Advertisement
৬০ ঘণ্টার লড়াই ব্যর্থ করে চিরঘুমে ওমায়রা, ইতিহাসে অমলিন সবচেয়ে মর্মান্তিক ছবিটি
কে এই ওমায়রা?
চার দশক আগে বিশ্বকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছিল ১৩ বছরের ওমায়রা স্যাঞ্চেজ। দিয়ে গিয়েছিল ইতিহাসের সবথেকে মর্মান্তিক ছবিটি।
১৯৮৫ সালের ১৩ নভেম্বর। জেগে উঠেছিল কলম্বিয়ার 'ঘুমন্ত সিংহ' নেভাডো ডেল রুইজ আগ্নেয়গিরি। সতর্কতা আগেই ছিল। তাতে অবশ্য পাত্তা দেয়নি সে দেশের সরকার।
ঘড়িতে তখন রাত ৯টা ৯ মিনিট। বিকট আওয়াজে কেঁপে উঠেছিল আশেপাশের প্রায় একশো কিলোমিটার এলাকা। ভয়াবহ বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছিল আর্মেরো শহর থেকে মাত্র ৪৮ কিলোমিটার দূরে থাকা নেভাডো ডেল রুইজের বরফে ঢাকা চূড়া।
লাভার উত্তাপে গলে গিয়েছিল আগ্নেয়গিরির চূড়ার বরফ ও পাদদেশে থাকা হিমবাহ। বিশাল জলরাশির ঢেউ ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার গতিতেগুয়ালি নদীর খাত ধরে ছুটে চলেছিল। সঙ্গে ছিল হাজার হাজার বোল্ডার, পাথর, গাছ ও কাদা। প্রথম ও সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আক্রমণের সাক্ষী থেকেছিল আর্মেরো শহর।
ভেঙে পড়া ছাদের বিম ও লোহার কাঠামোয় আটকে গিয়েছিল ওমায়রা ও কাকিমা আলেইডা। ওমায়রাকে বুকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন কাকিমা। কিন্তু কাদার ঢেউ ক্রমশ গিলে নিতে শুরু করেছিল কাকিমাকে। কাদার স্রোতের নিচে তলিয়ে যেতে যেতে দুই হাত দিয়ে কাকিমা ধরে ফেলেছিলেন ওমায়রার পা দু’টি। ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল ওমায়রা।
তারপর বৃষ্টির জলে জ্ঞান ফেরে। শুরু হয় ৬০ ঘণ্টার লড়াই। কাদাজল ছুঁয়েছিল ওমায়রার চিবুক। প্রায় দশ ঘন্টা পরে এসেছিল রেডক্রসের উদ্ধারকারী দল। তাদের আওয়াজ পেয়ে, দেহের সর্বশক্তি একত্রিত করে কিশোরী চিৎকার করে উঠেছিল, “আমাকে বাঁচাও।" কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও মুক্ত করা যায়নি। উদ্ধারকারীরা বুঝেছিলেন, ওর পা আটকে রয়েছে কাদা আরও ধ্বংসস্তূপে।
দুর্ঘটনার ৩৬ ঘন্টা পর এক ডুবুরি জলের নিচে গিয়েছিলেন। দেখেছিলেন শিউরে ওঠা দৃশ্য। গলা অবধি জলে হাঁটু মুড়ে বসে আছে ওমায়রা। তার দুটি পায়ের হাঁটুর নিচের অংশ পিষে দিয়েছে কংক্রিটের একটি বিম। পিষে যাওয়া পা দুটি চেপে ধরে আছেন কাকিমা। দ্রুত উঠে এসেছিলেন তিনি। ওয়াকিটকির মাধ্যমে উদ্ধারকারী দলটি বার বার একটি পাম্প ও গ্যাসকাটার পাঠানোর আবেদন জানিয়েছিল কলম্বিয়া সরকারের কাছে। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি সরকার। কারণ কলম্বিয়ার সেনারা তখন এম-নাইন্টিন গেরিলাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছিল রাজধানী বোগাটার আশেপাশে।
সেদিনই জারি হয়ে গিয়েছিল ওমায়রার মৃত্যু পরোয়ানা। রেড ক্রস সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিশোরীকে স্বাভাবিক মৃত্যু দেওয়া হবে। ৫০ ঘণ্টার উপর ওই কাদাজলে দাঁড়িয়ে সে। কমতে শুরু করেছিল শরীরের তাপমাত্রা। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্য়ে প্রকৃতিই কেড়ে নিত তাকে। শেষ কয়েক ঘণ্টা ওমায়রাকে ঘিরে ছিল রেড ক্রসের উদ্ধারকারী ও বিশ্বের সাংবাদিকরা। তার আবদার মেটানোর সমস্ত চেষ্টা করা হয়েছিল।
১৬ তারিখ সকাল থেকেই ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছিল ওমায়রা। বেলা তখন দশটা। মাথা পিছন দিকে হেলে গিয়েছিল। বড় বড় শ্বাস নিচ্ছিল সে। রক্ত জমা চোখ দুটো ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসছিল অসীম ক্লান্তিতে। তবু সর্বশক্তি এক করে শেষবারের মতো মৃত্যুকূপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিল ওমায়রা। তার শেষ চাউনিও ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন চিত্র সাংবাদিক ফ্র্যাঙ্কফোর্নিয়ার। যে চাউনিতে ছিল অপরিসীম ঘৃণা। এরপর কোঁকড়া কালো চুলে ভর্তি ওমায়রার মাথাটা ডুবে গিয়েছিল জলের ভিতর। ১০টা ৫ মিনিটে শেষ হয়েছিল ষাট ঘণ্টার লড়াই।
অনেকে আজও বিশ্বাস করে, আজও পরিত্যক্ত আর্মেরো শহরে উড়ে বেড়ায় ওমায়রা। ২০২০ সালে পরিত্যক্ত আর্মেরো শহরে পাওয়া গিয়েছিল নতুন এক ঝিঁঝিপোকার প্রজাতি। ওমায়রাকে চিরকালের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে, বিজ্ঞানীরা প্রজাতিটির নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন ওমায়রার নাম। নতুন প্রজাতিটির নাম রাখা হয়েছিল ‘গিগাগ্রিলাস ওমায়রাই'। তাদের মধ্যেই এখনও বেঁচে আছে অফুরন্ত জীবনী শক্তির প্রতীক কিশোরী ওমায়রা স্যাঞ্চেজ।
Published By: Paramita PaulPosted: 04:37 PM May 28, 2025Updated: 04:39 PM May 28, 2025
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
