গৌতম ব্রহ্ম: আত্মবিশ্বাস বাড়লে কী না হয়!
যে ছেলেমেয়েগুলির শয্যাশায়ী হয়ে মৃত্যুর পদধ্বনি শোনার কথা তারাই জীবনের জয়গান গাইছে। মঞ্চে উঠে জীবনমুখী নাটক করছে। অন্যদের আনন্দ দিচ্ছে।
কে বলবে এরা সবাই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত? কেউ হিমোফিলিয়া, কেউ থ্যালাসেমিয়া। রক্তের কঠিন ব্যাধি এদের জীবনীশক্তি কমিয়ে দিয়েছে। কমিয়ে দিয়েছে জীবনের গুণগত মান। প্রতি মাসে রক্ত দিতে হয় এদের। না হলেই চোখের সামনে ঘনিয়ে আসবে অন্ধকার।
এই ‘অভিশাপ’ মাথায় নিয়েই নতুন করে জীবনকে উপভোগ করছে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকশো থ্যালাসেমিয়া ও হিমোফিলিয়া রোগী। সৌজন্যে ‘খেরি’। এই সমাজসেবামূলক সাংস্কৃতিক সংস্থাই এই মুমূর্ষু রোগীদের নতুন করে বাঁচার পথ দেখিয়েছে। ‘খেরি’-র পৌরোহিত্যে এই শিশুরা নাটক করছে। সুকুমার রায়ের ‘রাজার অসুখ’। যার মূল দর্শন হল, মনে অসুখ বাসা বাধলে সারানো মুশকিল। মন চাঙ্গা রাখো। তাহলে কোনও রোগ কাবু করতে পারবে না। এতদিন এই নাটক হাসপাতালের চৌহদ্দির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার তা সমাজের বৃহত্তর পরিসরেও মঞ্চস্থ হতে চলেছে।
[ মুখ্যমন্ত্রীর গানে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর শপথ এ শহরের নির্ভয়াদের ]
নিমতার উত্তর প্রতাপগড়ে ‘বটতলা গোল্ডেন বয়েজ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন’ গণেশপুজোর আয়োজন করেছিল। ১৩ সেপ্টেম্বর থেকেই চলছে হরেক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল এনআরএসের ছেলেমেয়েরা। ১৬ সেপ্টেম্বর এদের নাটক সবার মন জয় করে নেয়। দুর্গাপুজোয়ও ‘কল শো’ এসেছে। গল্ফগ্রিন ফেজ ১ পুজো কমিটি ইতিমধ্যেই ‘খেরি’-র সম্পাদক ডা. প্রান্তর চক্রবর্তীকে চিঠি দিয়ে মহাষষ্ঠীতে নাটক মঞ্চস্থ করার অনুরোধ জানিয়েছে। প্রান্তরবাবু জানিয়েছেন, থ্যালাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়া রোগ ধরা পড়ার পর থেকেই পারিবারিক শোকপালন শুরু হয়ে যায়। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে শিশুরোগীদের মনে। রোগের সঙ্গে লড়াই অনেক কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু মনকে যদি চাঙ্গা রাখা যায় সব দিক থেকেই তা মঙ্গলময়। ডাক্তারদের কাজও অনেক সহজ হয়ে যায়। দীর্ঘ হয় জীবনরেখা। এই সব ভেবেই ‘খেরি’ শিশুরোগীদের নিয়ে ‘রাজার অসুখ’ তৈরি করেছে। শিশুরাও মন-প্রাণ ঢেলে অভিনয় করছে। অনেক পেশাদার শিল্পী লজ্জা পাবেন এদের ‘পারফরম্যান্স’ দেখে। আগে নিজেদের পকেট থেকে পয়সা খরচ করে অনুষ্ঠান করাতেন প্রান্তরবাবুরা। এখন পুজো কমিটিগুলো আলো-ধ্বনি ও যাতায়াতের খরচ দিচ্ছে।
খেরির উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মনোবিদরা। বিশিষ্ট মনোবিদ স্মিতা সিং জানালেন, “এখন তো অবসাদ প্রায় মহামারীর আকার নিয়েছে। সেখানে এই শিশুরোগীরা ভাল থাকার প্রেরণা। এই ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মধ্যে শিশুরোগীদের আরও বেশি করে যুক্ত করতে হবে।” খুশি ছেলেমেয়েরা। জানিয়েছে, “অনুষ্ঠান করার জন্য মানুষ আমাদের ডাকছে। আমাদের নাটক দেখতে চাইছে। এটাই তো ভাল থাকার বড় প্রেরণা।”
[ বাঁধন বড় আলগা, এই সময়ের কথন ‘বহুরূপী’র ‘রতন স্যর’ ]
The post ‘রাজার অসুখ’ সারাচ্ছে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শিশুরোগীরা appeared first on Sangbad Pratidin.