হবে তা যেন হাওয়ায় দুলছে! সেই জন্যই নাম হিন্দোলা!


সত্যি বলতে কী, এক দিনে মাণ্ডুর পুরোটা আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। তাই পারলে হাতে একটু সময় নিয়েই এখানে আসা উচিত হবে। নইলে অতৃপ্তি নিয়ে মাণ্ডুর বর্ষা ঘুরপাক খাবে বুকের ভিতরে।


কী ভাবে যাবেন: ট্রেন ধরে এসে নামুন ইনদৌরে। ইনদৌর থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দিন মাণ্ডুর দিকে।
কোথায় থাকবেন: মাণ্ডু তার ইতিহাস এবং সৌন্দর্যের জন্য বহু বছর ধরেই পর্যটকদের বিলাসভূমি। তাই খুব সস্তা থেকে দামি হোটেল, ধর্মশালা, লজ- কোনও কিছুরই অভাব নেই। সরাসরি পৌঁছিয়ে, দেখে-শুনে ইচ্ছে মতো ঘর বেছে নেওয়াই তাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

The post ইতিহাস ও সৌন্দর্যের হাতছানি দেবে এই বর্ষাকালীন দুর্গবিলাস appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement