shono
Advertisement

মধ্যরাতে ছাত্রের বাড়িতে কড়া নাড়েন, ‘খেপা মাস্টার’-কে চেনেন?

শিক্ষক দিবসে প্রিয় গৃহশিক্ষকের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কুলটিবাসী। The post মধ্যরাতে ছাত্রের বাড়িতে কড়া নাড়েন, ‘খেপা মাস্টার’-কে চেনেন? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:33 PM Sep 05, 2018Updated: 03:33 PM Sep 05, 2018

চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: রাতবিরেতে ঘুম ভাঙিয়ে ক্যালকুলাসের সমাধান। কিম্বা রসায়নের জটিল তত্ত্বের আলোচনা। সবেতেই তিনি। তাই ৫ সেপ্টেম্বর এলে ঝাঁকরা চুলের মাস্টারমশাইয়ের পকেট ভরে ওঠে ভালবাসায়। পড়াতে আসার তথাকথিত উপদ্রব সহ্য করেও আসানসোলের প্রিয় মানুষ বিশ্বনাথ দাস। তবে এক ডাকে তাঁকে চিনতে চাইলে ‘খেপা মাস্টারে-র খোঁজ করুন সামনে হাজির হয়ে যাবে সেই প্রিয় মুখ। আসানসোলের কুলটি অঞ্চলের এমন একজন বাসিন্দা নেই যে ‘খেপা মাস্টার’কে চেনেন না।

Advertisement

চলুন তাঁর একটা আদলের বর্ণনা দিয়ে রাখি। বছর পঞ্চাশের মাস্টারমশাইয়ের মাথায় ঝাঁকরা চুল, পরনে আধময়লা ফতুয়া যার একটি বোতামও আর অবশিষ্ট নেই। কখনও বা মাথায় একসঙ্গে তিন চারটে টুপি। কখনও হাতে বইখাতা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। কখনও বা ধূপকাঠির এক গুচ্ছ প্যাকেট থাকে হাতের মুঠিতে। নির্দিষ্ট কোনও ঠিকানা নেই তাঁর। তবে এলাকার প্রিয় পরিচিত মানুষটির কখনও অন্ন বস্ত্র আশ্রয়ের অভাব ঘটেনি। এলাকাবাসী জানেন এই ঠিকানাবিহীন মানুষটি বিদ্যের জাহাজ। বিজ্ঞান ও অঙ্কের কোনও জটিল ধাঁধার সমাধানে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। এহেন জ্ঞানী মানুষটির মাথা সবসময় ঠান্ডা থাকে না। কখন যে কী করে বসেন তাও কিউ জানে না। তাই তো আসল নাম হারিয়ে তিনি এখন খ্যাপা মাস্টার

সকালে সময় দিয়ে ভবঘুরে মাস্টারমশাই ছাত্রের বাড়িতে পৌঁচে যান মধ্যরাতে। সন্ধ্যার টিউশনে অঙ্কের সমাধান না মিললে ভোর চারটেয় ছাত্রীর বাড়িতে কড়া নাড়েন ‘খেপা মাস্টার’। তখনই মেধাবী ছাত্রীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে অঙ্কের সমাধান তাঁকে বোঝাতেই হবে। নাহলে স্বস্তি নেই। এহেন উপদ্রব সত্ত্বেও স্থানীয়রা তাঁকে শিক্ষকের সম্মানই দেন।  তাই শিক্ষক দিবসে ভবঘুরে মানুষটি খালি হাতে বাড়ি ফেরেন না। কেউ বা মুঠিতে গুঁজে দেয় কলম, কেউ বা অন্য কোনও উপহার। তবে হাতে যাই আসুক কোনও কিছুতে তাঁর বিকার নেই। সবসময় যেন হিসেব করে চলেছেন। নিজের অতীত নিয়েও কখনও মুখ খোলেন না মানুষটি।

