অর্ণব আইচ: ২৭ কোটি টাকা হাতিয়ে ১৪ কোটি টাকার বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। বাকি ১৩ কোটি টাকা ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে পাচার। গভীর রাতে মহারাষ্ট্রের সিরিডির একটি অভিজাত আবাসনে তল্লাশি চালিয়ে মুম্বইয়ের একটি কো অপারেটিভ সংস্থার চেয়ারম্যান বিজয় তুলসীরাম কোটেকে গ্রেপ্তার করলেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। এই প্রতারণা চক্রের বাকি দুই মাথা নরেশ মুন্দ্রা ও সুনীল আগরওয়াল ১৩ কোটি টাকা হাতিয়ে পলাতক, এমনই অভিযোগ গোয়েন্দা পুলিশের। তাঁদের সন্ধানে গোয়েন্দারা দেশের বিভিন্ন শহরে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মধ্য কলকাতার বউবাজার এলাকার একটি শেয়ার লগ্নি সংস্থার সঙ্গে মুম্বইয়ের ওই কো-অপারেটিভ সোসাইটির কর্তাদের পরিচয় হয়। গত জুলাইয়ে ওই সোসাইটির পক্ষ থেকে শেয়ার লগ্নি সংস্থাটিকে বলা হয়, সোসাইটির তহবিলে দেড় মাস টাকা রাখলে বিপুল টাকা ফেরত দেওয়া হবে। দেড় মাসের মধ্যে পুরো টাকা ফেরত পাবে কলকাতার সংস্থাটি। এর মধ্যে মুম্বইয়ের কো-অপারেটিভ সোসাইটির চেয়ারম্যান বিজয় তুলসীরাম কোটে সংস্থাটিকে এও বলেন যে, ১৫ কোটি টাকা তাঁদের কো-অপারেটিভে ফিক্স করে রাখলে আসল ছাড়াও ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে ওই শেয়ার সংস্থাটি গত ৩০ জুলাই থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েক দফায় ২৭ কোটি টাকা পাঠায়। কিন্তু নভেম্বরেও সেই টাকা ফেরত পায়নি বউবাজারের সংস্থাটি। মুম্বইয়ের সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার কর্তারা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।
পুলিশের কাছে সংস্থাটির অভিযোগ, বহু মানুষ বউবাজারের ওই সংস্থাটির মাধ্যমে শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন। তাই ওই হাতিয়ে নেওয়া পুরো টাকা জনগণের বলেই অভিযোগ। টাকার হদিশ না পেয়ে ওই সংস্থাটি বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ক্রমে এই মামলার তদন্তভার নেয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের স্পেশাল সেল। গোয়েন্দারা তদন্ত করে জানতে পারেন যে, মূল অভিযুক্ত তথা মুম্বইয়ের কো-অপারেটিভ সংস্থাটির চেয়ারম্যান বিজয় তুলসীরাম কোটে পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙা এলাকায় একটি অভিজাত বহুতল আবাসনে ১৪ কোটি ১৪ লাখ ৬৩৩৬ টাকা দিয়ে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন।
বউবাজারের ওই সংস্থার পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ সান্যাল জানান, পুলিশ ওই ফ্ল্যাটটি বাজেয়াপ্ত করার জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছে। পুলিশের অভিযোগ, ২৭ কোটি টাকার মধ্যে বাকি টাকা বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থার মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মহারাষ্ট্রে হানা দেওয়ার পর সিরিডির বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার ভোর তিনটে নাগাদ বিজয়কে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিজয়কে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। ধৃতকে জেরা করে বাকি দুই অভিযুক্তর সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
