সৌরভ মাজি, বর্ধমান: মা আছেন। দুই মেয়েও আছে। অসুরকেও ত্রিনয়নী বধ করেছেন। তবে এই চিত্রপটে দুই চরিত্র উল্লেখযোগ্যভাবে অনুপস্থিত। কালনার পাথুরিয়া মহলের পুজোয় নেই গণেশ ও কার্তিক।
[মেয়েকে পিঠে নিয়েই মণ্ডপে যাবেন বাগডোগরার ‘উমা’]
ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সব রীতি মেনেই পূজিতা হন মা দুর্গা। কিন্তু দশমীর পরে প্রতিমা বিসর্জন হয় না কালনার পাথুরিয়া মহলের পুজোয়। বদলে দশমীতে সুসজ্জিত কলাবউ শঙ্খ, ঘণ্টা, কাঁসর বাজিয়ে বাড়ির অদূরে পাথুরিয়া মহল ঘাটে ভাগীরথীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। তবে প্রতি ১২ বছর অন্তর দেবীর অঙ্গরাগ হয়ে থাকে। অর্থাৎ এক যুগ অন্তর নতুন প্রতিমা তৈরি করা হয়। তারপর সেই মূর্তিতেই টানা বারো বছর পুজো করা হয়। এছাড়া কোনও কারণে প্রতিমার কাঠামোয় কোনও খুঁত হলে নবকলেবর হয়। এখানে দেবী জয়দুর্গা রূপে পূজিতা হন। তবে দশভুজার সঙ্গে দুই সন্তান কার্তিক ও গণেশ থাকেন না। কেন দুই সন্তান নেই। এর ব্যাখ্যা হিসাবে পরিবার সূত্রে জানা যায় উমার স্বপ্নাদেশেই নাকি এমন নির্দেশ। মায়ের আদেশে এখানে দুই সন্তানের পুজো হয় না।
[প্রশাসনের উদ্যোগে পুজোর কেনাকাটা, হাসি ফুটল অনাথ বাচ্চাদের মুখে]
কালনা শহরে ভাগীরথীর তীরে এক সময় বণিকদের রমরমা ছিল। সময়ের সঙ্গে সেই কারবারে ভাটা পড়ে। প্রায় চারশো বছর আগে বণিক পরিবার কালনার ব্যবসা গুটিয়ে কলকাতার আড়িয়াদহে চলে যান। যাওয়ার আগে জয়দুর্গার নিত্যসেবার ভার তুলে দেন পরিবারের পুরোহিত রামধন মুখোপাধ্যায়ের হাতে। সেই থেকে এই মুখোপাধ্যায় পরিবার জয়দুর্গার আরাধনা করছেন এখানে। তারাই দেবীর নিত্যসেবার ব্যবস্থা করেন। পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য অমিত মুখোপাধ্যায়, সমিত মুখোপাধ্যায়রাও প্রতিবছর দেবীর পুজো করেন সাড়ম্বরেই। বর্তমান প্রজন্মের সদস্যদের কথায়, এক সময় বর্ধমানের মহারাজ পুজোয় অনুদান দিতেন। যদিও একশো বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। আগে বলিদান ও সন্ধিক্ষণে মৎস্য ভোগ দেওয়ার রীতি ছিল। প্রায় সত্তর বছর আগে বিভিন্ন কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বর্তমানে কলা, শশা ও চালকুমড়ো বলি দেওয়ার রীতি রয়েছে এবং দেবীকে নিরামিষ অন্নভোগ দেওয়া হয়। জয়দুর্গা বাড়ি হিসাবেই পরিচিতি পেয়েছে দেবীর মন্দির। যে পুজোকে নিজেদের ভেবে উৎসবে মাতেন স্থানীয়রাও।
ছবি: মোহন সাহা
The post কার্তিক-গণেশকে ছাড়াই এই পুজোয় আসেন উমা appeared first on Sangbad Pratidin.
