নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জন মাওবাদীর। এর কারণ কি তাদের জনবিচ্ছিন্নতা ও আদর্শ থেকে সরে আসা?
ছত্তিশগড়ের আবুজমাধে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে ৩১ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। অতি বামপন্থী সক্রিয়তায় এটি নিঃসন্দেহে বড় ধাক্কা, যা গত কয়েক দশক ধরে মধ্য ও পূর্ব ভারতকে জর্জরিত করে রেখেছে। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সমর্থনে আধাসামরিক বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টা, অভিযান, আত্মসমর্পণ এবং লাগাতার চাপের মাধ্যমে মাওবাদী ঘাঁটিগুলি দু্র্বল হয়ে পড়েছে ঠিকই, তবে এইরকম ক্রমবর্ধমান ক্ষতি সত্ত্বেও মাওবাদীরা তাদের পুরনো ও অপ্রাসঙ্গিক আদর্শকে আঁকড়ে বসে আছে।
রাষ্ট্রের অবহেলা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভয়াবহ পরিস্থিতিকে পুঁজি করে মাওবাদীরা একসময় ভারতের প্রত্যন্ত উপজাতীয় অঞ্চলে শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং নৃশংস রাষ্ট্রীয় দমননীতি তাদের ইন্ধন জুগিয়েছিল। এর ফলে একটা সময় নিপীড়িতরা তাদের ‘পরিত্রাতা’ বলে ভাবতে শুরু করে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মাওবাদীরা অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার চেয়ে হিংসা ও সামরিকবাদকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় তাদের সেই ভাবমূর্তিটির ক্ষতি হয়েছে।
বলা যায়, সেই নিপীড়িতদের চোখের সামনে থেকে বিভ্রান্তির পর্দাটা সরে গিয়েছে। মাওবাদীরা সংকুচিত হতে হতে শেষ পর্যন্ত ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর-দান্তেওয়াড়া অঞ্চলে নিজের অস্তিত্ব জাগিয়ে রেখেছিল। এই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী সেই গড়ও চূর্ণ করে দিয়েছে। এটি শুধু তাদের অস্ত্র আস্ফালনের পরাজয় নয়, বরং একসময় তারা যাদের প্রতিনিধিত্ব করার দাবি করত, সেই শ্রেণি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। ফলে মাওবাদীরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেই কারণেই আবার নিরাপত্তা বাহিনী তাদের মাওবাদী-বিরোধী অভিযানে সাফল্য পেয়েছে। কয়েক দশকের গেরিলা যুদ্ধ, হিংসা দেখতে দেখতে তারা এখন ক্লান্ত। এটিও মাওবাদীদের একটি বড় ব্যর্থতা যে, তারা যাদের ‘স্বাধীন’ করতে চেয়েছিল, এখন তারাই তাদের আন্দোলনে ক্লান্ত।
সাম্প্রতিক এই ঘটনার অভিঘাতটি সম্ভবত মাওবাদীদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে স্পষ্ট নয় এখনও। তারা হয়তো তাদের ক্ষয়িষ্ণু শক্তি সম্পর্কেও সচেতন নয়। শান্তিপূর্ণ রাজনীতির মূলস্রোতের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে, তারা সশস্ত্র সংগ্রামে দ্বিগুণভাবে অগ্রসর হয়েছে। এই আদর্শগত অনড় মনোভাব কেবল তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করেনি, বরং তারা যে অঞ্চলগুলিকে রক্ষা করার দাবি করে, সেখানকার জনজীবনে দুর্ভোগ স্থায়ী করেছে।
ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর স্বার্থে, মাওবাদীদের অস্ত্র তুলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার সময় এসেছে। গঠনমূলক আলোচনা, রাজনৈতিক সমন্বয় এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মধ্যেই রয়েছে সামনের পথ। যেহেতু মাওবাদীরা ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে, তাই সরকারকেও উপজাতি জনগোষ্ঠীর চাহিদার প্রতি সজাগ এবং সংবেদনশীল হতে হবে, যাতে উন্নয়ন এবং ন্যায়বিচার পাশাপাশি চলতে পারে।