রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: রোগ প্রকোপে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে লঙ্কা গাছ। কুঁকড়ে যাচ্ছে পাতা। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে লঙ্কা। বৃদ্ধি হচ্ছে না গাছের। যার জেরে কমছে ফলন। দীর্ঘদিন ধরে এমনই সমস্যায় ভুগছেন রাজ্যের লঙ্কা চাষিরা। কৃষক ও কৃষি দপ্তরের আধিকারিকদের ভাষায় লঙ্কা গাছের এই রোগকে ‘কুটে’ রোগ বলা হয়। এই রোগের প্রভূত সংক্রমণের জেরে বহু সময় ফলন একেবারেই হয়না। ফলে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। এই রোগের হাত থেকেই প্রতিকার পেতে লঙ্কা চাষে মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন উদ্যান পালন দপ্তরের আধিকারিকরা। মশারির মতো জালের ব্যবহারের মাধ্যমেই এই রোগ বর্তমানে কমছে। পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার ক্ষেত্রেও লঙ্কা গাছে এই রোগ লক্ষ করা গিয়েছে।
[আমের বিকল্প স্ট্রবেরি, অর্থলাভে নতুন দিশা মুর্শিদাবাদের কৃষকদের]
এই রোগ কীভাবে ছড়ায়? কৃষি দপ্তরের মতে, এই রোগ খুবই সংক্রামক। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে তা লঙ্কা গাছে ছড়িয়ে পরে। এক ধরণের সাদা মাছির জন্য এই ছড়ায় বলে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা গিয়েছে। এর ফলে লঙ্কা গাছের পাতা কুঁকড়ে যায়। পাতাগুলি অনেকটা কাঠের নৌকার আকার ধারণ করে। আবার কখনও একদম উলটো নৌকার মতো হয়ে যায়। তার ফলে ফলন মারাত্মক কমে যায়। এজন্য চাষিরা লঙ্কা চাষ করতেই ভয় পান। উদ্যান পালন দপ্তরের মতে, বর্তমানে এই রোগ লঙ্কা চাষের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক বছর যার মারাত্মক প্রভাব পড়েছে বাংলার কৃষিক্ষেত্রে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে চারা অবস্থা থেকেই গাছ বাঁচানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকটা প্রাণীদের মতোই লঙ্কা গাছের চারাগুলিকে আগলে রাখতে হবে মশারির জাল দিয়ে। যাতে চারা অবস্থাতেই বাইরে থেকে এই রোগের জীবাণু আক্রমণ না হয়। চারার সুস্বাস্থ্য হলে গাছও ভাল হবে। পোকা ও জীবাণুর আক্রমণও তুলনানমূলকভাবে কমবে। তাই চারা তৈরির সময় মশারির বা জালের ঘরে চারাগুলিকে বড় করতে হবে। এ সময় মাঝে মাঝে কীটনাশক স্প্রে করলেই এই রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমানো যাবে।
[বাড়িতেই করুন মাশরুম চাষ, জেনে নিন পদ্ধতি]
পদ্ধতি: জমি ভাল করে তৈরি করে নেওয়ার পর সারিবদ্ধভাবে লঙ্কা গাছের বীজ বসাতে হবে। তারপর চারা গজিয়ে ওঠা মাত্রই সেগুলির ভিতরে হাওয়া-বাতাস খেলতে পারে এমন নেটের মশারি দিয়ে ঘিরে ফেলতে হবে। মাথায় রাখতে হবে যে যে জমিতে চাষ করা হবে সেখানে অর্ধচন্দ্রাকারে ছাউনি তৈরি করতে হবে। সেই ছাউনি বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি করাই সমীচীন। সেই ঘরে ৪০ মেস যুক্ত জাল বা প্রতি এক সেন্টিমিটারে ৪০ টা করে ফুটো রয়েছে এমন জাল লাগাতে হবে। তাহলে সাদা মাছি এই গাছের চারার ক্ষতি করতে পারবে না। এর সঙ্গে ১৫ দিন অন্তর থায়োমিথস্কাম নামে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তাতেই অনেকাংশে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পরবর্তীকালে জমিতে গাছ লাগানোর পরও সেই একই ধরনের জাল দিয়ে প্রতিটি লঙ্কা গাছের উপর পাতলা আবরণ দিলেই গাছেও এই রোগের জীবাণুর সংক্রমণের ভয় থাকবে না।
The post চাষের কাঁচা লঙ্কায় পোকার আক্রমণ? এই উপায়েই পেতে পারেন নিস্তার appeared first on Sangbad Pratidin.