পাকিস্তান যে সন্ত্রাসের আঁতুড়, তা এবার কি আর অস্বীকার করতে পারবে পড়শি দেশটি? যদিও কূটনৈতিক স্তরে এর সদুত্তরই আবিশ্ব চায়।
পহেলগঁাওয়ে ভয়াবহ জঙ্গি-হামলায় ২৫ জন পর্যটকের মৃত্যুর পর, ঘটনা পরম্পরায়, দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশ, ভারত ও পাকিস্তান, একে-অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-হুঙ্কার দিচ্ছে। অস্ত্রের প্রত্যক্ষ ঝনঝনানি এখনও শুরু হয়নি বটে, কিন্তু ওপারের মানুষকে যখন ঝিলম-বিতস্তার প্লাবনে ঘরবাড়ি ছাড়তে হচ্ছে, এপারে তখন সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা ঘর ছেড়ে বাঙ্কারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত। দু’টি দেশের রণং দেহি আস্ফালনে তাল মিলিয়ে দুই দেশেরই কিছু মানুষ যুদ্ধের জিগির তুলছে। কিন্তু এই যুদ্ধে যাদের ‘বিশেষ’ ভূমিকা থাকবে না, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারাই।
একটি মর্মান্তিক জঙ্গি-হামলার লেজুড় হয়ে সীমান্তের উভয় পাশেই ক্ষোভ এবং জাতীয়তাবাদী উচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। আগুনে বিবৃতি আসছে রাজনৈতিক নেতাদের থেকে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘চূড়ান্ত সমাধান’-এর দাবিতে উত্তাল, তীব্র প্রতিশোধস্পৃহ। অথচ সাধারণ মানুষ, যাদের সন্ত্রাসী-হামলার সঙ্গে যোগ নেই, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে তেমন সংলিপ্তিও নেই এবং জাতীয়তাবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষার জঁাকজমকে নেই অবদান– যুদ্ধ আরম্ভ হলে, তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বলা বাহুল্য।
পহেলগঁাওয়ে জঙ্গি-হামলায় ‘যোগ’ মেলার পরেও, পাক সরকার, বিরোধী দলের নেতৃবর্গ এবং পরিচিত ব্যক্তিত্বরা (সম্প্রতি ‘ভারত নিজেরাই হামলা চালিয়েছে’ মর্মে দাবি করেন প্রাক্তন পাক ক্রিকেটার শাহিদ আফ্রিদি) যেভাবে ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন– তা সেই ‘ঘৃণার ঐতিহ্য’রই প্রমাণ। তঁাদের এমন বৈরী মনোভাব উদারমনা পাকিস্তানিরা অস্বীকার করতে পারেন, কিন্তু মৌলবাদীদের তা উৎসাহ জোগায়। পাক-নেতাদের এমন ভারত-বিদ্বেষী মন্তব্যই পরোক্ষে ভারতের বুকে সন্ত্রাসে জঙ্গিদের অনুপ্রাণিত করে।
তবে ইতিহাস শেখায়, যুদ্ধ কখনওই তত গৌরবময় হতে পারে না, যতটা দেখানো হয়। ক্ষমতাহীন উলুখাগড়ার অশ্রু, রক্ত, ছিন্নভিন্ন জীবন-সংলাপের হাড়মাসে জড়িয়ে থাকে যুদ্ধের অভিঘাত। পহেলগঁাওয়ে যা ঘটেছে, তার জেরে প্রতিশোধের দাবি বোধগম্য। ভারতবাসীর ক্ষোভও ন্যায্য। তবে দৃঢ়তার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, তাতে পথ দেখাবে প্রজ্ঞা। এই মুহূর্তে সমগ্র জাতিকে যুদ্ধের আগুনে নিক্ষেপ না-করে একটি পরিমিত, কৌশলগত ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া দেখাতে হবে। আরও একটি নির্বোধ যুদ্ধ কোনও সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তা কেবলমাত্র আরও একটি প্রজন্মকে ক্ষতবিক্ষত করবে। যুদ্ধের আবহে
পাক-ভারত কূটনৈতিক সমস্যা তলানিতে। যা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু পাকিস্তানের কাছে আর হয়তো অস্বীকার করার অবকাশ রইল না যে, সন্ত্রাসের বৃদ্ধি ও বিকাশের অঁাতুড় রূপে তারা কত দূর সক্রিয়! কূটনৈতিকভাবে এর সদুত্তর ভারত প্রত্যাশা করে বইকি!
