সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দেবদেবীর পুজো নিয়ে বহু লোকগাঁথা ছড়িয়ে রয়েছেন। বছরের পর বছর তা মেনে চলেছেন সকলে। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কোলসরা গ্রামের সিদ্ধেশ্বরী কালীর (Kali) আরাধনা ঘিরেও তেমনই নানামত, নানা রীতি প্রচলিত রয়েছে। রয়েছে ইতিহাসও। যা মেনে প্রতিবারের মতো এবার গ্রামের মানুষ মেতে উঠবেন দেবীর আরাধনায়।
পূর্ব বর্ধমানের (Purba Bardhaman) জামালপুরের ঘোষাল পরিবারের হাত ধরে ওই পুজোর শুরু। তবে এখন তা কার্যত সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। গ্রামবাসীদের কথায়, দেবী খুব জাগ্রত। তাই গ্রামে আর কোনও কালীপুজো হয় না। এমনকী গ্রামের কেউ বাড়িতে কালী ঠাকুরের ছবি বা প্রতিমাও রাখেন না। কারও বাড়িতে কালীর ছবি দেওয়া কোনও ক্যালেন্ডারও রাখা হয় না। জানা গিয়েছে, এই সিদ্ধেশ্বরী কালী তৈরি হয় একটি ত্রিশূলকে বেষ্টন করে। এখানকার প্রতিমার বিসর্জনেও রয়েছে বিশেষ রীতি। দেবীকে মন্দির থেকে অখণ্ডিত অবস্থায় বের করা যায় না। ৫ জন পুরোহিত দেবীকে খণ্ড খণ্ড করে ঝুড়িতে ভরে মন্দির থেকে বাইরে আনেন। তারপর হয় দেবীর বিসর্জন।
[আরও পড়ুন: বিক্ষোভকারী সাফাইকর্মীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ পুলিশের, পরিস্থিতি ঘিরে উত্তপ্ত মালদহ]
এই পুজোর প্রচলনের পিছনে রয়েছে ইতিহাস। ঘোষাল পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য পেশায় শিক্ষক সমীরবাবু জানান, তাঁদের উত্তর পুরুষ দিগম্বর ঘোষাল শেরশাহের খুব কাছের লোক ছিলেন। বর্তমানে যেটা জিটি রোড সেই রাস্তার নির্মাণের সময় শেরশাহ দিগম্বর ঘোষালকে কাজ দেখাশোনা ও রাজস্ব আদায়ের কাজে পাঠিয়েছিলেন। দিগম্বর ঘোষাল প্রায়ই বর্ধমানের দিকে আসতেন। সেই সময় জামালপুরের কোলসরায় কংসাবতী নদীর কাছে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন। সালটা ছিল ১৫৪০। সেই সময় দিগম্বর ঘোষাল একদিন স্বপ্নাদেশ পান দেবীকে প্রতিষ্ঠা করে পুজো করার। শেরশাহকে তিনি জানান পুরো ঘটনা। শেরশাহ মন্দির তৈরি ও দেবীর আরাধনার জন্য ৫০০ টাকা দান করেছিলেন বলে জানান সমীরবাবু। সেই থেকেই শুরু পুজো। এই সংক্রান্ত দলিলও তাঁদের কাছে ছিল বলে জানান সমীর ঘোষাল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেটি চুরি হয়ে যায়। সেই শেরশাহের আমল থেকে আজও নিষ্ঠার সঙ্গে জামালপুরে পূজিতা হন সিদ্ধেশ্বরী কালী।