সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৃৎনির্মাণের মতো বসে আছেন তিনি। তাঁর সামনে পুত্রের কবর। নিষ্ঠুর হাওয়ায় মাঝেমাঝেই কাঁটা দিচ্ছে শরীরে। তবে বুঝতে হয়তো পারছেন না। খানিক পর সম্বিত ফিরতেই বলে উঠলেন, "আমি এখানেই থাকব। ছেলের সঙ্গে। কোথাও যাব না।" এমনই হাহাকার সন্তানহারা বাবার। আর সেই দৃশ্য ছেয়ে গিয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। এরপর যেন চোখের কোণে বর্ষা নেটিজেনদেরও।
এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল? এই তো সেদিন একসঙ্গে তাঁরা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে প্রথমবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হতে দেখেছেন। কিন্তু তারপর? সমস্ত কিছু তছনছ। যেন পৃথিবী ভেঙে পড়েছে তাঁদের পরিবারের উপর। ১৭ বছরের অপেক্ষার অবসানের পর আরসিবি শিরোপা জিতেছে। তাদের বিজয় সেলিব্রেশনে শামিল হতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ বছর বয়সি ভূমিক লক্ষ্মণ।
ভূমিকের প্রাণ ছিল ক্রিকেট। বিরাটকে ভালোবাসতেন। কে জানত, এই ভালোবাসাই এভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে! চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে যে ১১টা তরতাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছে, তার মধ্যে ভূমিক একজন। এমন ঘটনা যেন তাঁর পরিবারের কাছে চিরকালীন ক্ষতচিহ্ন। শোকে পাথর তাঁর বাবা বিটি লক্ষ্মণ। যেন বাকশক্তি হারিয়েছেন নিথর ছেলেকে দেখে। তাঁদের বসত কর্নাটকের হাসান জেলায়। সেখানেই কবর দেওয়া হয়েছে ফাইনাল ইয়ারের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ভূমিককে।
এমন মর্মান্তিক ঘটনার পর মনকে কি বশে রাখা যায়? ছেলের দাফন প্রক্রিয়া যখন সমাপ্ত, তখন ভূমিকের বাবা যেন নিজের মধ্যে ছিলেন না। কবরের উপর শুয়ে পড়ে নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠেন তিনি। আত্মীয়-পরিজনরা তাঁকে সরিয়ে আনতে যান। নাহ, টলানো যায়নি বিটি লক্ষ্মণকে। অগোছালোভাবে বলতে থাকেন, "আমার ছেলের সঙ্গে যা ঘটেছে তা যেন পৃথিবীর কোনও বাবাকে সহ্য করতে না হয়। আমি তো ওর জন্যই জমি কিনেছিলাম। সেখানেই ওর স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে উঠবে। ও আমার একমাত্র ছেলে। সেও আমাকে ছেড়ে চলে গেল!" ব্যথার তুলি বুলিয়ে কথাগুলি যেন বলে গেলেন ভূমিকের বাবা। রেখে গেলেন অজস্র কষ্ট। নাহ, এখানে সমবেদনা জানানোর মতো কোনও ভাষা থাকতে পারে না।
