জীবনবিমা-স্বাস্থ্যবিমার পর জিএসটি বসছে পপকর্নে! ক্ষুব্ধ মানুষের প্রশ্ন, এবার কি আলো-বাতাসের উপরও কর চাপবে? হঠাৎ পপকর্ন নিয়ে সরকারের এত মাথাব্যথা কি কোনও জরুরি বিষয় থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা?
পণ্যের উপর ‘পণ্য পরিষেবা কর’ বা জিএসটি নিয়ে বহু দিন থেকে নানা মহলে বিতর্ক চলছে। কর ফঁাকি ঠেকাতে এই ব্যবস্থা চালু হলেও আদতে তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, তেমনই বিভিন্ন পণ্যের উপর লাগু হওয়া জিএসটি হার নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ। যার সাম্প্রতিক সংযোজন পপকর্ন। অতি নিরীহ, সাদামাঠা, লোকপ্রিয় একটি খাবার। অবসর সময়ে বা সিনেমা হলে বসে হাতে পপকর্নের প্যাকেট নিয়ে মুখ চালায়নি, এমন মানুষ বিরল। সেই পপকর্ন এবার হঠাৎ আম আদমি ও সরকারের টানাপোড়েনের কেন্দ্রে। কারণ, এর একাধিক স্তরে জিএসটি হার।
লেব্লহীন, সাধারণ পপকর্নের উপর ধার্য হয়েছে ৫% জিএসটি। প্যাকেটজাত ও লেব্লযুক্ত ‘রেডি টু ইট পপকর্ন’ খেতে হবে ১২% জিএসটি দিয়ে। আর, ক্যারামেলাইজড পপকর্নের উপর ধার্য হয়েছে ১৮% জিএসটি! যার কারণ সাধারণ মানুষ ও নেটিজেনদের মগজে ঢুকছে না। তা নিয়ে বইছে মিমের বন্যা। ক্ষুব্ধ মানুষের প্রশ্ন, এবার কি আলো-বাতাসের উপরেও কর চাপাবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী?
প্রশ্ন ওঠা সংগত। এদিকে সিনেমা হলে প্যাকেটজাত পপকর্ন বিক্রি হয় না ফলে এর উপর ৫% জিএসটি ধার্য হওয়ার কথা। কিন্তু সিনেমার টিকিটের সঙ্গে পপকর্ন প্যাকেজ হিসাবে নেওয়া হয়, তাহলে তা কম্পোজিট সাপ্লাই। অর্থাৎ, টিকিটের হারেই জিএসটি লাগু হবে। তাই উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্য এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সরকার হঠাৎ পপকর্ন নিয়ে পড়ল কেন, সে প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। দেশে কি পণ্য কম পড়েছে? গত কয়েক মাস ধরেই বিমা শিল্প বেশ সংকটে। কারণ, জীবনবিমা ও স্বাস্থ্যবিমায় সরকার চড়া হারে পরিষেবা কর চালু করেছে। প্রিমিয়াম দিতে নাজেহাল চাকুরে, প্রবীণ, অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ মানুষ। এমনকী, সরকারি চাকুরে হয়েও অবস্থা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। অনেকে পলিসি চালাতে না পেরে বন্ধ করে দিচ্ছে।
তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দু’টি ক্ষেত্রে জিএসটি কমানোর দাবি উঠেছে। বহু রাজনৈতিক দল এ নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু কোনও অজানা কারণে বারবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পিছিয়ে যাচ্ছে। কেন? কার স্বার্থে? উত্তর নেই। সাধারণ মানুষের কাছে জীবনবিমা, স্বাস্থ্যবিমা জরুরি নাকি পপকর্নের প্যাকেট? পপকর্নে জিএসটি বাড়লে সরকারের কত কোটি টাকা বাড়তি আয় হবে? অন্য অনেক পণ্য ও পরিষেবা আছে, যেখানে জিএসটি বাড়ানো যায়। কিন্তু তা না করে হঠাৎ পপকর্ন নিয়ে সরকারের এত মাথাব্যথা কি কোনও জরুরি বিষয় থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা?
অতীতেও বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্কের সময় বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ছুটকো ইস্যু নিয়ে আসর গরম করেছে। তাই সন্দেহ হওয়া কি খুব অস্বাভাবিক? সরকারের উচিত, পপকর্ন নিয়ে ছেলেমানুষি ছেড়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ও পরিষেবায় জিএসটি কমিয়ে মানুষের দুর্ভোগ কমানো, জিএসটি ফঁাকি রুখতে কার্যকর পদক্ষেপ করা। না হলে প্রশ্ন উঠবেই এবং সরকারকে তার জবাবদিহিও করতে হবে।