দীপঙ্কর মণ্ডল: মাধ্যমিকে আশাপ্রদ ফল হয়নি কলকাতার পড়ুয়াদের। সেই হতাশা যেন অনেকটাই মুছে দিল উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল। ষষ্ঠ স্থান পর্যন্ত রাজ্যের ১৩০ জনের প্রাপ্ত নম্বরের যে তালিকা পাওয়া গিয়েছে, তাতে জায়গা করে নিয়েছে মহানগরের অধিকাংশ পড়ুয়া। দশ জন ছাত্রছাত্রী শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। নব নালন্দা স্কুলের এবারের উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল প্রায় অবিশ্বাস্য। প্রথম ছয়ের তালিকায় এই স্কুলেরই তিনজন। শুক্রবার বিকেলে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর রাতে স্কুলের তরফে জানানো হয়েছে প্রথম দশের তালিকা ধরলে শুধু নব নালন্দা থেকেই আছে দশজন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) প্রত্যেক মেধাবীর বাড়িতে ফুল, মিষ্টি ও লিখিত শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।
খুশির মাঝেও কলকাতার এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের সেরাদের মধ্যে যেন খানিক বিষণ্ণতা। সকলেই বলছে, ”পরীক্ষা দিয়ে যদি নম্বর পেতাম, তাহলে বেশি ভাল লাগত।” বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের অংক পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা স্থগিত হয়। করোনা আবহে পরে তা বাতিল হয়ে যায়। মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই অংকে ১০০-এ ১০০ পেয়েছে। নিয়ম মেনে না হওয়া পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে ১০০ নম্বর দেওয়া হয়েছে তাদের। তবে এই নিয়ম রাজ্যের সবার জন্যই প্রযোজ্য। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে পরীক্ষা বাতিল হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: পাখির চোখ একুশের ভোট, রাজ্যবাসীর পরামর্শ নিতে নতুন ই-মেল আইডি চালু দিলীপের]
শাখাওয়াত মেমোরিয়াল সরকারি স্কুলের ছাত্রী স্রোতশ্রী রায় অন্যতম প্রথম। তার প্রতিক্রিয়া, “আমি নাচ, গান পারি না। ছবি আঁকতে পারিনা। শুধু পড়াশোনাটুকুই পারি। তাই মন দিয়ে পড়েছি। তবে এই ফল আমার কাছে অপ্রত্যাশিত। পরীক্ষা দিয়ে যদি নম্বর পেতাম তাহলে বেশি ভাল লাগতো। আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।”
অন্যদের সঙ্গে দ্বিতীয় গৌরব মাইতি যোধপুর পার্ক বয়েজের ছাত্র। তার বক্তব্য, “পরীক্ষা না দিয়ে যে নম্বর পেয়েছি তাতে একটু খচখচানি আছে। আমি চিকিৎসক হতে চাই।” সাইকিয়াট্রিস্ট হয়ে বিভিন্ন মানুষের মনের অসুখ সারাতে চায় যুগ্ম তৃতীয় সৈকত দাস। নব নালন্দার এই ছাত্রের কাছেও উচ্চমাধ্যমিকের ফল অপ্রত্যাশিত। সে বলছে, “খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি। কিন্তু পদার্থবিদ্যা এবং রসায়ন ১০০য় ১০০ হয়তো নাও পেতে পারতাম। আবার পেতেও পারতাম। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়ে যে যে নম্বর পেলাম তা ভাল লাগছে না।”
[আরও পড়ুন: কারা অনুমতি পেতে পারেন লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক ব্যবহারের? জানাল কলকাতা হাই কোর্ট]
৪৯৬ পেয়ে যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে আছে টাকি হাউস ফর বয়েজের শঙ্খদীপ ভট্টাচার্য। ৪৯৫ নম্বর পেয়ে অন্যদের সঙ্গে পঞ্চম স্থানে আছে হেয়ার স্কুলের অরুণসৌম্য বসু। ৪৯৪ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে কলকাতা থেকে আছে পাঁচজন। অন্ধ অ্যাসোসিয়েশন হাইস্কুলের ঋত্বিকা তিওয়ারি, স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েটের অংকন পাল, হলিচাইল্ড গার্লসের সোমদত্তা মজুমদার, নব নালন্দা হাইস্কুলের প্রিয়দীপ বসু এবং একই স্কুলের সৌষ্ঠব ভক্ত আছে ষষ্ঠ স্থানে। সর্বভারতীয় পরীক্ষা দিয়ে সবাই ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু একটি বিষয় সবাই একমত – পরীক্ষা দিয়ে নম্বর পেলে আরও আনন্দ হতো।
প্রথম ছয়ের তালিকায় নব নালন্দা স্কুলেরই তিনজন জায়গা করে নিয়েছে। এই স্কুলের প্রিন্সিপাল অরিজিৎ মিত্র জানিয়েছেন, “দশম স্থান পর্যন্ত র্যাংক ধরলে কলকাতা এবং শান্তিনিকেতন মিলিয়ে নব নালন্দার ১০ জনের নাম মেধা তালিকায় ঢুকে পড়েছে। স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষকদের পরিশ্রম এবং অবশ্যই ছাত্রছাত্রীদের অধ্যবসায় এই ফল এনে দিয়েছে। আমরা গর্বিত।”
The post মাধ্যমিকের গ্লানি ভুলিয়ে দিল উচ্চমাধ্যমিকের ফল, কৃতীদের ফুল-মিষ্টি পাঠিয়ে শুভেচ্ছা মমতার appeared first on Sangbad Pratidin.