তুরস্কে বিয়ে আগেই হয়ে গেছে। আজ সন্ধেবেলা আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গলে নুসরত জাহান জৈন-এর বিয়ের রিসেপশন। তার আগে নানা ব্যস্ততার মধ্যে ইন্দ্রনীল রায় ধরে ফেললেন আজকের পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে আলোচিত নববধূকে।
অনেকদিন পরে ‘কফিহাউস’-এ ইন্টারভিউ। প্রথমেই আপনাকে কংগ্র্যাচুলেশনস। প্রথমত, ইলেকশনে জেতার জন্য। দ্বিতীয়ত, বিয়ের জন্য।
থ্যাংক ইউ। অনেকদিন পর তোমার সঙ্গে কথা বলে আমার নিজেরই কী ভাল লাগছে। মাঝখানে কয়েক মাস এত ব্যস্ত ছিলাম, কারও সঙ্গে দেখা করারও সময় পাইনি। বাট ইট ইজ সো নাইস টু কানেক্ট এগেন।
ব্যস্ততা তো বুঝতেই পারছি। সকাল থেকে ফোনেই পাচ্ছিলাম না।
আর বোলো না ইন্দ্রদা। সকাল থেকে বাড়িতে অনেকগুলো ছোটখাটো কাজ করছিলাম। প্রচুর গোছানো বাকি… সেগুলোই চলছিল।
আপনি কি তাহলে শিফট করে গেছেন শ্বশুরবাড়িতে?
হ্যাঁ। যেদিন রাতে তুরস্ক থেকে আমরা ফিরলাম, এয়ারপোর্ট থেকে তো সোজা এই বাড়িতেই চলে এসেছি।
[আরও পড়ুন: দেবীর অকালবোধনে দেব! প্রকাশ্যে ‘সাঁঝবাতি’র ঝলক]
শ্বশুরবাড়ি তো আলিপুর?
হ্যাঁ, আলিপুর।
এটা ফ্ল্যাট? না বাড়ি?
এটা ফ্ল্যাট। সেই ফ্ল্যাটেই চলছে শিফটিংয়ের কাজ। বালিগঞ্জ থেকে বেশ কিছু জিনিস এখানে নিয়ে এসেছি। সেগুলোই গুছিয়েগাছিয়ে রাখার কাজ চলছে।
বালিগঞ্জের অত সাজানো ফ্ল্যাটে তো সব নিজে হাতে করেছিলেন। ছোটখাটো সব জিনিস নিয়ে আপনার যে একটা পারফেকশনিস্ট ব্যাপার রয়েছে, সেটাও দেখেছিলাম। প্রত্যেকটা জিনিস কেনার আগে যথেষ্ট নিটিরপিটিরও করতেন। এবার শ্বশুরবাড়ি সাজানোর ক্ষেত্রেও কি একই রকম করেছিলেন?
সত্যি বলছি, এখানে আমাকে কিচ্ছু করতে হয়নি। আমার শ্বশুরমশাই সবটা আমাকে একেবারে প্ল্যাটারে সাজিয়ে দিয়েছেন। সত্যি কিছু করিনি।
তাছাড়া এর মধ্যে আমার পার্লামেন্টও ছিল। তাই দেখার ইচ্ছে থাকলেও সময় পাইনি একেবারে। তবে কিছু কিছু জিনিস যেগুলো আমার লাগবেই, সেগুলো আমি বরকে আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলাম।
যেমন?
(হাসি) যেমন প্রথমেই বলে দিয়েছিলাম আমার যে ড্রেসিংটেবল থাকবে তার সামনে যেন বালব থাকে যাতে আমি ঠিক করে সাজতে পারি। যেন মনের মতো মেকআপটা করতে পারি। এটা তো আমাদের অ্যাক্টরদের অভ্যেস। তা নিখিল দেখলাম সে সবের ব্যবস্থা করে রেখেছে। আরে নায়িকা বিয়ে করেছ, এগুলো তো করতেই হবে না কি? (হাসি)
কিন্তু বালিগঞ্জের নিজের বাড়ি থেকে শিফট করা… মন খারাপ তো নিশ্চয়ই ছিল?
