সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছিলেন চিনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত। ২০২০ সালে গালওয়ান সংঘর্ষের পর উত্তেজনা কমাতে দিল্লি-বেজিংয়ের মধ্যে বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নিয়েছিলেন। এবার সেই 'চিন বিশেষজ্ঞ' বিক্রম মিশ্রিই হলেন ভারতের নতুন বিদেশ সচিব। সোমবার থেকে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। এখন কূটনৈতিক মহলে প্রশ্ন, চিনকে নজরে রেখেই কি ভারতের এই সিদ্ধান্ত?
এতদিন ভারতের বিদেশ সচিবের দায়িত্ব সামলেছিলেন বিনয়মোহন কোয়াত্রা। তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই সরকারের কাছে ১৯৮৯ ব্যাচের ফরেন সার্ভিস অফিসার বিক্রম মিশ্রির নাম সুপারিশ করে বিদেশ মন্ত্রক। এর পর অ্যাপয়েন্টমেন্টস কমিটি সেই সুপারিশ মেনে কোয়াত্রার উত্তরসূরি হিসাবে বিক্রমকে নিয়োগ করে। ১৪ জুলাই, রবিবার ভারতের বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য কোয়াত্রাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানান বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। আর সোমবার বিদেশ সচিবের কার্যালয়ে বিক্রম মিশ্রিকে অভিনন্দনও জানান তিনি।
এদিন এক্স হ্যান্ডেলে জয়শংকর লেখেন, 'আজ থেকে ভারতের বিদেশ সচিবের দায়িত্ব কাঁধে নিলেন শ্রী বিক্রম মিশ্রি। আগামিদিনে নতুন দায়িত্বের জন্য তাঁকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানায় বিদেশ মন্ত্রক।' বিক্রম মিশ্রি নাম এলেই সবার প্রথমে উঠে আসে চিনের প্রসঙ্গ। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি চিনে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন। ফলে বেজিংয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি হোক বা কূটনীতি, সব কিছুই তাঁর নখদর্পণে। ২০২০ সালের ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় মুখোমুখি হয় ভারত ও চিনের ফৌজ। রক্তক্ষয়ী সেই সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান শহিদ হন। এর পরই দুদেশের মধ্যে পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেসময় উত্তেজনা কমাতে দিল্লি ও বেজিংকে আলোচনায় বসানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বিক্রম। কীভাবে নানা 'চৈনিক চাল'কে মাত দেওয়া যায় তা ভালোই জানেন বিক্রম।
এর পর ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি 'চিন বিশেষজ্ঞ' বিক্রমকে ডেপুটি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করে কেন্দ্র। চলতি বছরের ১৪ জুলাই পর্যন্ত সেই পদেই কাজ করেছেন তিনি। তবে এখানেই শেষ নয়। বর্ণময় কর্মজীবনে আরও নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা গিয়েছে বিক্রমকে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরাল, ২০১২-য় মনমোহন সিং ও ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত সচিব হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্পেন ও ২০১৬-১৮ পর্যন্ত মায়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসাবে নিযুক্ত হন বিক্রম। এছাড়া পাকিস্তান, আমেরিকা, জার্মানি, বেলজিয়াম ও শ্রীলঙ্কায় ভারতের হয়ে বিশেষ প্রোজেক্টেও কাজ করেছেন ৫৯ বছরের এই অভিজ্ঞ আধিকারিক।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গালওয়ান ছাড়াও একাধিক বিষয়ে ভারত ও চিনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ে রয়েছে। দক্ষিণ চিন সাগরে লালফৌজের আগ্রাসানের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে আমেরিকা ও ভারত। এর মাঝেই গত বছরের ২৮ আগস্ট নতুন ম্যাপ প্রকাশ করে দিল্লির সঙ্গে মতোবিরোধ তীব্র করে বেজিং। কারণ নতুন মানচিত্রে অরুণাচল প্রদেশকে নিজের বলে দাবি করে কমিউনিস্ট দেশটি। আকসাই চিনও দখল করে রেখেছে বেজিং। তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে মোদি সরকারের কড়া নজর রয়েছে চিনের গতিবিধির উপরে। এই পরিস্থিতিতে বিক্রম মিশ্রিকে নতুন বিদেশ সচিবের দায়িত্ব দিয়ে নতুন কূটনৈতিক চাল দিয়েছে ভারত। ফলে দিল্লি-বেজিং সম্পর্কের বরফ গলাতে কোন ভূমিকা নেন বিক্রম সেদিকেই নজর আন্তর্জাতিক মহলের।