সুইৎজারল্যান্ডে অবসাদের দাওয়াই হিসাবে শুরু হয়েছে ‘আর্ট অ্যান্ড নেচার থেরাপি’। ভারতেও এমন উদ্যোগ নেওয়া যায় না?

দুরন্ত কেরিয়ার, ঝাঁ-চকচকে লাইফস্টাইল, কেতাদুরস্ত ক্লাবের মেম্বারশিপ, মাসমাইনে কয়েক লক্ষ। আপাতভাবে ‘বেঞ্চমার্ক’ সাফল্য পাওয়ার পরও সম্প্রতি কলকাতার আইটি সংস্থার এক উচ্চপদস্থ কর্মী বেছে নিলেন আত্মহননের পথ। নানা কারণের মধ্যে প্রধান হিসাবে দর্শানো হচ্ছে– মানসিক অবসাদ। থেরাপি, কাউন্সেলিং, হবি তৈরি করা এমন নানা তত্ত্বকথা আওড়ালেও যে বা যারা এই সমস্যার ভুক্তভোগী, তারা জানে এই মানসিক স্থিতি কাটিয়ে ওঠা খুব সহজ নয়। শুধু তাই নয়, অবসাদের এই গ্রাস কিশোর থেকে বৃদ্ধ সবার মধে্য সমানভাবে চারিত।
২০১৯ সালে ‘ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন’ অফিশিয়াল বয়ানে জানায়, অবসাদ মহামারী হওয়াকে রুখে দিতে পারে শিল্পকলা ও প্রকৃতির সান্নিধ্য। কীভাবে? গবেষণায়
দেখা গিয়েছে মানসিক চাপ, অবসাদ, বিষণ্ণতা থেকে সাময়িক মুক্তি দিতে পারে প্রদর্শনী, জাদুঘর, বোটানিকাল গার্ডেনের মতো জায়গায় নিয়মিত সময় কাটালে। বলা হয় ‘it is essential for the wellbeing of humanity.’ তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই কোভিড অতিমারীর জেরে তা স্থগিত রাখতে হয়, অপর দিকে অসুস্থতা, মৃত্যু, ভোগান্তি, একাকিত্বের সঙ্গে জুঝে বহু মানুষ নতুন করে কবলে পড়ে মানসিক অবসাদের।
সম্প্রতি সুইৎজারল্যান্ডের নুশাট্ল শহরে একটি পাইলট প্রোজেক্টের মাধ্যমে ‘হু’ নির্দেশিত সেই পন্থাকে অবলম্বন করে উপকৃত সেখানকার বহু মানুষ। জানা গিয়েছে, ‘আর্ট অ্যান্ড নেচার থেরাপি’ বহু অবসাদগ্রস্ত মানুষের মনে মলমের মতো কাজ করছে। মোট চারটি জায়গায় ইতিমধ্যেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে হাজির হয়েছে ৫০০-র অধিক রোগী। ‘নুশাট্ল মিউজিয়াম অফ আর্ট অ্যান্ড হিস্ট্রি’ পরিদর্শনে আসা এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগিণীর বয়ান, ‘I think it brings a little light into the darkness.’ স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, ভারতেও তো মিউজিয়াম, বোটানিকাল গার্ডেন, প্রদর্শনীশালার অভাব নেই।
আমরাও কি এমন উদ্যোগ চাইলেই নিতে পারি না! পারি, তবে আশঙ্কা থেকে যায়, এই ‘ভাল হয়ে ওঠার পরিষেবা’ দেশের সব প্রান্তে, গাঁ-গঞ্জে পৌঁছবে তো! প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে প্রতি ২০ জনের একজন অবসাদগ্রস্ত। তার মধ্যে ডাক্তারের দ্বারস্থ হয় হাতেগোনা। দেশের সিংহভাগ অবসাদগ্রস্ত মানুষ সাময়িক মনখারাপ ও অবসাদের পার্থক্যটুকুও ঠাহর করে উঠতে পারে না।
বুঝলেও কার কাছে যাব– আরোগ্যের পথ অনিশ্চিত। যে-দেশে প্রসূতির মৃত্যু ঘটে অহরহ, যেখানে সামান্য অক্সিজেনের জন্য রোগীকে পিঠে করে বয়ে আনতে হয় মাইলের পর মাইল পথ, যে-দেশে বেশির ভাগের কাছে মানসিক রোগের সমার্থক ‘পাগল’, সেখানে মনোবিদ দেখানোই তো বিলাসিতা! আর্ট থেরাপি– ইউটোপিয়া।