কোন মেয়ের মন খারাপ হয় না বলো? তুমি হিরোইন হতে পারো, তুমি এমপি হতে পারো, তুমি কলেজের ছাত্রী হতে পারো, তুমি টপ আইটি প্রফেশনাল হতে পারো। ওই একটা মন খারাপ পৃথিবীর সব মেয়ের একই রকম হয়।
বালিগঞ্জের বাড়ি থেকে জিনিসপত্তর এনেছেন তো বুঝলাম। কিন্তু ওই বাড়িতে একজন অসাধারণ কচুরি, চপ আর কিমার শিঙাড়া বানাতেন। তাঁকেও কি এনেছেন?
ওহ ইউ রিমেমবার? না উনি দেশে চলে গেছেন ওঁর পরিবারের কাছে। কিছু ফ্যামিলি কমিটমেন্টস ছিল। যে আমার রোজকারের রান্নাবান্না করত ওই বাড়িতে, সেই মেয়েটিকে নিয়ে এসেছি। ও আছে আমার সঙ্গে।
কলকাতার রিসেপশনে নেমন্তন্ন পেয়েছেন এমন অনেকে আমাকে গত দু’দিনে জিজ্ঞেস করেছেন, নুসরতের রিসেপশনে কি নন-ভেজ থাকবে?
(হাসি) শুনুন, নুসরতের বিয়ের রিসেপশনে বিরিয়ানি থাকবে না এটা কি হয়? ওটা মাস্ট। যদিও আমি খুব বেশি খাই না কিন্তু খাবারটা আমার কাছে
একটা ইমোশন। আই অ্যাম ভেরি প্যাশনেট অ্যাবাউট ফুড।
আচ্ছা, এ বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত ভাবতে পেরেছিলেন এতটা বদলে যাবে আপনার চারপাশটা?
সত্যি বলব? বিশ্বাস করবেন তো?
অবশ্যই।
আমার ভাবার সময়ই হয়নি। একটার পর একটা পরিস্থিতি আমার সামনে এসেছে আর আমি সেই পরিবেশ, সেই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে অ্যাডাপ্ট করে গেছি। যা নতুন কিছু দেখেছি সামনে, তা ওপেন আর্মসে অ্যাকসেপ্ট করেছি। আর তোমরা যারা আমাকে আগে থেকে চেনো তাদের বলি, আমার শুধু অ্যাড্রেসটা পালটাচ্ছে। বাকি আর কিচ্ছু পালটায়নি। কিছু না।
পদবি তো পালটেছে?
হ্যাঁ পদবি পালটেছে।
সেদিন শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দেখলাম আপনি ‘নুসরত জাহান রুহি জৈন’ বলে শপথ নিলেন?
হ্যাঁ। কিন্তু আমি এফিডেভিট করতে দিয়েছি।
সেটায় কি কোনও চেঞ্জ করছেন?
হ্যাঁ। ‘রুহি’-টা আর লিখব না। বড্ড বড় হয়ে যাচ্ছে নামটা (হাসি)। এবার থেকে আমি নুসরত জাহান জৈন।
তাহলে #NJ কি এবার #NJJ হয়ে যাবে?
আমি তো ভাবছি #NJ স্কোয়ার রাখব (হাসি)।
পার্লামেন্টের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এক্সট্রাঅর্ডিনারি। সবাই আমাকে যেভাবে অ্যাকসেপ্ট করেছে, আমি সত্যি অভিভূত। যাওয়ার আগে শুনেছিলাম শপথের সময় খুব চেঁচামেচি হচ্ছে। কিন্তু আমি যখন শপথ নিলাম, এভরিওয়ান ওয়াজ সো সো ওয়ার্ম টুওয়ার্ডস মি। কেউ একটুও বিরক্ত করেনি। উলটে সব মেম্বার আমাকে সাপোর্ট করেছেন, পার্টি-দল নির্বিশেষে। আই ওয়াজ ওভারহোয়েলমড।
এবার তো দিল্লিতে এমপি-র ফ্ল্যাটও পাবেন।
হ্যাঁ। আন্ডার প্রসেস রয়েছে ব্যাপারটা। তাই এখনও বিশেষ ভাবিনি ওটা নিয়ে।
আচ্ছা একটু পিছিয়ে যাই। আজকে তো বিয়ে-থা সব হয়ে গেছে। এবার বলুন, নিখিল কবে আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন? ইংলিশে যাকে বলে, হোয়েন ডিড হি পপ দ্য কোয়েশ্চেন?
বিয়ের প্রস্তাব ও আমাকে দিয়েছিল গত বছর নভেম্বর মাসে। এবং সেটা কিন্তু একেবারে হাঁটু গেড়ে। হি প্রোপোজড ম্যারেজ গোয়িং ডাউন অন হিজ নি’জ।
ওয়াও। সেটা কি কলকাতায়?
হ্যাঁ কলকাতায়।
অ্যান্ড…
অ্যান্ড আর কিছু না। যা হওয়ার তাই হয়ে গেল। (হাসি) একটাই কথা বলব। আমি কিন্তু খুব প্র্যাক্টিক্যাল মেয়ে। খুব যে রোমান্টিক, তা নই। কোনওদিন ছিলামও না। বাট সত্যি বলছি, নিখিল জাস্ট মেল্টেড মাই হার্ট। একটু বোকা বোকা লাগবে তা-ও বলছি, এটা একেবারে মিলস অ্যান্ড
বুনস রোমান্স। আর এই রোমান্টিক আমি-টা যে ছিল আমার ভেতরে, সেটা আমি জানতামও না। সেটা আমার মনের ভেতর থেকে বের করে আনার সব ক্রেডিট নিখিলের। হি হ্যাজ চেঞ্জড মাই রিয়্যালিটি ইনটু ড্রিমস।
বুঝলাম।
আর একটা কথা। নিখিলের বন্ধুরা আমাকে বলেছে, নিখিলকে এত রোমান্টিক বা সেন্সিটিভ ওরা আগে দেখেনি। নিখিলের এই চেঞ্জটা ওরা বলে আমার জন্য হয়েছে। আই লাভ হিম লাইক ক্রেজি। হি ইজ দ্য বেস্ট হাজব্যান্ড আ উওম্যান ক্যান ড্রিম অফ।
টাচউড…
ইয়েস টাচউড।
তাহলে কি নিখিল ফোনের কলার টিউনে ‘তুহি রে’-র বদলে ‘রুহি হে’ রেখেছেন? নাকি আপনার ছবির হিট গান ‘মাঝে মাঝে তোর কাছে জেনেশুনে হেরে যাই… কিছু কথা বলে ফেলি, কিছু কথা ছেড়ে যাই’ রেখেছেন?
(হাসি) না না। কলার টিউনে কিছুই রাখেনি। আমার কলার টিউন ব্যাপারটা খুব একটা ভাল লাগে না। আমার ফোনে যদি কখনও কলার টিউন শোনেন, জানবেন ভুলভাল বোতাম টিপে সেটা আমি করে ফেলেছি।
আচ্ছা, আপনি তো না হয় লাইমলাইটে থেকেছেন গত দশ বছর। নিখিল তো তা নন। আজ স্পটলাইট নিখিলের ওপরেও একই রকম জোরালো। এছাড়া নানা বিতর্ক হয়েছে এর মধ্যে। ন্যাশনাল মিডিয়ার নজরও আছে আপনার ওপর। এই কন্ট্রোভার্সি যার সঙ্গে একটা স্ট্রেস আসতে বাধ্য, সেগুলো কীভাবে হ্যান্ডল করছেন নিখিল?