[পাহাড়ের উন্নয়নে সমঝোতা নয়, কড়া হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর]

জানা গিয়েছে, খেপা মাস্টারে-র বাড়ি বীরভূম জেলায় নূতন গ্রামে। সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি বিএসসি ফিজিক্স অনার্সে  প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। অভাব অনটনের মাঝে ইচ্ছে থাকলেও পড়াশোনাটা সম্পূর্ণ হয়নি। যদিও হিংসে করার মত রেজাল্ট রয়েছে মাধ্যমিক,  উচ্চমাধ্যমিকে। বোর্ডের দুই পরীক্ষাতেই প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলেন এই ‘খেপা মাস্টার’। গ্রামের পাশে বসোয়া-বিষ্ণুপুর স্কুলের পাট চুকিয়ে বিদ্যাসগর কলেজ। তারপর আর কিছু হয়নি। ভাগ্যের ফেরে ঘুরতে ঘুরতে বিশ্বনাথ একদিন এসে পড়েন আসানসোলে। ৮০ সাল নাগাদ গৃহশিক্ষকতা দিয়েই শুরু হয় শিল্পাঞ্চলের সফর। টু-পাইস রোজগার নিয়ে একা মানুষটির দিব্য দিন কাটছিল। কিন্তু বাদ সাধে মাথার ব্যামো। মাঝে মাঝেই অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করেন। দু’তিনদিন বিছানায় পড়ে থাকার পর আবার স্বাভাবিক হন। অসুস্থতার কারণে গৃহশিক্ষকতায় অনিয়মিত হয়ে পড়েন। তাই পেটের টানে কখনও ডিম বিক্রি করেন কখনও স্থানীয় সংবাদপত্র। টিউশনের টাকা দিয়ে ধূপ, সাবান কিনে কখনও কখনও ফেরি করেন। পেট ঠান্ডা হলে দরাজ গলায় গেয়ে ওঠেন রবিঠাকুরে গান। কখনও নিজের মনেই আউড়ে যান কবিতা। তবে মাঝেমাঝেই বেপাত্তা হয়ে যান তিনি।কোথায় যে চলে যান কেউ জানে না। কিছুদিন পর ফের ফিরে আসেন। আপাতত কুলটির মিঠানি গ্রামে জয়দেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেই তাঁর ঠাঁই মিলেছে। গত ১৫ বছর বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির এককোণে নিজের আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন। তাঁকে খাবার দাবারও দেওয়া হয়। কখনও বাজড়ি লাগোয়া স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নাও নিয়ে আসেন। এসবে ফাঁকে চলে টিউশনি।

পড়ুয়াদের মতে ‘খেপা মাস্টার’ দারুণ পড়ান। তাপ-গতি থেকে আলোক-বিজ্ঞান বা পারমাণবিক থেকে নিউক্লিয়াস চর্চা। কিম্বা পদার্থ বিজ্ঞান সবটাই তাঁর কাছে জলভাত। তবে প্রায়ই উদাস হয়ে যান খেপা মাস্টার। মহাকাশের কৃষ্ণগহ্বরের প্রসঙ্গ নিয়ে পড়াতে গিয়ে মুখে কুলুপ আঁটলে আর কথা বলানো যাবে না। পড়ানোর গুনে ছেলেদের তাঁর কাছেই পড়তে পাঠান বাবা-মায়েরা। তবে তাবলে আতঙ্ক কাটে না পড়ুয়াদের। কখন মাঝরাতে অঙ্কের খাতা নিয়ে সদর দরজায় কড়া নাড়বেন ‘খেপা মাস্টার’।

[ভাতের থালায় ফোঁটা ফোঁটা রক্ত, ময়ূরেশ্বরে যুবক খুনে রহস্য জটিল]

The post মধ্যরাতে ছাত্রের বাড়িতে কড়া নাড়েন, ‘খেপা মাস্টার’-কে চেনেন? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement