শ্রেয়সী রক্ষিত দণ্ড: দুর্গাপুজোয় বাঙালির মনে আনন্দের ঢেউ খেলবে না, তা হতে পারে না। সে দেশে হোক বা বিদেশে। এই যেমন আমি ও আমরা এখন নয়ের দশকের ফুটবলের জাদুকর রুড খুলিটের দেশ নেদারল্যান্ডে প্রবাসী। তা এখানেও নয় নয় করে ১৩টা দুর্গাপুজো হয়। প্রতি বছর একটা দুটো করে বাড়ছে। ইউরোপের এই দেশে প্রায় আড়াই লক্ষ ভারতীয়ের বাস। বাঙালির সংখ্যা হাজার খানেক। প্রায় সকলেই মেতে ওঠেন শারদ আনন্দে। কিন্তু কালীপুজো হত না। সেই অভাব পূর্ণ করতেই 'উচ্ছ্বাস'-এর জন্ম। উচ্ছাসের উদ্যোগে এবারই প্রথম মা কালীর আরাধনা হতে চলেছে সুদূর নেদারল্যান্ডসে।
স্বামী রাহুল রক্ষিতের কর্মসূত্রে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নেদারল্যান্ডসে থিতু হই আমি। এর আগে ছিলাম আমেরিকায়। দেশে নিজের পরিবার। তাঁদের থেকে দূরে থাকলেও এখানে বড় 'পরিবার' পেয়ে যাই। পরিচিতি বাড়ে একটা ফুড ক্যাটারিং সার্ভিস খোলায়। ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়েও। সব ঠিকই ছিল। দুর্গাপুজোয় হচ্ছিল এখানে। কিন্তু কালীপুজো নেই।
এদিকে কালীপুজোর সঙ্গে আমার ছোটবেলার যোগ। মামাবাড়িতে কালীপুজো হত। যদিও তা এক সময় বন্ধ হয়ে যায়। কালীপুজো করব, মনে মনে এই ইচ্ছে দীর্ঘদিন বয়ে বেড়িয়েছি। তাছাড়া আমি বালির মেয়ে। ফলে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মা ভবতারিণী আমার প্রাণের ঠাকুর। বিদেশে আসার আগে দক্ষিণেশ্বর থেকে একটা ছোটা কালী ঠাকুর কিনে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম যেখানেই বাসা বাঁধি পুজো করব। তাও হয়ে ওঠেনি। কিন্তু মা-ই হয়তো যোগাযোগ করিয়ে দিলেন, আমার আলাপ হল নীলাঞ্জন ও লিপিকা ভট্টাচার্যের সঙ্গে। এই দম্পতি বাড়িতে কালীপুজো করতেন।
নেদারল্যান্ডসে কালীপুজোর প্রস্তুতি।
ঠিক করেছিলাম আমিও বাড়িতেই কালীপুজো করব। কিন্তু আরও তিনটি পরিবার আমার উদ্যোগে শামিল হয়। তাঁরাও আমার সঙ্গে থাকতে চায়। এভাবেই জন্ম উচ্ছাসের। ইউরোপে জার্মানি ছাড়া কোথাও কালী পুজো হয় বলে শুনিনি। অতএব, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গে আমাদের পুজোই প্রথম কালীপুজো। যার পৌরোহিত্যে থাকবেন ভট্টাচার্য দম্পতি নীলাঞ্জন ও লিপিকা। আমরা কলকাতার কালীপুজো খুব মিস করি তো। সেই মন খারাপ কাটাতেই আমাদের এই উদ্যোগ।
কুমোরটুলির প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী জয়ন্ত পালের তৈরি করেছেন মায়ের মূর্তি। দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণীর আদলেই তৈরি হয়েছে সাড়ে তিন ফুটের প্রতিমা। পুজোর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও মেতে উঠবে নেদারল্যান্ডসের বাঙালিরা। এখন কেবল সেই দিনটার প্রতিক্ষা।