তাহলে একটা কথা বলি। নিখিলের আরও একটা বড় গুণ, ও অসম্ভব ঠান্ডা মাথার ছেলে। অনেক সময় কিছু স্ট্রেসফুল মুহূর্তে আমি মাথা গরম করে ফেলি। তখনও দেখেছি, নিখিল একদম কাম অ্যান্ড কমপোজ্ড। একটা উদাহরণ দিই, বুঝতে পারবেন। এই তুরস্ক থেকে ফেরার সময় আমার প্রায় দশজন পরিচিত ইস্তানবুল থেকে ফ্লাইট মিস করে। আমার তো সঙ্গে সঙ্গে টেনশন শুরু, প্যানিক করছি। তখন দেখলাম একেবারে ঠান্ডা মাথায় পুরো সিচুয়েশনটা হ্যান্ডল করল নিখিল। ইট ইজ আ হিউজ কোয়ালিটি। এছাড়াও তুরস্কে যখন বিয়ে করতে গেছি তখন সন্দেশখালির ঘটনা ঘটেছে। আমি প্রায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন করছি। খোঁজ নিচ্ছি পরিস্থিতির। টেনশন করছি। তখনও আমাকে ঠান্ডা রাখার কাজ ব্রিলিয়ান্টলি করেছিল নিখিল।
আচ্ছা তুরস্কে তো সবাই যাননি। কিন্তু কলকাতার রিসেপশনে আপনার চেনাশোনা সবাই থাকবেন। টেনশন হচ্ছে? নিজের শহরে রিসেপশন। অনেক গেস্ট…
আমার তুরস্ক নিয়ে বেশি টেনশন হচ্ছিল জানো। তুরস্কেও সব নিজের লোকজন ছিল কিন্তু জায়গাটা তো আমাদের কাছে অজানা। খালি প্রে করছিলাম, সব কিছু যেন সুষ্ঠুভাবে হয়ে যায়। সবার যেন শরীর ঠিক থাকে। সেখান থেকে কলকাতার রিসেপশন তো আমার নিজের শহরে। কোনও টেনশন নেই। সবাই আমাকে আর নিখিলকে আশীর্বাদ করতে আসবে, আমাদের দু’জনের কাছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর যারা আমার পাশে এতদিন ছিল, যাদের কাছ থেকে এত সাপোর্ট পেয়েছি, তাদের সঙ্গে যে দেখা হবে, এটা ভেবেই ভাল লাগছে। আমি তো কারও সঙ্গে দেখা করারই সময় পাইনি। ভাবতে পারছ, বিয়ের পর বুম্বাদার আশীর্বাদ এখনও নিতে পারিনি। আর একটা জিনিস বলি…
[আরও পড়ুন: ‘বাবার নাম জিতেন্দ্র হলে, তুলনা তো হবেই’, একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন তুষার কাপুর]
প্লিজ বলুন।
রিসেপশনের পুরো মেনু কিন্তু আমার সেট করা। বিরিয়ানি, চিংড়ি, ইলিশ। তুরস্কে আমরা ইন্ডিয়ান শেফ নিয়ে গেছিলাম কিন্তু ওখানে ঠিক কলকাতার বাঙালি বিয়েবাড়ির খাবার হয়নি। একটু লুচি, আলুর দম, ফিশ ফ্রাই না হলে কি আর বাঙালি বিয়েবাড়ি কমপ্লিট হয়? আচ্ছা, শুধু নন-ভেজ মেনু আমি সেট করেছি তা কিন্তু নয়।
ভেজ মেনুও আপনার সেট করা?
ইয়েস। নিখিলের বাড়ির মানুষজনের মেনুও আমি সেট করেছি। সুতরাং খাবারের সব রেসপন্সিবিলিটি আমার (হাসি)।
থ্যাংক ইউ সো মাচ নুসরত।
আরে কী যে বলো ইন্দ্রদা। খুব ভাল লাগল কথা বলে। আর রিসেপশনে তাড়াতাড়ি এসো, দেরি কোরো না।
The post ‘আই লাভ হিম লাইক ক্রেজি’! বর নিখিলকে নিয়ে মনের দরজা খুললেন নুসরত appeared first on Sangbad Pratidin.