মহম্মদ ইউনুসের নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করাকে ভারত যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তা মোদির টুইট করে বিষয়টি প্রকাশ করা থেকেই স্পষ্ট।
গত ৯ আগস্ট বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথগ্রহণ করেছে। তার পাক্কা এক সপ্তাহ পর ইউনুস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করার সময় পেলেন। অথচ, মাস দুয়েক আগে মোদির প্রধানমন্ত্রী পদে তৃতীয়বার শপথগ্রহণের সময় নিজে হাজির ছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর, সেই সরকারের প্রধান কবে কাকে ফোন করলেন তা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
শপথ নেওয়ার পর সরকারের নয়া প্রধান প্রথম নিজের ঘনিষ্ঠ দেশের রাজনৈতিক প্রধানদের ফোন করেন। এটাই আন্তর্জাতিক কূটনীতির রীতি। নিকটতম প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে শপথের এক সপ্তাহ বাদে ফোন করে ইউনুস যা বার্তা দেওয়ার তা দিয়েছেন। অর্থাৎ, তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনার আমলে তাঁদের কাছে ভারত যতটা কাছের ছিল, এখন ভারতের অবস্থান সেই জায়গায় নেই। যদিও ইউনুস সরকারের বিদেশ নীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন কয়েক দিন আগে জানান, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট করতে রাজি নয়। দু’দেশের স্বার্থেই এই সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ।
[আরও পড়ুন: বারুইপুরে গ্রেপ্তার বাইক চুরি চক্রের ২ পান্ডা, উদ্ধার ৬টি বাইক]
শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ ছিল। বাংলাদেশের কোটা সংস্কারের দাবিতে হওয়া ছাত্র আন্দোলনে পরবর্তীকালে যুক্ত হয় বিএনপি ও জামাত। তাদের ভারত-বিরোধিতা সুবিদিত। হাসিনাকে (Sheikh Hasina) নিশানা করে সংগঠিত আন্দোলন ভারত-বিরোধিতার এক চরম রূপ দেখে। ভারতপ্রেমী হিসাবে এই আন্দোলনে আক্রান্ত হতে হয় ‘বঙ্গবন্ধু’ মুজিবুর রহমানকেও। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট শহিদ হন মুজিব। দিনটি এত দিন বাংলাদেশে ‘শহিদ দিবস’ হিসাবে পালিত হত। কিন্তু এবারই ১৫ আগস্ট সরকারের তরফে মুজিবকে স্মরণ করা হয়নি। জাতীয় শোক দিবসে ছুটিও বাতিল হয়।
এসব ঘটনা কখনওই ভারতের পক্ষে স্বস্তির নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় চিন যেভাবে তার প্রভাব বাড়াচ্ছে তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত রাখা ভারতেরও একটা দায়বদ্ধতা। এক দশক আগে ক্ষমতায় আসার পর মোদি সরকার ঘোষণা করে, তাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল সুর হবে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত দশ বছরে পড়শি দেশগুলিতে ভারত বিরোধিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
[আরও পড়ুন: ফের রেল দুর্ঘটনা রাঙাপানিতে, লাইনচ্যুত শিলিগুড়ি থেকে আসা মালগাড়ির দুটি বগি]
সম্প্রতি মালদ্বীপের ভারত বিরোধিতার কথা প্রত্যেকের জানা। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ধর্তব্যে না আনাই ভাল। গত ১০ বছরের নেপালেও এই প্রবণতা বেড়েছে। একই পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কাতে। একমাত্র ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউনুসের মোদিকে ফোন করাকে ভারত যে গুরুত্ব দিচ্ছে তা মোদির টুইট করে বিষয়টি প্রকাশ করা থেকেই স্পষ্ট।