সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বপ্ন ছিল আইএসএল-এ (ISL) কোচিং করানোর। সেই স্বপ্নের উপর ভর করেই শুরু হয়েছিল একটা লড়াই। চলতি বছর জানুয়ারি মাসে এসেছিল সুখবর। প্রথম বাঙালি হিসেবে এফসি প্রো লাইসেন্স (AFC Pro License Coach) পাশ করেছিলেন কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী (Shankarlal Chakraborty)। এহেন প্রাক্তন ফুটবলারের মুকুটে যোগ হল নতুন পালক। এবারের আইএসএল-এ পাঞ্জাব এফসি (Punjab FC) দলের সহকারী কোচ হলেন এক সময় মোহনবাগানে (Mohun Bagan) কোচিং করিয়ে যাওয়া শঙ্কর। ২১ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রথমবার আইএসএল খেলতে নামা এই দল সেই ঘোষণা করে দিল। শনিবার অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর গতবারের চ্যাম্পিয়ন সবুজ-মেরুনের বিরুদ্ধে আইএসএল অভিযান শুরু করবে শঙ্করের পাঞ্জাব।
স্যাভিও মেডেরা, ডেরেক পেরেরা, খালিদ জামিল, স্ট্যানলি রোজারিও-একের পর এক প্রো লাইসেন্স থাকা ভারতীয় কোচেদের নামের পাশে বাংলা থেকে শুধুই শূন্যতা। অথচ এই বাংলা থেকে পিকে, অমল দত্তর মতো প্রথিতযশা কোচরা এক সময় ভারতীয় ফুটবল শাসন করেছিলেন। তখন অবশ্য পরস্থিতি অন্যরকম ছিল। কোচিং করার জন্য দরকার ছিল না ফিফার নির্দেশিত কোনও লাইসেন্স। কেউ কেউ নিজের উদ্যোগে বিদেশ গিয়ে কোচিং লাইসেন্স করে এলেও বেশির ভাগ কোচ করতেন পাতিয়ালা থেকে এনআইএস কোচিং লাইসেন্স। সেখান থেকে এখন বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। বিশেষ করে যেদিন থেকে এএফসি-র ক্লাব লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেমন আই লিগের কোচ হতে হলে ‘এ’ লাইসেন্স থাকতেই হবে। আইএসএলের কোচিং করতে গেলে ‘প্রো’ লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কোচিং তো পরের ব্যাপার। বাংলা থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ প্রো লাইসেন্সিং ডিগ্রিটাই নিতে পারেননি। ফলে আইএসএলে কোনও বাঙালি কোচের কোচিংয়ের প্রশ্নই ওঠেনি।
[আরও পড়ুন: ‘দেশের হয়ে গোল করার অনুভূতি অন্যরকমের’, বাংলাদেশকে হারিয়ে বলছেন সুনীল]
প্রো লাইসেন্স সম্পূর্ণ করাটাও খুব একটা সহজ কাজ নয়। ৬টা মডিউলে কোর্স শেষ করতে হয়। তার উপর খরচের ব্যাপারটাও আছে। ফলে অনেকে প্রো লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া শুরু করলেও শেষের দিকে যেতে পারে না। কিন্তু শঙ্করলাল একটু অন্যরকম চরিত্র। যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক, শেষ পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করবেন। সে চিমার সঙ্গে সংঘর্ষে পা ভেঙে যাওয়ার পর ফুটবলার জীবন যতই অনিশ্চিত হয়ে উঠুক না কেন। অথবা মোহনবাগানের কোচের চাকরি যাওয়ার পরেও লড়াই ছেড়ে না দেওয়া। তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন, যেভাবে অতীতেও ফিরে এসেছেন, এবারও ফিরবেন সেভাবেই। কোচিং যদি করতেই হয়, ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরের কোচিং করানোর যোগ্য হয়ে উঠবেন। আর সেই পরীক্ষা পাশ করেই এবার আইএসএল জগতে পা রাখলেন তিনি।
শঙ্কর তখন কোচিং করছেন মহামেডানে। খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছেন, প্রো লাইসেন্স কোর্সের ব্যাপারে। জানেন, এরজন্য বিদেশে যেতে হবে। কারণ, সেই সময় ভারতে প্রো লাইসেন্সের কোর্স হচ্ছে না। সেই সময় বাংলাদেশের অধিনায়তক জামাল ভুঁইয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন, পদ্মাপাড়ে গিয়ে প্রো লাইসেন্সের অন্তত চারটে মডিউল করা সম্ভব হবে। বাকি মডিউল করতে হবে নরওয়ে আর উজবেকিস্তানে। কিন্তু খরচ? বংলাদেশ, নরওয়ে, উজবেকিস্তানে গিয়ে ৬টা মডিউল করা খুব একটা ছোট খাট ব্যাপার নয়। একজন বাঙালি কোচ প্রো লাইসেন্স করতে চান জেনে বেশ কিছু শুভান্যুধায়ী এই সময় এগিয়ে আসেন শঙ্করের পাশে। ২০২১ সালে প্রো লাইসেন্সের প্রথম মডিউল শুরু করেন প্রাক্তন এই মোহনবাগান কোচ। তারপর ধীরে ধীরে মোট ৬টি মডিউলেই পাস করে প্রো লাইসেন্স পরীক্ষায় প্রথম বাঙালি কোচ হিসেবে সসম্মানে কৃতকার্য হয়েছেন শঙ্করলাল। আর এবার নতুন ইনিংস শুরু করলেন।
[আরও পড়ুন: এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়, নক-আউটের আশা জিইয়ে রাখলেন সুনীলরা]
পাঞ্জাব এফসি-তে যোগ দেওয়ার আগে শঙ্কর দুই অভিজ্ঞ কোচ সুভাষ ভৌমিক ও সঞ্জয় সেনের সঙ্গে সবুজ-মেরুনে কাজ করেছেন। পরবর্তী সময় ভবানীপুর ও সাদা-কালো শিবিরের দায়িত্ব ছিল তাঁর হাতেই। এরপর আই লিগের ক্লাব সুদেভা এফসি এবং বেঙ্গালুরু ইউনাইটেডকে কোচিং করিয়েছেন। অতীতে ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে শঙ্কর এগিয়ে গিয়েছিলেন। এবার আইএসএল-এ সেভাবেই পথ চলা শুরু করেছেন বাঙালি হিসেবে প্রথম প্রো লাইসেন্স কোচ।