টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: শুধু মারধর নয়-ওন্দা হাইস্কুলের ক্লাসরুমে যা ঘটেছে, তা দেখলে রীতিমতো শিউরে উঠছেন সবাই। ফাঁকা বেঞ্চ, কালো বোর্ড আর চারদিকে বইখাতা ছড়ানো একটি ঘর। সেই ঘরের মাঝখানেই সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াকে ঘিরে ধরেছিল সহপাঠীদের একদল। তারপর শুরু হয় নৃশংস অত্যাচার। আক্রান্ত ছাত্রের নাক ফেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মেঝেয়। আর সেই মুহূর্তেই এক ছাত্রের হাতে মোবাইল বন্দি হল স্কুলের ক্লাসরুমের এই ভয়াবহ দৃশ্য। ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তুমুল আলোড়ন।
মঙ্গলবার সকালে স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে গিয়েছিল পড়ুয়া। কয়েকঘণ্টার মধ্যেই সে ক্লান্ত, রক্তাক্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে। পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি যে স্কুলের মধ্যেই এমন নৃশংস ঘটনা ঘটতে পারে। মাথা ঘোরা ও শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তেই তড়িঘড়ি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ওন্দা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন-আঘাত গুরুতর। আপাতত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাকে। এরপরেই বিস্ফোরণ। ভিডিওতে দেখা যায়, ছাত্রকে বেঞ্চের পাশে চেপে ধরে একের পর এক ঘুষি-লাথি মারছে কয়েকজন ছাত্র। কেউ চুল টানছে, কেউ থাপ্পড় মারছে, আর একজন ক্যামেরায় তা রেকর্ড করে হাসছে। ক্লাসরুমের ভিতর এমন পাশবিক ঘটনা দেখে অভিভাবকদের রীতিমতো রাগে ফেটে পড়ার অবস্থা। স্কুলের গেটে ভিড় জমা শুরু হয়। কেউ বলছেন, “এ স্কুলে বাচ্চারা কীভাবে নিরাপদ?” কেউ আবার প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, “ক্লাসরুমে শিক্ষকরা কোথায় ছিলেন?”
আন্দোলনের জেরে কার্যত টানটান উত্তেজনা স্কুলজুড়ে। অভিভাবকদের অভিযোগ, “নজরদারি বলতে কিছু নেই। অথচ কর্তৃপক্ষ কিচ্ছুটি শোনেনি। আজ তাই এই দশা।” চাপে পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষও। প্রধান শিক্ষক ফাল্গুনী মণ্ডল বুধবার দুপুরে স্বীকার করেন, “রণদীপের পরিবারের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ভিডিওটিও দেখেছি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর। দ্রুত পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে প্রশ্ন হল, যেখানে শিশুদের নিরাপত্তাই মুখ্য, সেখানে কীভাবে ক্লাসরুমের ভেতর এত দীর্ঘক্ষণ এমন নির্যাতন চলল? সিসিটিভি? দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক? কেউই কি টের পেলেন না? বিক্ষুব্ধ অভিভাবকদের কথায়, “আজ খুদে পড়ুয়া। কাল আরেকজন। স্কুলের ভেতরেই যদি সন্তানরা নিরাপদ না থাকে, তবে তাদের পাঠাব কোথায়?” এ প্রসঙ্গে কোনও সদুত্তর মেলেনি জেলা স্কুল শিক্ষা দপ্তরে। জেলা স্কুল পরিদর্শক পীযূষকান্তি বেরাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।"
