shono
Advertisement
Sonam Rajbongshi

সোনমের চলন বাঁকা, তবু নারীমাত্রই ছলনাবতী সাব্যস্ত হয় না

সম্প্রতি দেশ উত্তাল সোনম রাজবংশীর কুকীর্তি ঘিরে।
Published By: Kishore GhoshPosted: 09:39 PM Jun 16, 2025Updated: 09:39 PM Jun 16, 2025

সোনম রাজবংশী অপরাধী। কিন্তু এই একটি উদাহরণ এঁকে আমরা নারীমাত্রই ছলনাবতী ও বেওয়াফা, তা সাব্যস্ত করেত পারি না।

Advertisement

‘চেঁচাইছিলি কেনে?’ রাজামশাইয়ের প্রশ্নে গুপী অবাক হয়ে যায়। উত্তর দেয়, ‘আজ্ঞে, চেঁচাইনি তো! গান গাইছিলাম।’ রাজামশাই বলা বাহুল্য মনোযোগ দেন না। চলে যান পরের প্রশ্নে, ‘সপ্তক জানা আছে?’ ঘটনাচক্রে সাত সুর জানা ছিল গুপীর। তৃতীয় সুর কী? গুপী বলে, ‘গা’। ষষ্ঠ সুর? ‘ধা’। দুয়ে মিলে কী হয়? হতভম্ব গুপীর সামনে এরপর নেমে আসেন রাজার ফরমান, অমোঘ ও বিপজ্জনক। হুকুম হয়, গুপীকে গাধার পিঠে চাপিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়ার! তার সাধের তানপুরো অনেক আগেই রাজামশাই মাটিতে ছুড়ে বিচূর্ণ করেছিলেন। ফলে, কণ্ঠের বেসুরো গান সম্বল করেই গাঁ ছাড়ে গুপী।

কী ছিল তার অপরাধ? গাইতে চাইত? গান গেয়ে সুরের আকাশে রামধনুর আভা চিত্রায়িত করতে চাইত? ভোরবেলা সুর-বিচ্যুতভাবে গলা সেধে রাজামশাইয়ের কঁাচা ঘুম ভাঙিয়ে দিয়েছিল? না কি আদতে গুপী ছিল সরল, মারপ্যঁাচহীন মনের মানুষ? সেই কারণে এ-জগতের ঝকমারি ও ঝামেলা, সমাজের বিষ ও বেয়াক্কেলে মতিগতি ঠাহর করতে পারত না ভাল করে! গুপীর বেদনাবিধুর বিদায়-আখ্যানকে যেভাবে সত্যজিৎ রায় ‘গুগাবাবা’-য় বিধৃত করেছেন, তাকে ‘চরিত্রহনন’ কিংবা ‘ক্যারেকটার অ্যাসাসিনেশন’-এর একটি ধ্রুপদী দৃষ্টান্ত হিসাবে বিলক্ষণ উল্লেখ করা যায়।

‘যাকে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা’। ফলে কেউ যদি দোষ না-ও করে, তাকে গুরুদণ্ড দেওয়ার গুরুদায়িত্ব সমাজের মুরুব্বিরা চিরকাল নিয়ে এসেছে। ‘দ্য অ্যাপ্লায়েড সোশ্যাল থিওরি অফ ক্যারেক্টর অ্যাসাসিনেশন’-এর (ভলিউম ওয়ান) ভূমিকায় সম্পাদক তথা আমেরিকার জর্জ ম্যাসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সের্গেই এ. সামোইলেঙ্কো লিখছেন– ‘আ টাইমলেস ক্রস-কালচারাল ফেনোমেনন, ক্যারেকটার অ্যাসাসিনেশন হ্যাজ বিন অবজার্ভড বাই হিস্টোরিয়ান্‌স অ্যাজ অ্যান ইনস্ট্রুমেন্ট অফ প্রোপাগান্ডা, সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্স, অ্যান্ড কোয়েরসন ফর সেঞ্চুরিজ।’ অর্থাৎ ‘চরিত্রহনন’ হয়ে উঠতে পারে যে ধরনের কোনও উদ্দেশ্যসাধক এবং প্রচারমূলক আখ্যানের মোক্ষম অস্ত্র।

বিশেষত, এখনকার সোশ্যাল মিডিয়া অধ্যুষিত সময়ে কথার মাধ্যমে, ছবি প্রদর্শনের সূূত্রে খুব সহজেই ব্যক্তির আত্মসম্মানের নিলাম ঘটানো যায়। ভুল তথ্য, ভুল ব্যাখ্যা, ভুল পরিবেশনা এই উত্তর-সত্য যুগে যে কোনও ‘বিকৃত’ খবরকে করে তুলতে পারে চাঞ্চল্যকর। আর, প্রায় ক্ষেত্রেই, এর ফলে ‘চরিত্রহনন’ ঘটতে থাকে।

সম্প্রতি দেশ উত্তাল সোনম রাজবংশীর কুকীর্তি ঘিরে। প্রেমে সব জায়েজ– এ কথা মেনে নেওয়া যায় না। কাজেই যেভাবে নিজের প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে চক্রান্ত করে সোনম আপন স্বামীর প্রাণ নিয়েছে, তা সমর্থনযোগ্য নয়। বিচারে নিশ্চয়ই তার জন্য কঠোর সাজা অপেক্ষা করছে। কিন্তু সোনমকে সামনে রেখে যেভাবে মহিলা মাত্রেই ছলনাবতী ও কুচক্রী সাব্যস্ত করার সামাজিক বয়ান তৈরি হচ্ছে, তা নিন্দনীয়। এ ধরনের ‘চরিত্রহনন’ কাম্য নয়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কী ছিল তার অপরাধ? গাইতে চাইত?
  • সম্প্রতি দেশ উত্তাল সোনম রাজবংশীর কুকীর্তি ঘিরে।
Advertisement