shono
Advertisement
Leopards

কোটশিলার সিমনিতে লেপার্ডের ঘরসংসার! শাবক থেকে পূর্ণবয়স্ক হয়ে ট্র্যাপ ক্যামেরায় জোড়া চিতাবাঘের সন্ধান

পুরুলিয়ায় একই সঙ্গে জোড়া চিতাবাঘের বিচরণের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া এই প্রথম।
Published By: Subhajit MandalPosted: 12:06 AM Jul 16, 2025Updated: 12:06 AM Jul 16, 2025

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বনাঞ্চল কোটশিলায় চিতাবাঘের ঘর-সংসার! এখন আর এ কথা মুখে মুখে ফেরা নয়। একেবারে ছবি-সহ হাতেনাতে প্রমাণ পেল পুরুলিয়া বনবিভাগ। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া দুই হৃষ্টপুষ্ট চিতাবাঘ খুনসুটিতে মত্ত। এবং তাদের বিচরণের ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে একেবারে নিজের জঙ্গলে নিরাপদে দিব্যি রয়েছে।

Advertisement

পুরুলিয়া বনবিভাগ ও বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা হিল সংস্থা থেকে প্রাপ্ত। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা ছবি।

বনমহল পুরুলিয়ায় একই সঙ্গে জোড়া তাও আবার পুরুষ-স্ত্রী চিতাবাঘের বিচরণের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া এই প্রথম। ওই জোড়া চিতাবাঘ ভাই-বোন। এক মায়ের সন্তান বলে জানিয়েছে পুরুলিয়া বনবিভাগ। বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, "যে ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে সেই জোড়া চিতাবাঘ পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পথে। প্রায় বছর তিনেক আগে এই কোটশিলা বনাঞ্চলে তাদের জন্ম হয়েছিল। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া ছবি সেই সঙ্গে পায়ের ছাপ ও গ্রামবাসীদের কথার ভিত্তিতে আমরা যা জানতে পেরেছি এই জোড়া চিতাবাঘের সঙ্গে তাদের মা-বাবাও রয়েছে। ফলে এই জঙ্গল চিতাবাঘের একেবারে ঘর-সংসার তা কার্যত প্রমান হয়ে গেলো। এবং এদের পিছু পিছু আরও দুটি চিতা এসে থাকতে পারে। এই কোটশিলার জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র উন্নত হওয়ার কারনেই বন্যপ্রাণ বাড়ছে।"

পুরুলিয়া বনবিভাগ ও বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা হিল সংস্থা থেকে প্রাপ্ত। ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা ছবি।

পুরুলিয়া বনবিভাগের কথায়, বছর তিনেক আগে এই বর্ষার মরশুমে এই কোটশিলা বনাঞ্চলের সিমনি বিটে একটি স্ত্রী চিতাবাঘ একাধিক শাবকের জন্ম দেয়। প্রথমে সেই শাবক এবং পরে সাব এডাল্ট হয়ে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরার পর পূর্ণবয়স্কের ছবি এই প্রথম। ২০২২ সালের আগে থেকে এই সিমনি বিট এলাকায় জঙ্গলে গিয়ে একের পর এক গবাদি পশুর মৃত্যু ঘটছিল। সেই গবাদি পশুর খুবলে খাওয়া মৃতদেহ দেখে বনদপ্তরের সন্দেহ হয়েছিল চিতাবাঘের হামলা। তারপর একের পর এক পায়ের ছাপ। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ চিতাবাঘের ছবি ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। তার কিছুদিন পরই আবার ধরা পড়ে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী চিতাবাঘের ছবিও। ২০২২-এ পরপর এই ছবিগুলি ধরার পর ২০২৩-এ শাবক এবং সাব এডাল্ট চিতার ছবি আসে বনদপ্তরের হাতে।

পুরুলিয়ার কোটশিলার বনাঞ্চলের সিমনি বিটের জঙ্গল। প্রতিদিন চিত্র।

২০২৪ সালের প্রথম দিকে এই চিতাবাঘগুলি একেবারে লোকালয়ে চলে আসতো। সিমনি বিট ছেড়ে পাশের নোয়াহাতু বিটের তাহেরবেড়া গ্রামেও চলে যেত। সেখানে গোয়াল ঘর থেকে গবাদি পশু টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও হয়। ফলে ওই এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়ে যায়। কোটশিলা বনাঞ্চল থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে মানুষজনকে সতর্ক করার পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানো হয়। আর তারপরেই প্রায় হঠাৎ করে চিতা বাঘের গতিবিধির খবর পাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

এবার পুরুলিয়া বনবিভাগের সঙ্গে জেলার বন্যপ্রাণ নিয়ে কাজ করা হিল নামে একটি সংস্থার ট্র্যাপ ক্যামেরায় ওই জোড়া চিতাবাঘের ভিডিও ধরা পড়ে। ওই সংস্থার সম্পাদক শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় বলেন, "কোটশিলার ওই সিমনি বনাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চিতাবাঘ রয়েছে। সেই চিতাবাঘ ক্ষতি করলেও সেখানকার মানুষজনই যাতে তাদের প্রতি সংবেদনশীল থাকেন। চিতাবাঘ হামলাটা তারা যাতে সহ্য করতে পারেন। সেজন্য আমরা একটা ক্ষতিপূরণের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য বন্যপ্রাণকে বাঁচিয়ে রাখা। সেই সঙ্গে মানুষ এবং বন্যপ্রাণ-র যাতে সহাবস্থান হয়।"

বণ্যপ্রাণ সুরক্ষায় পুরুলিয়া বন বিভাগের প্রচার পুরুলিয়ার কোটশিলা বনাঞ্চলে। ছবি: অমিতলাল সিং দেও।

সিমনি গ্রামের দুই বাসিন্দা বাইসু কিসকু ও পদক হেমব্রম বলেন, "চিতাবাঘের বাচ্চাগুলো যখন ছোট ছিল তখন পায়ের ছাপগুলোও ছিলো ছোট। এখন যে পায়ের ছাপ গুলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে তা বেশ বড়। বাচ্চাগুলো এখন বড় হয়ে গিয়েছে। আগে আমাদের গরু খেয়ে ফেলতো এখন সেই ঘটনা ঘটে না।" কেন? গ্রামবাসীদের কথায়, বোধহয় জঙ্গলে খাবার পেয়ে যায়। পুরুলিয়া বনবিভাগ বলছে ওই জঙ্গলে যেমন বন্য শূকর বেড়েছে তেমনই বেড়েছে হরিণের সংখ্যাও। জঙ্গলের ভিতরে চিতাবাঘের খাবারের অভাব নেই। সব মিলিয়ে চিতাবাঘের ঘর-সংসারে জঙ্গল সমৃদ্ধ। উন্নত জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বনাঞ্চল কোটশিলায় চিতাবাঘের ঘর-সংসার! এখন আর এ কথা মুখে মুখে ফেরা নয়।
  • একেবারে ছবি-সহ হাতেনাতে প্রমাণ পেল পুরুলিয়া বনবিভাগ।
  • ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়া দুই হৃষ্টপুষ্ট চিতাবাঘ খুনসুটিতে মত্ত।
Advertisement