সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র আকার নিয়েছে সংঘাত। ঘনিয়েছে ভয়ংকর যুদ্ধের মেঘ। রণদুন্দুভি বাজিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামিক দেশটির ৩ জায়গায় আঘাত হেনেছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। রাজধানী তেহরান, খুজেস্তান ও ইলাম। কিন্তু হামলা চালানো হয়নি পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে। প্রশ্ন উঠছে, কেন খুঁজে খুঁজে এই জায়গাগুলোকেই টার্গেট করল তেল আভিভ?
গত ১ অক্টোবর ইজরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। যার বদলা নিতে ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছিল তেল আভিভ। আক্রমণ শানাতে সেনা কর্তাদের সঙ্গে এতদিন 'নীল নকশা' তৈরি করছিলেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। অবশেষে শনিবার ইরানের আকাশে হানা দেয় ইজরায়েলি ফৌজের একশোটি এফ-৩৫আই জেট। ইরানি সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু বোমা ফেলা হয়। বিস্ফোরণ ঘটে তেহরান-সহ একাধিক জায়গায়। বিবৃতি দিয়ে ইরানি সেনা জানিয়েছে, 'সেনাঘাঁটিতে জায়নবাদী রাষ্ট্রের হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে আমাদের দুই সৈনিক জীবন উৎসর্গ করেছেন।" এদিন ইজরায়েলে হামলা চালায় ইরাক ও সিরিয়াতেও।
গোপন বাঙ্কারে সেনাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় নেতানিয়াহু।
হামলার কারণ হিসাবে সমর বিশ্লেষকদের মত, প্রথমত, তেহরানে আঘাত হানা মানে ইরানের হৃদয়ে হামলা চালানো। রাজধানীতে সরাসরি আক্রমণ শানানো মানে ইরানের যেকোনও জায়গায় আছড়ে পড়তে পারে ইজরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র। এই বার্তাই দিতে চেয়েছে তেল আভিভ। তেহরানে পাশাপাশি বোমাবর্ষণ করা হয় খুজেস্তান ও ইলাম শহরে। এর পিছনে দ্বিতীয় কারণ উঠে আসছে, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও মিসাইল তৈরির কারখানায় হামলা চালিয়ে ইরানের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া। কারণ এই শহরগুলোতেই রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ও হাতিয়ার তৈরির কারখানা। সূত্রের খবর, ইজরায়েলের হামলায় ইরানের একাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিসাইল ও অস্ত্র তৈরির কেন্দ্রগুলো তে। এর ফলে হেজবোল্লা বা হামাসের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোর অস্ত্র জোগানে টান পড়বে। এছাড়া জোর ধাক্কা খেয়েছে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে এবার যেকোনও সময় ইসলামিক দেশটির ভিতরে ঢুকে পড়তে পারবে ইজরায়েলি বোমারু বিমান। এইভাবে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়া ইরানের জন্য বড় ধাক্কা।
এতদিন ইরানে কীভাবে ইজরায়েল হামলা চালাবে তার কোনও আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। বদলা নেওয়ার কৌশল নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে নানা আলোচনা করছিল নেতানিয়াহুর দেশ। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোকে নিশানা করা হবে। কিন্তু এদিন তা হয়নি। যা নিয়ে ইজরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেসের প্রাক্তন সহকারী গিডিয়ন লেভি সিএনএনকে জানান, ইরানে হামলা চালালেও পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোকে টার্গেট করা হয়নি। এতে আমেরিকার কৌশলই প্রাধান্য পেয়েছে। পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালালে সমূহ সম্ভাবনা যে, সর্বশক্তি দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে ইরান। যেটা আমেরিকা বা ইজরায়েল চায় না। তেল আভিভের উদ্দেশ্য এইভাবে একটা সীমার মধ্যে যুদ্ধকে বেঁধে রাখা।
সমর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইরানকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে দেওয়াই ইজরায়েলের পরিকল্পনা ছিল। তেহরান জানত কোনও না কোনও দিন হামলা চালাবে ইজরায়েল। সেইভাবেই চলছিল হামলা ঠেকানোর প্রস্তুতি। কিন্তু যেভাবে তেহরান, খুজেস্তান ও ইলামে আঘাত হেনেছে ইজয়ারেলি সেনা তাতে ধাক্কা খেয়েছে ইরানের সমস্ত প্রস্তুতি। যখন এই হামলা হচ্ছিল সেনাবাহিনীর বাঙ্কারে বসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্টকে সঙ্গে নিয়ে গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছিলেন নেতানিয়াহু।
ইজরায়েলের এই হামলার নিন্দা করেছে সৌদি আরব। ইরানকে প্রত্যাঘাত করা থেকে বিরত থাকার বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন, "ইরানের আগ্রাসন থেকে নিজেদের বাঁচানোর অধিকার রয়েছে ইজরায়েলের। কিন্তু এই সংঘাত আঞ্চলিক স্তরে ছড়িয়ে পড়া উচিত নয়। পরবর্তীতে দুই পক্ষকেই হামলা থেকে বিরত থাকতে হবে।" জানা গিয়েছে, এই ঘটনার পর আকাশসীমা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে ইরান, সিরিয়া, ইরাক।