সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জেটগতি আর প্রযুক্তি নির্ভর জীবন মুছে দিতে পারে না নিঃসঙ্গতা। জীবন সায়াহ্নে এই নিঃসঙ্গতা যে কত বড় অভিশাপ হয়ে নেমে আসে, তা আরও একবার স্পষ্ট হল জাপানি বৃদ্ধা আকিওর অদ্ভূত কীর্তিতে। শুধুমাত্র একাকিত্ব ঘোচাতে চেয়ে আর বাকি জীবনটা বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা পাকা করতে তিনি এমন এক পথ খুঁজে নিলেন, যা অবিশ্বাস্য! একের পর এক অপরাধ করে তিনি জেলবন্দি হলেন। তাতে অন্তত জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি কারাগারের বাসিন্দাদের সঙ্গ পান। আপাতত অশীতিপর আকিওকে রাখা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় কারাগার টোকিওর তোচিগি মহিলা জেলে।
নামী জাপানি সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, ৮১ বছরের আকিও আগে কখনও খাবার চুরি, কখনও আবার শপিং মলে গিয়ে হাতসাফাই করেছেন। যার জন্য ইতিমধ্যে দুবার তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন কারাবাসে থাকতে চেয়ে আরও বড় অপরাধের পরিকল্পনা করেন আকিও। সেইমতো আরও বড় চুরি করে শাস্তি পান এবং টোকিওর মহিলা জেলে বন্দি হন। বলছেন, এই জীবনেই তিনি সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ। বলছেন, ''আমি চুরির মতো একটা নিম্নমানের অপরাধের পথ বেছে নিয়েছি বাধ্য হয়ে। যদি আমি একটু আর্থিকভাবে সচ্ছল হতাম, একটা সুন্দর জীবন পেতাম, তাহলে তো এসব ভাবতে হতো না।''
জেলে যাওয়ার আগে আকিরা ছেলের সঙ্গে থাকতেন। ছেলে নাকি প্রায়ই তাঁকে গঞ্জনা করত, বারবার বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলত। এসব অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। ফলে বেছে নেন অপরাধের পথ। চুরি করে জেলযাত্রা। এনিয়ে আকিরার বক্তব্য, ''ছেলে কোনদিন আমাকে বের করে দেবে, এই ভয়ে আমি নিজেই বেরিয়ে এসে এই পথ ধরি। এই বয়সে তো আর কিছু করতে পারতাম না।'' টোকিওর তোচিগি মহিলা জেলে এখন বন্দি ৫০০ জন, যারা বেশিরভাগই বয়স্ক। আকিও বলছেন, ''জেলে খুব ভালো ভালো লোকজন আছেন। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে মনে হচ্ছে।''
তোচিগি কারাগারের আধিকারিক তাকায়োশি শিরানাগা। তিনি বলছেন, এখানকার বয়স্ক নাগরিকরা জেলে থাকতেই এখন পছন্দ করছেন। অনেকে তো মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার ইয়েন বা ভারতীয় মুদ্রায় ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে জেলে থাকতে চাইছেন। তাতে অন্তত খাবার আর একাকিত্বের ভাবনা থাকবে না। হা নিঃসঙ্গতা! প্রযুক্তি অনেক কিছু দিয়ে জীবন থেকে যে আসল মাধুর্য কেড়ে নিয়েছে, এসব বাস্তব ঘটনাই তা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
