সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জার্মানি মানে হিটলার-গ্যোটে-বেকেনবাওয়ার এবং বরফ। মাইল মাইল তুষার অঞ্চল। শীতে সবকিছু সাদা। গ্রীষ্মে বরফ গললে কোনও মতে মাথা তোলে সভ্যতা। সেখানেই নাকি চলতি গরমকালে ফ্যান, এসি চলছে বাড়িতে ও অফিসে! কার্যত গত দু'সপ্তাহ ধরেই প্রকৃতি রোষে পুড়ছে ইউরোপ। দিনের বেলা পথে বেরানো দায় হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ বলছে, মনে হচ্ছে আগ্নেয়গিরির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি। দিন কয়েক আগে স্পেনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ডিঙিয়েছিল ৪৬ ডিগ্রি। এমন তাপমাত্রায় পশু, পাখি, পতঙ্গ, মাছের মতো প্রকৃতির অন্য সদস্যরাও ভালো নেই।
মহাদেশ জুড়ে তাপপ্রবাহে তুরস্কের জঙ্গলে দাবানল দেখা দিয়েছে আগেই। এবার পূর্ব ইউরোপের দেশ চেক প্রজাতন্ত্রের নদীতে ভেসে উঠছে মরা মাছ। গত সপ্তাহে এই নদী থেকে ৩০ টন মৃত মাছ সরানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ভারতের গ্রীষ্মের চেয়েও যেন খারাপ অবস্থা। অত্যাধিক উষ্ণতা থেকে বাঁচতে সর্বক্ষণ এসি চালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর ফলে বিদ্যুতের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। এমনকী বিদ্যুৎ ঘাটতির জেরে বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ব্যাহত হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। চেক প্রজাতন্ত্র ছাড়াও মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের আলবানিয়া, বসনিয়া, মন্টেনেগ্রো, সার্বিয়া, হারজেগোভিনায় গরমের জন্য লাল সতর্কতা জারি হয়েছে। বসনিয়ার মস্টার শহরে শুক্রবার তাপমাত্রা পৌঁছোয় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সবখানেই দিনেরবেলা রাস্তাঘাট, রেস্তরাঁ, ক্যাফে খাঁ খাঁ করছে।
গরমের জেরে ইটালিতে ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহরে গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে স্নানের ব্যবস্থা রয়েছে। জার্মানিতে গড় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি ছুঁয়েছে। সেখানে অফিসে পাখা চলছে। কর্মীদের সময়ে ছাড় দিচ্ছে বহু অফিস। ফ্রান্সের শহরগুলিতে দিনের বেলা পথঘাট সুনসান। মার খাচ্ছে চিজ ব্যবসা। চিজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। প্রবল গরমে তা পচে যাচ্ছে। সপ্তাহের শেষে স্পেনে দাবদাহের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অসংখ্য মানুষ।
তুষারশুভ্র যে ইউরোপে বেড়াতে যায় মানুষ, এই গ্রীষ্মে তা যেন অলিক! 'ভুল' করে যারা বেড়াতে গিয়েছেন গরমে নাজেহাল তারা। বুধবার পর্যন্ত ইউরোপে গরমের কারণে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্পেনে ৪ জন, ফ্রান্সে ২ জন এবং ইটালিতে ২ জন মারা গিয়েছেন। গরমের কারণে গারোন নদীর জলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ ফ্রান্সের গল্ফেক পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি চুল্লির মধ্যে একটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
