shono
Advertisement

আবেশের মৃত্যুতে গোয়েন্দাদের নজরে সাহিত্যিক অমিত চৌধুরিও

যাঁর মেয়ের জন্মদিনের মদের পার্টিতে চূড়ান্ত মদ্যপান করে আবেশ-সহ ১৭ জন বন্ধু-বান্ধবী নাচানাচি করছিল, তিনি কী করে এত নিশ্চিন্তে নিজের ঘরে বসে থাকতে পারেন? The post আবেশের মৃত্যুতে গোয়েন্দাদের নজরে সাহিত্যিক অমিত চৌধুরিও appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:53 PM Jul 25, 2016Updated: 11:25 AM Jul 25, 2016

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বালিগঞ্জের অভিজাত এলাকা সানি পার্ক অ্যাপার্টমেন্টে দশম শ্রেণির ছাত্র আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যু রহস্য ক্রমশই আরও জটিল হচ্ছে৷ তদন্তকারীদের নজরে এখন লেখক অমিত চৌধুরিও৷ ঘটনার দিন সন্ধ্যাবেলা তাঁর বাড়ির বেসমেন্টে উদ্দাম নাচাগানা-মদ্যপান চলছে, আর তিনি কিছুই টের পাননি কেন?

Advertisement

আবাসনের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শনিবারই প্রথম নয়, ওই ফ্ল্যাটে অমিয়বাবুর মেয়ে অরুণা চৌধুরির বন্ধুবান্ধবেরা মাঝেমধ্যেই মদ্যপান ও হইহুল্লোড় করত। সেই মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে কয়েক জন বন্ধুর দেওয়া সারপ্রাইজ পার্টিতে এসেই প্রাণ হারিয়েছে আবেশ। অমিত চৌধুরি অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী চা ছাড়া আর কোনও পানীয়ের প্রতিই আসক্ত নন। তিনি জানিয়েছেন, মেয়ের এক বন্ধু আহত হয়েছে খবর পেয়ে বহুতলের বেসমেন্টে নেমে আসেন তিনি৷ ট্যাক্সি না পেয়ে নিজের গাড়িতে জখম আবেশকে নিয়ে হাসপাতালে যান৷ যদিও এই তত্ত্ব এখনই মানতে নারাজ গোয়েন্দারা৷ তাঁদের মনে প্রশ্ন, যাঁর মেয়ের জন্মদিনের মদের পার্টিতে চূড়ান্ত মদ্যপান করে আবেশ-সহ ১৭ জন বন্ধু-বান্ধবী নাচানাচি করছিল, তিনি কী করে এত নিশ্চিন্তে নিজের ঘরে বসে থাকতে পারেন?

আবেশ দাশগুপ্তর মৃত্যুরহস্যে জড়িয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী প্রেরণা রায়ের নামও৷ তবে কি আবেশ-প্রেরণা-ঋষভের ত্রিকোণ প্রেমের টানাপোড়েনের জেরেই জন্মদিনের পার্টিতে এই খুন? তদন্ত করে দেখছেন গোয়েন্দা কর্তারা৷ তাঁরা জানিয়েছেন, উত্তর জানতে ঋষভকে ফের জেরা করা হবে৷ আজ ফের জেরা করে হবে ওই পার্টিতে উপস্থিতি সবাইকে৷ রবিবার যাবতীয় রহস্যের জল্পনা আরও উসকে দিয়ে প্রেরণা নিজেই জানান, “আবেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ককে আমি শ্রদ্ধা করি৷ শনিবার সন্ধ্যায় সানি পার্কের পার্টির বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না৷ তাই ওই পার্টিতে আমি যাইনি৷ তবে দুর্ঘটনায় আবেশের মৃত্যু হয়েছে, এই তত্ত্বে আমি বিশ্বাস করি না৷ আমি চাই, সঠিক পথে তদন্ত হোক৷ আসল সত্য উঠে আসুক৷ দোষীরা ধরা পড়ুক৷ প্রয়োজন হলে পুলিশ আমাকেও ডাকুক৷ আমি অবশ্যই পুলিশের কাছে যাব৷”

