ইংরেজিতে যথেষ্ট সাবলীল না হলে, মার্কিন মুলুকে ট্রাক চালানো যাবে না। ফরমান জারি হয়েছে। এর নেপথ্যেও কি রয়েছে রাজনীতি?
এবার মার্কিন মুলুকের ট্রাকচালকদের ইংরেজি শেখাতে তৎপর হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তঁার প্রশাসন আচমকা অতি-সক্রিয় হয়ে জানিয়েছে– মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনীতির পুষ্টিকরণে ট্রাকচালকদের সবিশেষ অবদান আছে। দেশের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও তঁারা ভূমিকা রাখেন। কাজেই ইংরেজি ভাষায় প্রত্যেককে দক্ষ হতে হবে। কেমন ‘দক্ষতা’ প্রত্যাশিত? এর উত্তরে হোয়াইট হাউস থেকে ফরমান এসেছে– যেসব ট্রাকচালক ‘পেশাদার’– তঁাদের ইংরেজি বুঝতে, বলতে ও পড়তে পারতে হবে। এই শর্ত ‘নন-নেগোশিয়েব্ল’, অর্থাৎ কোনও মূল্যেই এ নিয়মের নড়চড় হবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহণ দফতরের সচিব শন ডাফি এই আদেশনামা প্রসঙ্গে বলেছেন– “যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন খুব সহজবোধ্য। ইংরেজি পড়তে, বা বলতে, বা ইংরেজির ভাষায় জ্ঞাপিত কোনও সংকেতের পাঠোদ্ধার করতে যঁারা ব্যর্থ হবেন, সেসব ট্রাকচালকের কোনও যোগ্যতা নেই এই পেশায় থাকার। রাস্তাঘাটে এমন অনেক প্রয়োজন তৈরি হয়, যেখানে আমেরিকার জাতীয় ভাষাটি জানা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। তা হতে পারে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সঙ্গে সংযোগ করতে, বা হতে পারে অন্য মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য। ইংরেজি জানাটা তাই ‘কমনসেন্স’ বা সাধারণ জ্ঞানের পর্যায়ে পড়ছে।” ট্রাম্পের প্রশাসনের এইভাবে ইংরেজির হয়ে সওয়াল করার ধুম দেখে অনেকের মনে আবার অন্যতর সংশয় ঘনিয়েছে।
২০১৬ সালে ওবামা প্রশাসন স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিল যে, মার্কিন দেশে কমার্শিয়াল সার্ভিসের সঙ্গে যেসব চালক যুক্ত রয়েছেন, তঁাদের জন্য ইংরেজি জানা অপরিহার্য নয়। কাজেই পূর্বতন প্রেসিডেন্টের ভ্রম সংশোধনের পদক্ষেপ রূপেই আপাতত এই কর্মকাণ্ডকে দেখার একটি অভিমুখ তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের তরফে ইংরেজি জানার বাধ্যবাধকতা সরিয়ে নেওয়াকে ‘বিপজ্জনক’ পলিসি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং দেশকে একসুতোয় বঁাধার তাগিদে ট্রাম্প যতই জাতীয় স্বার্থরক্ষার প্রসঙ্গ তুলুন না কেন– আদপে কিন্তু প্রসঙ্গটি অরাজনৈতিক নয়।
তবে এই সিদ্ধান্তের ঘোরতর বিরোধিতা করেছে আমেরিকার একটি ‘শিখ উপদেষ্টা সংস্থা’। এখন মার্কিন দেশের ট্রাকিং ইন্ডাস্ট্রিতে দেড় লক্ষ শিখ নিযুক্ত রয়েছেন, যার ৯০ শতাংশ ট্রাকচালক। বিরোধিতা করছে যে শিখ উপদেষ্টা সংস্থা, তাদের অভিমত, ২০১৬ থেকে ’১৮ সালের মধ্যে ৩০ হাজার শিখ ট্রাকচালক ইন্ডাস্ট্রিতে যোগ দিয়েছেন, আর এঁদের অনেকেই ইংরেজিতে এখনও যথেষ্ট সাবলীল নন। তাহলে কি এর ফলে শিখ গোষ্ঠীতে এক ধরনের মতানৈক্য তৈরি হবে না? কারও চাকরি থাকবে, কারও চাকরি থাকবে না, এর নেপথ্যকারণ সাব্যস্ত হবে কেবল একটি ভাষা জানা বা না-জানা! ভাষাজ্ঞান আগে, না, কর্মসংস্থান– উঠছে সেই প্রশ্নও।
