মৌশাখী বোস: হাঁপানির জন্য পরিবেশ দূষণ, প্যাসিভ স্মোকিং পরোক্ষভাবে দায়ী৷ বছর কয়েক আগেও এর গতে বাঁধা চিকিৎসা ছিল৷ কিন্তু বর্তমানে অনেক নতুন ধরনের ওষুধ আসায় অ্যাজমার মোকাবিলা করা অনেক সহজ৷
অ্যাজমা কী?
অ্যাজমা বা হাঁপানি হল মূলত শ্বাসনালির অসুখ৷ মানবদেহের শ্বাসনালির মোট তিনটি অংশ– ব্রঙ্কাস, ব্রঙ্কিওল এবং টার্মিনাল ব্রঙ্কিওল৷ বিভিন্ন প্রকার উত্তেজনায় উদ্দীপিত হয়ে শ্বাসনালি অতি মাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং এর মধ্যে সর্দি জমে তা ব্লক হয়ে যায়৷ তখন নিশ্বাসের সমস্যা দেখা যায়, যা চিকিৎসার পরিভাষায় অ্যাজমা নামে পরিচিত৷
কারণ:
এর পিছনে মূলত দু’প্রকার কারণ থাকে–
অ্যালার্জিক ট্রিগার- ধুলো, পশু-পাখির লোম, তুলো, নির্দিষ্ট খাবার, আরশোলা, পরাগ রেণু প্রভৃতি যখন কারণ৷
নন অ্যালার্জিক ট্রিগার– ঠান্ডা লাগা, প্যাসিভ স্মোকিং (পরোক্ষ ধূমপান), ঋতু পরিবর্তন, দুশ্চিন্তা, সংক্রমণ৷
উপসর্গ:
• ঘুসঘুসে কাশি (রাতে বেশি করে)
• শ্বাসকষ্ট
• গলায় চুলকানি
• নাক দিয়ে জল পড়া
• চোখ চুলকানো
• ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা৷ (বিশেষ করে বর্ষা ও শীতকালে)
এছাড়া বড়দের ক্ষেত্রে–
• পা ফোলা
• হলুদ বা সবুজ সর্দি
• অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে যাওয়া
• সারা বছর একনাগাড়ে ঠান্ডা লেগে থাকা
শনাক্ত করতে টেস্ট:
চেস্ট এক্স-রে, অ্যালার্জি টেস্ট, পালমোনারি ফাংশন টেস্ট, প্রয়োজনে স্পুটাম বা থুথু পরীক্ষা৷
চিকিৎসা:
• অ্যাজমার আদর্শ চিকিৎসা হল স্টেরয়েড।
• শ্বাসনালির প্রদাহ বন্ধ করার জন্য মূলত অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটিভ মেডিসিন নেওয়া হয়৷
• সাধারণত অ্যাজমা রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা কাফ সিরাপ দেওয়া হয় না, কারণ এতে সর্দি বুকে জমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এছাড়া নিউমোনিয়াও হতে পারে৷ তাই ইনহেলার দিয়েই মূলত এর চিকিৎসা করা হয়৷
ইনহেলারের রকমফের:
• প্রিভেনটর ইনহেলার: শ্বাসনালির প্রদাহ এবং অ্যাজমা অ্যাটাক প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে এই প্রকার ইনহেলার ব্যবহার করা হয়৷
• রিলিভার ইনহেলার: অ্যাজমার যখন তীব্র অ্যাটাক আসে তখন এই প্রকার ইনহেলার দেওয়া হয়৷ প্রিভেনটর ইনহেলার যদি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করা হয় তাহলে রিলিভার ইনহেলারের সাধারণত প্রয়োজন পড়ে না৷
ইনহেলার আদর্শ কেন?
ইনহেলারে যে স্টেরয়েড ওষুধ থাকে তা সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছয়৷ ফলে দেহের অন্যান্য অংশে প্রভাব বিস্তার করতে পারে না৷ অথচ ওরাল মেডিসিন রক্তের মাধ্যমে সারা দেহে ছড়ায় যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইনহেলারের তুলনায় অনেক বেশি৷ এক্ষেত্রে যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি দেখা যায়–
• বুক ধড়ফড় করা
• উচ্চ রক্তচাপ
• হাত-পা কাঁপা
• হাইপার অ্যাকটিভিটি
• হার্ট রেট বৃদ্ধি পাওয়া
চিকিৎসার অগ্রগতি:
আগে অ্যাজমার চিকিৎসায় LABA, ICS এবং LAMA জাতীয় স্টেরয়েড ও ব্রঙ্কোডায়লেটর ব্যবহার করা হত৷ কিন্তু এখন Montelukast, Roflumilast এবং Seratrodast জাতীয় ওষুধ চলে আসায় চিকিৎসার মান অনেক উন্নত হয়েছে৷
সতর্কতা:
• বংশে অ্যাজমার ইতিহাস থাকলে ধূমপান একেবারে বন্ধ করতে হবে।
• বয়স্কদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত।
• অ্যালার্জিক ও নন-অ্যালার্জিক ট্রিগারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে।
• নিয়মিত শরীরচর্চা করা দরকার।
• ইনহেলার নেওয়ার সঠিক নিয়ম চিকিৎসকের কাছে জেনে নেওয়া।
• ইনহেলার নেওয়ার পর মুখ ভাল করে কুলকুচি করা।
• কোনও প্রকার শ্বাসকষ্ট হলে তা ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা৷
আরও জানতে পিয়ারলেস হসপিটালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট রেসপিরেটরি মেডিসিন ও অ্যালার্জি স্পেশালিস্ট ডা. সঞ্জয় গুপ্তকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9038755407। এছাড়া ক্লিক করে দেখে নিন epaper.sangbadpratidin.in
The post সিজন চেঞ্জের সময় হাঁপানি? এখনই সতর্ক হোন! appeared first on Sangbad Pratidin.