shono
Advertisement

‘নাচনেওয়ালি’ মরেছে, তাতে কান্না পাবে কেন?

বিয়েবাড়িতে মদ খেয়ে নাচ হবে না, কোমরে বন্দুক থাকবে তবু জোশ দেখাব না-তাও আবার হয় নাকি? The post ‘নাচনেওয়ালি’ মরেছে, তাতে কান্না পাবে কেন? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 07:55 PM Dec 07, 2016Updated: 02:49 PM Dec 07, 2016

বিয়েবাড়িতে মদ খেয়ে নাচ হবে না, কোমরে বন্দুক থাকবে তবু জোশ দেখাব না-তাও আবার হয় নাকি? গুলি চালানো পর্যন্ত তো দেখাই গেল, কিন্তু আর যা যা দেখা গেল না, সেটাও বড় অপমানের৷ নিষ্ঠুর তবু ঘোর বাস্তবতা৷ লিখছেন দীপেন্দু পাল

Advertisement

বিয়েবাড়িতে এট্টু গুলি চলেছে, এতে এত হইহট্টগোল পাকানোর কী হয়েছে? আহা নাহয় মারাই গিয়েছে একটা মেয়ে, সেই মেয়েও তো আর ধোয়া তুলসীপাতা নয় রে বাবা! পেটে বাচ্চা নিয়ে নাচতে আসা কেন বাপু? আরে শোন ভায়া, আমন্ত্রিত অতিথিরা দু-চার পাত্তর গলায় ঢেলে নাহয় তোমার সঙ্গে একটু নাচতেই চেয়েছে, তাতে বাধা দেওয়া কেন? কী হত আর! নাহয়, একটু গলা-কোমর জড়িয়ে ধরে নাচত, একটু অন্ধকারে, ডিজে-র ঝিনচ্যাক আলো-আঁধারে গায়ে-টায়ে হাতই দিত৷ তাতেই বা আপত্তি কেন? ভাবটা এমন, যেন ‘মেয়েছেলেটা’ জানতই না এসব হবে! কী ভেবেছিল সে, মদ খেয়ে পুরুষসিংহরা তার মতো খাটো পোশাকের মেয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনৃত্য করবে? অন্ধকারে জানতে চাইবে, তুই এখন প্রেগন্যান্ট, শরীরের খেয়াল রাখছিস কি না? তুই জানিস না বুঝি, যাঁরা বিয়েতে নাচিয়ে ‘মেয়েছেলে’ ভাড়া করে, তাদের কারও কোমরে বন্দুক গোঁজা থাকতে পারে!

আরে বাবা যে তোকে ভাড়া করে এনেছে, যাঁর বিয়েতে তুই নাচছিস, তাঁর আমন্ত্রিত লোকেরা তোর মতো নাচিয়ে মেয়েছেলের গায়ে হাত দেবে না! তোর তো কপাল ভাল, নাচতে গিয়ে গুলি খেয়েছিস৷ অন্ধকারে ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে রেপ করে মেরে ফেললে? যেটুকু সিমপ্যাথি এখন পাচ্ছিস, সেটুকুও জুটত কপালে? তখন দেখতি, খবরের অ্যাঙ্গেলই ঘুরে যেত৷ বন্ধ ঘরের দরজার পিছনে কী ঘটেছিল, সেটা বলার জন্য তুই নিশ্চয়ই বেঁচে ফিরে আসতি না৷ তখন নাচিয়ে নয়, তোর গায়ে যৌনকর্মীর তকমা সেঁটে দেওয়া হত ঠিক৷

ভাগ্যিস তুই ধর্ষিতা হসনি৷ না হলে, ওই দুর্দান্ত ফুটেজ, ওভাবে নাচতে নাচতে হঠাৎ পড়ে যাওয়া ধরা পড়ত না ক্যামেরায়৷টাইট পোশাকে সুন্দরী এক মহিলার গুলি খাওয়া- প্রাইম-টাইমে বসার ঘরে গোটা দুদিন ধরে -ওই ছাড়া কোনও খবরই পাত্তা পেল না৷ সেই একই দৃশ্য- মঞ্চের সামনে হঠাৎ একটি বন্দুকের নল উঁকি মারল, তারপরেই গুড়ুম করে কান ফাটানো শব্দ, মুহূর্তের মধ্যে মঞ্চে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল৷ বড়জোর ৫ সেকেন্ডের দৃশ্য৷ কিন্তু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এডিটিং, মন্তাজের কারিকুরি, চড়া ডেসিবেলের ভয়েস ওভার- ওইটুকু ভিজুয়ালকেই ঘন্টাখানেকের খবর বানিয়ে দিচ্ছে৷ রোমাঞ্চ, যৌনতা, অপরাধ, অনুচ্চারিত টাকার দম্ভ- সবমিলিয়ে ওই ভিজুয়াল যে কোনও ক্রাইম থ্রিলারকেও হার মানায়৷

আর মিডিয়াকেও বলিহারি, আরে আমার পয়সা আছে, আমি মেয়ে নাচাবো৷ এতে এত আপত্তির কী আছে? তোমার কাছে পয়সা থাকলে তুমি বুঝি নাচাতে না! একে তো কালো টাকা হঠাও বলে একজন চিৎকার করছে দিনরাত৷ আরে এত টাকা রাতারাতি হোয়াইট করা মুখের কথা নাকি? ভিআইপি বন্ধুলোগ আছে আমার৷ সব পয়সাদার, মালদার পার্টি৷ শুধু দামী মদে তাঁদের মনোরঞ্জন হয় না৷ সঙ্গে লাগে একরত্তি মাংস, যত কম বয়সি মেয়ে হবে তত ভাল৷ বাচ্চা হলে তো কথাই নেই৷ তবে কী সেসবে আবার বাড়তি হ্যাঙ্গাম৷ পুলিশকে বেশি টাকা, মোবাইলের উপর আরও কড়া নজরদারি৷ ওই ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের জ্বালায় বন্ধ অডিটরিয়ামে মেয়েদের নাচিয়েও শান্তি নেই৷ ঠিক কেউ না কেউ ছবি ফাঁস করে দেবেই৷ যেমন ফাঁস হয়ে গিয়েছে, গুলি খাওয়া মেয়েটা প্রেগন্যান্ট ছিল৷ আচ্ছা, বিয়ে হচ্ছে, আমার ছেলে-মেয়ের জীবনে এত বড় একটা খুশির দিন, একটু হইহল্লা হবে না? আরে আমার যে টাকা আছে, সমাজে প্রভাব রয়েছে, পুলিশও যে আমাকে ডরায়- সেটা চাট্টি লোক না জানলে হবে? বেশ হয়েছে একটা ‘খারাপ মেয়ে’ গুলি খেয়েছে৷ মরে গেছেও তাতেই বা কী? বাচ্চা বিয়োনোর সময়ও তো মরে যেতে পারত! তখন কেউ মনে রাখত বুঝি? এসব মেয়েরা মেরে গেলে তাঁদের মা-বর-শাশুড়ি কেউই ভাল করে কাঁদে না৷ কারণ, যে মেয়ে পয়সা রোজগার করতে বাইরে যায়, সে তো লক্ষ্মী মেয়ে নয় রে বাবা! তাও আবার নেচে রোজগার? সে তো বেশ্যাগিরির শামিল৷ তাই একজন বেশ্যা মরলে কেউ কাঁদবে না৷ আমি জানি দুদিন চেঁচামেচি করে সব শিক্ষিত বাবুরাই থেমে যাবে৷ কোথাও কিছু বদলাবে না৷ এই তো আজই কোনও এক বিয়েবাড়িতে গুলি চালানোয় বছর কুড়ির একটা মেয়ে মারা গিয়েছে৷ তা নিয়ে আর হইচই কই! ভাবখানা এরকম, এমন তো আকছারই হয়৷ এটাই রেওয়াজ, এটাই রীতি৷ সংস্কৃতি কী শুধু শিক্ষিত বাবুরাই বোঝে, মধ্যবিত্ত সংস্কৃতির ভণিতা কি আমরাও বুঝি না! অতএব…

The post ‘নাচনেওয়ালি’ মরেছে, তাতে কান্না পাবে কেন? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement