বিশ্বদীপ দে: কয়েক দিন আগেই পর্নস্টারের মুখ বন্ধ রাখতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। যদিও খানিক পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে, তবু প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মামলা আপাতত চলবে। শেষ পর্যন্ত কী রায় দেয় আদালত তা নিয়ে আলোচনায় সরগরম আমেরিকা। সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে বসে থাকা বাঙালিও কিন্তু এই আলোচনায় মশগুল। নিজেদের দেশ বাদ দিলে সাধারণত বাঙালি যে দেশগুলির রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে খুব কৌতূহল দেখায়, তার মধ্যে শীর্ষে সম্ভবত আমেরিকাই। ফলে ট্রাম্প (যদিও তিনি অধুনা প্রাক্তন) কেলেঙ্কারির সঙ্গে সঙ্গেই সকলে পুরনো স্মৃতি ঘেঁটে বের করে আনছেন ফেলে আসা সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঘিরে থাকা বিতর্ক। চায়ের আড্ডা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া- জোর ঝড় উঠেছে। ‘ট্রাম্প আর কী হে, ক্লিন্টনের কাছে তো বাচ্চা’… ‘মেরিলিন মনরোর ঘটনাটা মনে আছে? কেনেডি…’ এমনই নানা গুঞ্জন। আসুন, এই লেখায় আমরাও সেই সব কেচ্ছা খানিক নেড়েচেড়ে দেখি।
প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট (US President) জর্জ ওয়াশিংটন থেকেই এমন কেচ্ছার শুরুয়াৎ। ভার্জিনিয়ায় ভেনাস নামের এক দাসীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল ওয়াশিংটনের, গুঞ্জন তেমনই। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমসে’ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ভেনাসের এক উত্তরসূরী ডিএনএ টেস্টেরও দাবি তুলেছিলেন। এই দাবি ঠিক না ভুল, সেপ্রসঙ্গে না গিয়েও বলা যায় একেবারে শুরু থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্টদের ঘিরে এই ধরনের গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তালিকা রীতিমতো দীর্ঘ।
[আরও পড়ুন: ‘মোদি হটাও দেশ বাঁচাও’ পোস্টার লাগিয়ে বিতর্কে হরভজন সিং, পদক্ষেপের নির্দেশ কমিশনের]
সবার কথা এই স্বল্পায়তন লেখায় বলার সুযোগ নেই। তবে জন এফ কেনেডিকে বাদ দেওয়া অসম্ভব। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড ম্যাকমিলানের দাবি ছিল, ওভাল অফিসের সবচেয়ে বড় কেচ্ছা-পুরুষ কেনেডিই (John F. Kennedy)। অখ্যাতদের কথা ছেড়েই দিলাম। অন্তত ১১ জন বিখ্যাত নারীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরির কথা জানা যায়। তবে কেনেডি কোনও দিনই তাঁর নারীলিপ্সার কথা গোপন করেননি। প্রকাশ্যেই তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, দিন তিনেক নারীসঙ্গ না করলে নাকি তাঁর মাথা ধরে যায়! স্ত্রীকে খুব একটা পোষাত না প্রেসিডেন্টের। বরং বৈঠকের মাঝেই কেবিনে ঢুকে পড়তেন কোনও না কোনও মেয়েদের নিয়ে। এহেন লোলুপ পুরুষের সঙ্গে যদি মেরিলিন মনরোর (Marilyn Monroe) মতো ভুবনমোহিনীর আলাপ হয়, তাহলে কী হতে পারে সহজেই অনুমেয়।
মনরোর সঙ্গে তাঁর প্রণয়কে বহু বছর ধরেই স্রেফ গুঞ্জনের আওতায় ফেলা হলেও যত সময় যাচ্ছে ততই জোরালো হচ্ছে সেই সম্পর্কের বাস্তবতা। মনরো তখন নিঃসঙ্গ। তৃতীয় বিয়েটাও ভেঙে যাবে! অথচ বিশ্বময় খ্যাতি। গোটা দুনিয়ার কাছে অপ্রতিরোধ্য সেক্স সিম্বল। তৎকালীন পৃথিবীর প্রবল খ্যাতিমান এই দুই মানুষ কাছাকাছি এলেন। লুকিয়ে পরচুলা পরে নাকি কেনেডির সঙ্গে দেখা করতেন সুন্দরী মনরো। স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন তিনিই হবেন আমেরিকার ফার্স্ট লেডি। ১৯৬২ সালে প্রেসিডেন্টের আগাম জন্মদিন পালনের উৎসবে ফার কোট ও স্কিন টাইট গাউনে লাস্যময়ী পৃথিবীর মনরো মাইক্রোফোনে বলে উঠেছিলেন, ”হ্যাপি বার্থডে মিস্টার প্রেসিডেন্ট। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।” কে জানত কোনও পাবলিক ইভেন্টে সেটাই মনরোর শেষ উপস্থিতি। আড়াই মাস পরে লস অ্যাঞ্জেলসে সন্ধান মিলেছিল মনরোর নিথর শরীরের। আত্মহত্যার আগে শেষ ফোনটা নাকি তিনি করেছিলেন তাঁর প্রিয় পুরুষটিকেই।
