উর্মি খাসনবিশ: ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বলাই’ গল্পে পড়েছি, মানুষের মধ্যেই নাকি ঈশ্বর বাঘ এবং গরুকে এক খোঁয়াড়ে পুরে দিয়েছেন৷ যদিও লেখক সেই সময় জাত, সমাজ, ধর্ম ও বৈষম্য সম্পর্কে তেমন কোনও মন্তব্য করেননি৷ তাই ভাবনার জগতে কেবল মানুষের মধ্যেই বাঘ এবং গরুরা এক ঘাটের জল খেয়েছে ভগবানের অঙ্গুলিহেলনে৷ কিন্তু বৃহত্তর দুনিয়ায় যেখানে যাবতীয় বৈষম্য বর্তমান সেখানে সমাজের মধ্যেই বাঘ ও গরুর প্রতীকদের আলাদা করে চিনে নেওয়া যায়৷ এমনই এক আশ্চর্য খাদ্য-খাদক সমীকরণকে সঙ্গে করেই সমাজ এগিয়ে চলছে দিনের পর দিন৷ আর্থিক বিচারে বলাই বাহুল্য বাঘ বলতে বুঝি ধনী এবং গরু বলতে বুঝি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পরা মানুষদের৷ কিন্তু সেই প্রভাবশালী খাদক বাঘ এবং প্রভাব প্রতিপত্তিহীন গরুদেরও এক খোঁয়াড়ে পুরে দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি৷ কে পুরে দিয়েছেন, কেন পুরে দিয়েছেন সেই বিষয়ে এই মুহূর্তে বেশি কথা বলার প্রয়োজন নেই৷ তিনি ঈশ্বর না কাফের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও এখনও আসেনি৷ শুধু এটুকু বলা যেতে পারে, কেবল টাকার আকালকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ যেন এক সূত্রে বাঁধা পড়ে গিয়েছে৷ টাকাকে কেন্দ্র করেই সব যেন মিলেমিশে হয়ে গিয়েছে একাকার৷
গত ৮ নভেম্বর কালো টাকার রমরমা রুখতে দেশের অভ্যন্তরেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ এক রাতের মধ্যেই বাতিল হয়ে গিয়েছিল দেশের ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট৷ আর তাতেই যেন যাবতীয় বিভেদ চুরমার হয়ে সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল৷ সকলে যেন এক যাত্রারই যাত্রী হয়ে উঠলেন নিমেষে৷ একদিকে যখন টাকার কুমিররা কালো টাকা সরানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন হাতখরচের টাকা পেতেই হয়ে গিয়েছে নাজেহাল৷ এই অবস্থায় ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ হবে কি না, কালো টাকার কারবার বন্ধ করা যাবে কি না সেই প্রশ্ন নিয়ে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই৷ কেবল টাকাকে কেন্দ্র করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, প্রতিপত্তি নির্বিশেষে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে মানুষ (সেই সমস্যা যেমনই হোক না কেন) তা দেখেই রবি ঠাকুরের বলে যাওয়া কথাই মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার৷ মনে হচ্ছে টাকাই যেন সে, যে ‘বাঘ গরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে৷’
The post বাঘ গরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে… appeared first on Sangbad Pratidin.