আকাশ মিশ্র: ব্রেনওয়াশ! পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’কে যদি সবচেয়ে ছোট্ট কথায় বর্ণনা করতে হয়, তাহলে ব্রেনওয়াশের চেয়ে ভাল শব্দ আর নেই। কারণ, ১৩৮ মিনিটের এই ছবিতে পর্দার প্রোটাগনিস্টও ব্রেনওয়াশের কথা বলে চলে, অন্যদিকে সেই ব্রেনওয়াশের গল্প দেখাতে গিয়ে পরিচালক সুদীপ্তও দর্শকদের ব্রেনওয়াশেরই চেষ্টা করে গিয়েছেন ! ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ঠিক এরকমই। যা একের পর এক তথ্য সামনে তুলে ধরে। কিন্তু সেই তথ্যগুলো হোয়াটসঅ্যাপে ঘোরাফেরা করা ইসলাম বা মুসলিম বিদ্বেষী মেসেজ কিংবা ইসলাম বিরোধী ভাইরাল ভিডিও বলেই মনে হয়! ছবির শুরুতে অবশ্য সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ছবিটি তৈরি বলে দাবি করা হয়েছে।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির ট্রেলার প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই বিতর্ক। এমনকী, এই ছবিকে নিষিদ্ধ করার ডাকও দিয়েছিলেন দেশের বামশাসিত রাজ্য কেরলের বহু বামপন্থী নেতারা। একই সুর চড়িয়েছিল কংগ্রেসও। অন্যদিকে ছবিকে প্রথম থেকে পূর্ণ সমর্থন জুগিয়েছে দেশের গেরুয়া শিবির। সবই আসলে হিন্দু ও মুসলিম আবেগ। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলসে’ কিংবা ছবি বয়কট গ্যাংয়ের আবির্ভাবেরপর তা আরও তীব্রতা পেয়েছে। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র সঙ্গে এসব বিষয়ও যেন যুক্ত হয়ে পড়ে। যা থেকে তৈরি হয় বিতর্ক। আর যা বিতর্কিত, তার বাজারে দরও বেশি। একথা ফের প্রমাণ করে দেয় এই ছবি।
[আরও পড়ুন: জমজমাট রিসেপশনে নজর কাড়লেন সুদীপ্তা ও সৌম্য, কেমন সেজেছিলেন জুটি?]
২০২২ সালে পরিচালক সুদীপ্ত সেন এই একই বিষয়ের ওপর একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। যার নাম ছিল ‘ইন দ্য নেম অফ লাভ’। পরিচালক সেই তথ্যচিত্রকেই বড় আকার দিলেন ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবিতে। এই ছবিতে পরিচালক সুদীপ্ত সেন যেন দেখালেন হিন্দু ও মুসলিমদের প্রত্যেক কথোপকথনের মধ্যেই লুকিয়ে মুসলিমদের স্বার্থ! আর তা দেখাতে গিয়েই সুদীপ্ত টেনে নিয়ে আসলেন মৃত্যুর পর নরক যন্ত্রণা, পাপ-পুণ্যের হিসাব ও ইসলামকে। যেখানে আশিফা নামের এক মহিলা চরিত্র ইভ টিজিং থেকে বাঁচতে হিজাবের কথাও বলে, প্রত্যেক কথাতেই হিন্দু দেবদেবীদের প্রসঙ্গ তুলে ইসলামের তুলনা টানে। ছবি জুড়ে কেমন একটা ইসলামোফোবিয়া। কেমন যেন আতঙ্ক! এসবই খুব মোটা দাগের আকারে সাজিয়েছেন সুদীপ্ত। ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ ছবির মূল উপপাদ্য বিষয় কেরালা থেকে প্রায় ৩২ হাজার মহিলাকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে আইএস-এ যোগদান করানো। এবং এর নেপথ্যে যে ষড়যন্ত্র চলে তাকেই সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন পরিচালক।
সোজা কথায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ একেবারেই প্রোপাগান্ডামূলক ছবি। যেখানে তথ্যের সমাহার অবশ্যই রয়েছে, তবে তা খুবই একপেশে। এমনকী, তা বড্ড নড়বড়েও। অভিনয়ের দিক থেকেও সবাই বেশ খারাপ। প্রথম থেকেই চরিত্রগুলোর চোখে মুখে একটা উৎকণ্ঠা। যেন ক্লাইম্যাক্স আগেভাগে জানা আছে তাদের। আদা শর্মা থেকে প্রণব মিশ্র কারও অভিনয়ই জোরদার নয়। কেরলবাসী বোঝানোর জন্য সংলাপ বলার কায়দায় সেখানকার উচ্চারণ ব্যবহার করা হয়েছে। যা বেশিরভাগ সময়ই আরোপিত মনে হয়। সব মিলিয়ে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ খুবই অযত্নে বানানো এক ছবি। চিত্রনাট্য থেকে অভিনয় কোনওদিকেই মুন্সিয়ানা দেখাতে পারে না এই ছবি। বরং বামশাসিত রাজ্য কেরলকে বিপজ্জনক বলাই যেন এই ছবির মূল উদ্দেশ্য। তাই বিতর্কে এই ছবি এগিয়ে থাকলেও, ভাল সিনেমার মাপকাঠিতে একে ফেলাই যায় না। নিতান্তই মাঝারি মানের ছবি হয়ে দাঁড়ায় ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। যা কেবল বিরক্তির উদ্রেকই করে।