[আরও পড়ুন: নিষ্ঠুর জিনপিং প্রশাসন! উইঘুর মুসলিমদের ‘রোজা’ রাখতেও বাধা চিনের]
কেনেডির পরই নিঃসন্দেহে চলে আসে নিক্সন প্রসঙ্গ। রিচার্ড নিক্সন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্যের জন্য এদেশে রাতারাতি কুখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এহেন নিক্সন মারিয়ানা লিউ নামের এক হোস্টেসের প্রেমে নাকি হাবুডুবু খেতে শুরু করেছিলেন। গত শতকের ছয়ের দশকের শেষে তাঁর ও মারিয়ানার প্রেমকাহিনি গোটা বিশ্বে আলোড়ন ফেলেছিল। এফবিআইয়ের কাছে খবর ছিল, মারিয়ানা নাকি গুপ্তচর! যদিও তেমন কোনও প্রমাণ শেষ পর্যন্ত মেলেনি। কোনওদিন প্রকাশ্যে নিক্সনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের কথা স্বীকার করতে দেখা যায়নি মারিয়ানা লিউকে। নিক্সনও ছিলেন স্পিকটি নট। কিন্তু সেই গুঞ্জন আজও রয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি আরেকটা গুঞ্জনও রয়েছে। নিক্সন নাকি সমকামী। যদিও তাঁর প্রাক্তন চিফ অফ স্টাফের সরস দাবি, স্মার্ট ও আকর্ষণীয় মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্ট করতে এতই ব্যস্ত থাকতেন নিক্সন সাহেব, যে পুরুষদের সঙ্গে যৌনতা করার কোনও শক্তি তাঁর আর অবশিষ্ট থাকত না।
কেনেডি আর নিক্সনের মাঝের সময়ে বছর ছয়েক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থাকা লিন্ডন বি জনসনও কেচ্ছার জৌলুসে কম যান না। বছর একুশের ম্যাডেলিন ব্রাউনের সঙ্গে তাঁর অভিসার নিয়ে কিছু কম হইচই হয়নি। এতেই শেষ নয়। আরও বহু সম্পর্ক নাকি ছিল তাঁর। এবং সেসব নিয়ে রীতিমতো গর্বিত ছিলেন তিনি। তাঁর জীবনীকার লিখেছিলেন, কেউ তাঁর সামনে কেনেডির বহু নারীসঙ্গের প্রসঙ্গ তুললে তিনি নাকি মেজাজ হারাতেন। রীতিমতো টেবিল চাপড়ে বলে উঠতেন, কেনেডি স্বেচ্ছায় যতগুলি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন তার থেকে বেশি সম্পর্কে তিনি নাকি দুর্ঘটনাক্রমেই জড়িয়ে পড়েছেন! এখানেই শেষ নয়, নিজের পুরুষাঙ্গ নিয়ে রীতিমতো ‘অবসেশন’ ছিল ভদ্রলোকের। ভালবেসে নিজের সেই প্রিয় অঙ্গের নাম দিয়েছিলেন জাম্বো। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিক ও স্টাফদের নাকি প্রায়ই সেটা প্রদর্শন করে জানতে চাইতেন, ”এত বড় দেখেছ নাকি কখনও?”
এবং বিল ক্লিন্টন (Bill Clinton)। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের এই কেচ্ছা-কাহন আমরা শেষ করব তাঁর কথা দিয়েই। বিলের সঙ্গে মনিকা লিউয়েনস্কির প্রেমকাহিনি অনেকের স্মৃতিতেই টাটকা। পলা জোন্স, জেনিফার ফ্লাওয়ার্স, ক্যাথলিন উইলির মতো বহু মহিলাই তাঁর বিরুদ্ধে অশালীন আচরণের অভিযোগ এনেছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি হইহই হয়েছিল মনিকা এপিসোড ঘিরেই।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলা বিলের সঙ্গে তাঁর থেকে প্রায় তিরিশ বছরের ছোট বছর বাইশের এক তরুণীর সম্পর্ক নাকি দানা বেঁধেছিল গত শতকের নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে। হোয়াইট হাউসে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে আসা মনিকার সঙ্গে কী করে খোদ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হল তা নিয়ে ট্যাবলয়েডগুলো যে কত নিউজ প্রিন্ট খরচ করেছে তার ইয়ত্তা নেই। মনিকা নাকি এক সহকর্মীকে ফোনে তাঁদের সম্পর্কের কথা বলেছিলেন। সেখান থেকেই ফাঁস হয়ে যায় সব। ১৯৯৮ সালে ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি হতে হয় ক্লিন্টনকে। তিনি অবশ্য প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, মনিকার সঙ্গে তাঁকে জড়িয়ে যা শোনা যাচ্ছে সব নির্জলা মিথ্যে। পরে মার্কিন কংগ্রেসে বিচার প্রক্রিয়ার শেষে নির্দোষই প্রমাণিত হন তিনি। তবু… কিছু প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে, যাদের ‘উত্তর মেলে নাই’।