আবেশ-মৃত্যুরহস্য আরও বাড়িয়ে প্রেরণা জানিয়েছেন, “অরুণা চৌধুরির সঙ্গে আবেশের এমন কোনও ঘনিষ্ঠতা ছিল না যে, ওর জন্মদিনের পার্টিতে যাবে আবেশ৷ ঋষভই এই পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিল আবেশকে৷ আমি এই জন্মদিনের পার্টির কথা জানতাম না৷ শুধু জানতাম, শনিবার সন্ধ্যায় হায়াতে আবেশ ও ঋষভদের একটি পার্টি আছে৷ সেই পার্টিতে আমারও যাওয়ার কথা ছিল৷” রবিবার ছিল প্রেরণার মায়ের জন্মদিন৷ সেই কারণে শনিবার সারাদিন মায়ের সঙ্গেই ছিলেন প্রেরণা৷ বিকেলে মাকে নিয়ে তিনি একটি মলে যান৷ এরপর দু’জনে সিনেমাও দেখেন৷ বাড়ি ফিরে এসে হায়াতের পার্টিতে যাওয়ার  জন্য ঋষভ ও আবেশকে ফোন করেন প্রেরণা৷ তিনি জানান, “বারবার ফোন করা সত্ত্বেও তাদের কাউকেই পাওয়া যায়নি৷ তাই ভেবেছিলাম, হায়াতের পার্টি বাতিল হয়েছে৷ তাই মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই ছিলাম আমি৷ কিন্তু রাতে আবেশেরই এক বন্ধু আমাকে ফোন করে হাসপাতালে চলে আসতে বলে৷ আমি সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে এসে ঘটনা জানতে পারি৷”

আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত এবং দিদিমা কৃষ্ণা পাল বালিগঞ্জ থানার ওসি চন্দন রায়চৌধুরিকে চিঠি লিখে জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি এবং ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমেই আবেশের ময়নাতদন্ত হোক৷ তাঁদের সেই দাবি মেনে এদিন ময়নতদন্তের যাবতীয় ব্যবস্থা করেন পুলিশ কর্তারা৷  কলকাতা পুলিশ মর্গে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি এবং ভিডিওগ্রাফির মাধ্যমে শুরু হয় ময়নাতদন্ত৷ পরে সেই তদন্তের রিপোর্টে পুলিশ জানতে পেরেছে, আবেশের বুকে ও পেটে কোনও ক্ষতের দাগ নেই৷ শুধুমাত্র ক্ষত রয়েছে বগলের নিচে এবং হাতের কব্জিতে৷ তবে কি সানি পার্কের বহুতলের বেসমেন্টে জন্মদিনের মদের পার্টিতে চূড়ান্ত মদ্যপান করে আবেশ-সহ ১৭ জন বন্ধু-বান্ধবী নাচানাচি করছিল? ঘটনার পর আবেশের ১৬ জন বন্ধু-বান্ধবীকে বালিগঞ্জ থানায় ডেকে তাদের বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ৷ সেই বয়ানেও আবেশের বন্ধুরা জানিয়েছে, নাচতে নাচতে পড়ে গিয়েই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে আবেশের৷ তবু মৃত্যুর আসল কারণ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না পুলিশ কর্তারা৷ মৃত্যুর আসল কারণ জানতে অটোপসি পরীক্ষার রিপোর্টের উপর বেশি নির্ভর করছেন তাঁরা৷ তবে প্রাথমিক রিপোর্টে এই মৃত্যুর পিছনে দুর্ঘটনাজনিত কারণ রয়েছে বলেই অনুমান পুলিশের৷

এখন প্রশ্ন হল, দুর্ঘটনাতেই যদি আবেশের মৃত্যু হয় তাহলে রক্তাক্ত অবস্থায় আবেশকে ফেলে রেখে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজন বন্ধুকে নিয়ে ঋষভ নন্দী পালিয়ে গেল কেন? আবেশ মৃত্যুরহস্যে ঋষভের ভূমিকা নিয়েও জোরালো প্রশ্ন উঠেছে৷ নীল মুখোপাধ্যায় নামে আবেশের আরও এক বন্ধু অন্য কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আবেশকে কোলে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ ঋষভের বাবা ফার্নিচার ব্যবসায়ী ডাবলু নন্দীর বয়ানেও সম্তুষ্ট নন গোয়েন্দারা৷ ঋষভের বাবা ফার্নিচার ব্যবসায়ী ডাবলু নন্দী প্রেরণার মাকে ফোন করে বলেন, “আবেশের সঙ্গে আপনার মেয়েকে মিশতে দেবেন না৷ আবেশ খুব বাজে ছেলে৷ একাধিক গার্লফ্রেন্ড আছে তার৷” অন্যদিকে আবেশের মা রিমঝিম দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, “ঋষভের বাবা আমার কাছেও এসেছিলেন৷ বলেছিলেন, প্রেরণা ভীষণ বাজে মেয়ে৷ প্রচুর ছেলের সঙ্গে ও মেলামেশা করে৷ ওর সঙ্গে আপনার ছেলেকে একদম মিশতে দেবেন না৷” প্রেরণা ও আবেশের মাকে ঋষভের বাবা ডাবলু নন্দী আগ বাড়িয়ে এসব কথা বলতে গেলেন কেন? তবে কি তিনি আবেশ-প্রেরণার মেলামেশা পছন্দ করছিলেন না? তদন্তে এই দিকটিও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা৷

The post আবেশের মৃত্যুতে গোয়েন্দাদের নজরে সাহিত্যিক অমিত চৌধুরিও appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement