মিউচুয়াল ফান্ড কোনও জাদুকাঠি নয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্বাধীনতার পথে এটি অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে বিনিয়োগ করলে সাধারণ লগ্নিকারীদের আর্থিক ভবিষ্যৎ সত্যিই উজ্জ্বল হতে পারে। লিখছেন দেবাশিস কর্মকার।
একদিকে যখন ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে সঞ্চয়ের সুদ ক্রমেই নিম্নমুখী, তখন অনেকেই শেয়ার বাজারে লগ্নির দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু শেয়ার বাজারের লগ্নিতে অনেক ঝুঁকি আছে। অভিজ্ঞ ব্রোকার ছাড়া শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ডোবাতে পারে বিনিয়োগকারীকে। কষ্টার্জিত টাকা যেতে পারে জলে। সেই কারণে শেয়ার বাজারে নবাগত লগ্নিকারীদের মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির পরামর্শই দেওয়া হয়ে থাকে।
এমন একটা প্রচার রয়েছে যে, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করলেই নিশ্চিত ‘লক্ষ্মীলাভ’! তবে একটু গভীরে গেলে বোঝা যায়— সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য ও সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তবেই মিউচুয়াল ফান্ড সাধারণ লগ্নিকারীদের জন্য সম্পদ গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিউচুয়াল ফান্ড কোনও জাদুকাঠি নয়। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্বাধীনতার পথে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
কোন বিষয়গুলির দিকে নজর রাখতে হবে?
প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল লক্ষ্য নির্ধারণ। আপনি কেন বিনিয়োগ করছেন— অবসরকালীন সঞ্চয়, সন্তানের পড়াশোনা, বাড়ি কেনা না কি শুধু সম্পদ বৃদ্ধি? লক্ষ্য পরিষ্কার না হলে সঠিক ফান্ড বাছাই করা কঠিন। লক্ষ্য অনুযায়ী বিনিয়োগের সময়সীমা ও ঝুঁকি নেওয়ার দিকটিও আলাদা হবে।
দ্বিতীয়ত, ঝুঁকি বোঝা অত্যন্ত জরুরি। ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডে ঝুঁকি বেশি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে রিটার্নের সম্ভাবনাও বেশি। আবার ডেট বা হাইব্রিড ফান্ড তুলনামূলক নিরাপদ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিজের বয়স, আয়, দায়িত্ব ও মানসিকভাবে ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা বিচার করে ফান্ড নির্বাচন করা উচিত। অল্প রিটার্ন হলেও রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারা অনেক সময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল SIP বা সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান। নিয়মিত অল্প অল্প করে বিনিয়োগ করলে বাজারের ওঠানামার প্রভাব অনেকটাই কমে যায়। SIP-এর মাধ্যমে ‘রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং’-এর সুবিধা মেলে, যা সাধারণ লগ্নিকারীদের জন্য অত্যন্ত লাভজনক। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার পড়লেও SIP বন্ধ না করে চালিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
চতুর্থত, ধৈর্য ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি। মিউচুয়াল ফান্ডে তাৎক্ষণিক লাভের আশা করলে হতাশ হতে হয়। ইতিহাস বলছে, ১০–১৫ বছরের দীর্ঘ সময়ে ইকুইটি ফান্ড ধৈর্যশীল লগ্নিকারীদের ভালো রিটার্ন দিয়েছে। বাজারের সাময়িক পতনে আতঙ্কিত হয়ে ফান্ড বিক্রি করাই সবচেয়ে বড় ভুল। লগ্নি চালিয়ে যেতে হবে।
পঞ্চমত, ডাইভার্সিফিকেশন বা বৈচিত্র। সব টাকা এক ধরনের ফান্ডে না রেখে ইকুইটি, ডেট ও হাইব্রিড ফান্ডে ভাগ করে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া নিয়মিত রিভিউ করা জরুরি, কিন্তু ঘনঘন ফান্ড বদলানো ঠিক নয়।
সবশেষে বলা যায়, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করলে ‘লক্ষ্মীলাভ’ সম্ভব। তবে তা আসে জ্ঞান, শৃঙ্খলা ও ধৈর্যের হাত ধরে। বিজ্ঞাপনের চকচকে রিটার্ন দেখে নয়, বরং নিজের প্রয়োজন বুঝে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে বিনিয়োগ করলে সাধারণ লগ্নিকারীদের আর্থিক ভবিষ্যৎ সত্যিই উজ্জ্বল হতে পারে।
