স্টাফ রিপোর্টার: 'টাক। টাক। টাক। টাক।' বেকেনহ্যামের কেন্ট কাউন্টি ক্রিকেট মাঠ থেকে একটানা আওয়াজটা আসছে। ব্যাটের সঙ্গে বলের সংঘর্ষের আওয়াজ। কখনও বল 'কাউ কর্নার' দিয়ে উড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটা লফটেড ড্রাইভ আবার ওয়াইড লং অফ দিয়ে ট্রেসার বুলেটের মতো ভীমগতিতে ধেয়ে গেল। শর্ট স্লিভ, সাদা টি শার্ট পরে যিনি ব্যাট করছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের তরুণ প্রজন্মের তিনি অন্যতম সেরা বিজ্ঞাপন। ধ্রুব জুরেল!
একটু পর ভারতের বোলিং কোচ মর্নি মর্কেল এলেন জুরেলকে বল করতে। কুড়ি গজ দূর থেকে ভারতীয় কিপার-ব্যাটারকে বল করতে শুরু করলেন মর্নি। স্টাম্পে যেমন বোলিং করছিলেন দীর্ঘদেহী প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকা পেসার। ঠিক তেমনই খুঁজছিলেন জুরেলের ব্যাটের খোঁচা। কিন্তু কিছুতেই কিছু লাভ হল না। তরুণ কিপার-ব্যাটারকে সামান্যতম বিপদেও ফেলা গেল না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দেশের মাঠে গত বছর যে জুরেল টেস্ট অভিষেকে সফল হয়েছিলেন, তার একটা বড় কারণ তাঁর টেকনিক। যে টেকনিক তাঁকে অনায়াস ছন্দে আক্রমণ ও ডিফেন্স করতে সাহায্য করে। যে টেকনিকের কারণে তাঁর ব্যাটিং দেখলে বড় আশ্বস্ত লাগে।
জুরেলের পিতা সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ভারতীয় সেনার ডাকাবুকো মনোভাব কোথাও গিয়ে জুরেলের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়েছে। যা তাঁর চাল-চলন, হাবভাব দেখলে বোঝা যায়। জুরেলের চিবুক কখনও ঝুঁকে থাকে না, শির কখনও নত থাকে না। হাঁটাচলাতেও একটা স্পষ্ট আত্মবিশ্বাসের ছাপ থাকে। তবু ইংল্যান্ড সফরে এলেও টেস্ট সিরিজের এ পর্যন্ত প্রথম একাদশে জায়গা হয়নি জুরেলের। মূলত, ঋষভ পন্থের কারণে। যাঁকে ছাড়া ভারতীয় টিম ভাবাই যায় না। তা ছাড়া চলতি ইংল্যান্ড সিরিজের স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন পন্থ। লিডস টেস্টে দু'ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। লর্ডসেও চোট পাওয়া আঙুল নিয়ে প্রথম ইনিংসে ৭৪ রান করে যান। কিন্তু যেহেতু তাঁর আঙুলে চোট রয়েছে, তাই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পন্থকে দিয়ে টানা কিপিং করানো হবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। লর্ডসে পন্থ চোট পাওয়ার পর কিপিং করছিলেন জুরেল। রবীন্দ্র জাদেজার বলে অলি পোপকে দুর্ধর্ষ ভাবে আউটও করেন স্টাম্পের পিছনে।
তা, বেকেনহ্যামে জুরেলকে দিয়ে একপ্রস্থ কিপিং করিয়ে রাখা হয়েছে। ব্যাটিংয়েরই মতো। আর রকমসকম যা, তাতে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে জুরেল-পন্থ দু'জনেই নেমে পড়লে, অবাক হওয়ার থাকবে না। সেক্ষেত্রে জুরেল কিপার-ব্যাটারের ভূমিকা পালন করবেন। আর পন্থ খেলবেন স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে। কিন্তু জুরেল এলে খেলবেন কার জায়গায়? তিনটে জায়গা। করুণ নায়ার। নীতীশ রেড্ডি। ওয়াশিংটন সুন্দর। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বল টার্ন করে ঐতিহাসিক ভাবে, তাই সুন্দরের বসার সম্ভাবনা কম। নীতীশ ব্যাট হাতে এখনও পর্যন্ত স্মরণীয় কিছু না করতে পারলেও লর্ডসে বল হাতে উইকেট নিয়েছেন। অতএব, স্লট একটাই। করুণ নায়ার। যিনি তিন টেস্টের ছ'ইনিংসে কিছুই করে উঠতে পারেননি।
