সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। বাড়ছে মৃত্যুমিছিল। দু'দেশের সংঘর্ষ যে দিকে এগোচ্ছে তাতে পরমাণু যুদ্ধের মেঘ ঘনাচ্ছে। জল্পনা উসকে এবার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (নন প্রোলিফেরেশন ট্রিট্রি বা এনপিটি) থেকে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে তেহরান! ইতিমধ্যেই এনিয়ে নতুন বিল আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে সেদেশের পার্লামেন্টে। যা নিয়ে চিন্তিত আন্তর্জাতিক মহল।
কয়েকদিন আগেই দু'দফায় আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু কর্মসূচি বা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করে ইরান। শোনা গিয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামনে সুর নরম করেছে তেহরান! পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার কথা দিয়েছে তারা। কিন্তু রয়েছে শর্ত। ‘ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্টে’ কোনও রকম বাধা দেওয়া যাবে না ইরানকে। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেস্কিয়ানও বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। তবে পারমাণবিক শক্তি এবং গবেষণা তারা চালিয়ে যাবে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনেইও সাধারণের মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এই বিধ্বংসী হাতিয়ার পক্ষে নন বলেই জানিয়েছিলেন।
কিন্তু ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আশঙ্কা ছিল, আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা আসলে চোখে ধুলো দেওয়ার কৌশল ইরানের। আড়ালে পরমাণু হাতিয়ার বানাচ্ছে তারা। সেই অস্ত্র পৌঁছে যাবে হামাস, হেজবোল্লা, হাউথিদের মতো সশস্ত্র সংগঠনের কাছে। তাই সর্বশক্তি দিয়ে ইরানের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। পারমাণবিক কেন্দ্র, সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ইসলামিক দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন দুশোর উপর মানুষ। এই পরিস্থিতে সোমবার ইরানের বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পার্লামেন্টে নতুন বিল আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে এই ধরনের হাতিয়ার ব্যবহার করে ধবংসলীলা চালানোর বিপক্ষে তেহরান। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে কি ইরান আর আমেরিকাকেই কোনও বার্তা দিতে চাইল ইরান?
উল্লেখ্য, বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইরানের সঙ্গে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল আমেরিকা, ব্রিটেন, চিন, ফ্রান্স ও রাশিয়া। ২০১৫-তে হওয়া এই চুক্তির শর্তানুযায়ী, তাদের যে কোনও রকমের পরমাণু কার্যক্রম বন্ধ রাখবে ইরান। প্রয়োজনে তাদের যে কোনও পারমাণবিক উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে নজরদারি চালাতে পারবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন বা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি। পরিবর্তে ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে মোটা অঙ্কের ত্রাণ পাঠাবে আমেরিকা। কিন্তু ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি অভিযোগ করেন, শর্ত না মেনে গোপনে আণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে ইরান।
