অর্পণ দাস: হতে পারত মেসিময় অনুষ্ঠান। হয়ে গেল messy-ময়। অর্থাৎ চরম বিশৃঙ্খলা। হাজার হাজার টাকার টিকিট কেটে যুবভারতীতে লিওনেল মেসির 'টিকি'টিও দেখতে পাননি দর্শকরা। এ তো মাঠের বাইরের অবস্থা। মাঠের ভিতরেও কিন্তু পাল্লা দিয়ে বিশৃঙ্খলা চলেছে। যার সাক্ষী ছিলেন মাঠের ফুটবলাররা। মোহনবাগান ও ডায়মন্ডহারবার এফসি'র মধ্যে একটি প্রদর্শনী ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। হয়েছে ঠিকই, কিন্তু হাতে গোনা কয়েক মিনিট। আর সেখানেও চরম অব্যবস্থা। ঠিক কী সমস্যা হয়েছিল? সেই নিয়ে মুখ খুললেন মোহনবাগান মেসি অলস্টারের অধিনায়ক শিল্টন পাল ও ডায়মন্ড হারবার মেসি অলস্টারের ফুটবলার মেহতাব হোসেন। দু'জনেই আঙুল তুলছেন মূল উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তর দিকে। এ যেন বাংলার মুখ পুড়ল! কীভাবে গোটা পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেল, সেটাও জানাচ্ছেন দু'জন।
ঠিক ছিল মেসি আসার আগে দুই দল একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলবে। বাংলার প্রাক্তন ফুটবলারদের সমাগমে সেই ম্যাচ নিয়েও উন্মাদনা ছিল। সকাল দশটা নাগাদ মেহতাব হোসেন, শিল্টন পাল, রহিম নবি, অসীম বিশ্বাস, দীপেন্দু বিশ্বাস, সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তনীরা যুবভারতীতে অনুশীলন শুরু করেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁরা ভিতরে ঢুকে যান। ঠিক কী হচ্ছে? মাঠের দর্শকদের পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। অবশেষে তারা মাঠে ফেরেন প্রায় এগারোটা নাগাদ। সামান্য অনুশীলনের পর ম্যাচ শুরু হয়। মিনিট দশেকের প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের তখন মিনিট চারেক। সেই সময় মাঠে ঢোকেন মেসি। পুরো নজর তখন মেসির দিকে। আচমকাই ম্যাচ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্লেয়াররা লাইন দিয়ে মাঠের মাঝখানে দাঁড়ান। মেসি এসে প্লেয়ারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু তারপরই যত বিপত্তির শুরু। যার পুরো আঙুল উঠছে উদ্যোক্তা শতদ্রুর দিকে।
যুবভারতীর চেয়ার ভাঙছে ক্ষুব্ধ জনতা। নিজস্ব ছবি।
যা নিয়ে মোহনবাগান অলস্টারের অধিনায়ক শিল্টন তো বলেই দিলেন, "সারা বিশ্বে এই খবর ছড়িয়ে পড়ছে যে, আমাদের এখানে এরকম অবস্থা হল। সেটা আমাদের জন্য খুব দুর্ভাগ্যের। হাজার হাজার মানুষ বহু দূর থেকে মেসিকে দেখতে এসেছেন। একটা প্রত্যাশা তো থাকবেই। যুবভারতীর বেহাল অবস্থা দেখে খারাপ লাগছে। কিন্তু দর্শকদের কী দোষ? আমি তো বলব না, তাঁরা খারাপ কিছু করেছেন। সব মিলিয়ে পরিকল্পনা ভালো ছিল না। নাহলে যেভাবে আমাদের ম্যাচটা হয়েছে সেটাও অস্বস্তির। আমাদের প্রথমে মাঠে পাঠানো হল, তারপর নামিয়ে দেওয়া হল। এমনকী আমাদের ঠিকঠাক বসার জায়গা পর্যন্ত দেয়নি। আমাদের পুরোপুরি জানানোও হয়নি ঠিক কী ব্যবস্থাপনা রয়েছে।"
যুবভারতীতে মোহনবাগান মেসি অল স্টার দলের ফুটবলাররা। ছবি: পিন্টু প্রধান
সেটা পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই স্পষ্ট। মেসি মাত্র ২০ মিনিট মাঠে ছিলেন। তাও মূলত মাঠের মাঝখানে। গোটা স্টেডিয়াম পরিক্রমা করাতে পারলে হয়তো এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। আয়োজক-সহ অন্যান্যদের ভিড়ে এবং ছবির বায়নাক্কায় কার্যত ঢাকা পড়ে যান মেসি। হাসিমুখে গ্যালারির উদ্দেশে হাত নাড়লেও সেটা দেখতে পাননি দর্শক। ডায়মন্ড হারবার মেসি অল স্টার দলের ফুটবলার মেহতাবের বক্তব্য, "মেসি যে গাড়িতে ছিলেন, সেটায় তো সানরুফ ছিল। সেটা খুলে দিয়ে অনায়াসে মাঠে ঘোরানো যেত। সেটা হলে যুবভারতীতে এই পরিস্থিতি তৈরি হত না। মেসি একটা ব্র্যান্ড, সামনে বিশ্বকাপ আছে। তাঁর জন্য আলাদা নিরাপত্তা থাকা উচিত। তাঁকে ঘিরে এত এত লোক ঘিরে থাকলে সমস্যা হবেই। আমার তো মনে হল, মেসির মনে হচ্ছিল এখানে থাকলে পরিস্থিতি আরও বিগড়বে। তারপর যেভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি হল, তার সম্পূর্ণ দায় উদ্যোক্তাদের। যুবভারতীর অবস্থা দেখে খারাপ লাগলেও দর্শকদের কোনও দোষ নেই। উদ্যোক্তারা একেবারেই গোটা বিষয়টার গুরুত্ব বোঝেনি।"
এখানেই শেষ নয়। মেসির কাছে যেতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের কাছে কার্যত 'গলাধাক্কা' খেয়েছেন লালকমল ভৌমিক, সংগ্রাম মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন ফুটবলাররা। সেটাও তো বাংলার জন্য কম অপমানের নয়। হতাশ মেসিভক্তরাও, প্রিয় ফুটবলারকে এমন খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হল সিটি অফ জয় থেকে।
