shono
Advertisement

Breaking News

Shubhanshu Shukla

'তুমি না থাকলে...' শুভাংশুর মহাকাশ জয়ের রূপকথার 'রাজকন্যা' স্ত্রী কামনা

ধুলোবালির পৃথিবীতে এক চকিত রূপকথা।
Published By: Biswadip DeyPosted: 05:58 PM Jun 26, 2025Updated: 09:05 PM Jun 26, 2025

বিশ্বদীপ দে: এ যেন মুহূর্তের রূপকথা! মুখোমুখি তাঁরা। অথচ মাঝে কাচের দেওয়াল। যা বুঝিয়ে দিচ্ছে এই দূরত্ব আসলে মহাজাগতিক এক বিস্তারে যেতে চলেছে। ভারতীয় নভোচর শুভাংশু শুক্লা ও তাঁর স্ত্রী কামনার এই আশ্চর্য ছবি বুধবার থেকে যাকে বলে 'ভাইরাল'। কিন্তু ভাইরাল কথাটা এখানে কি আদৌ সঠিক ভাবে প্রযোজ্য হতে পারে? আধুনিক ইন্টারনেট যুগের তাৎক্ষণিকতা দিয়ে ওই ছবিকে বুঝতে পারব না আমরা। কেননা আড়াল যেখানে থেকেও নেই, পৃথিবী ও মহাকাশের দূরত্বও সেখানে কিস্যু নয়- আবেগের এই মহোৎসবকেই চিনিয়ে দিচ্ছে ছবিটা। অপেক্ষার এমন থরথর নির্মাণ মহাকাশ যাত্রার কাউন্ট ডাউনকে একেবারে অন্যতর এক মাত্রা দিয়ে তাকে আক্ষরিক অর্থেই অপার্থিব করে তুলছে। ধুলোবালির পৃথিবীতে এক চকিত রূপকথা।

Advertisement

বুধবার ভারতীয় সময় বেলা বারোটা নাগাদ গোটা দেশ উদ্বেল হয়ে পড়েছিল শুভাংশু শুক্লাকে নিয়ে। প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাড়ি দিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার গন্তব্যে পৌঁছেও গিয়েছেন। বুধবার বেলায় টিভির পর্দা থেকে মোবাইলের স্ক্রিন- ছেলের উৎক্ষেপণ সফল হতেই মা-বাবার হাততালি-চুমু-উচ্ছ্বাসও নজর এড়ায়নি কারও। কিন্তু আবেগের এক অন্যতর প্রকাশ স্ত্রী কামনা ও শুভাংশুর ওই দাঁড়িয়ে থাকায়। প্রোটোকলের কারণে ছোঁয়া যাবে না। তবু অন্তরীক্ষে পাড়ির আগে কাচের দেওয়ালের দুই পাড়ে দু'টি হাত পরস্পরকে ছুঁল। স্পর্শ নেই, তবুও স্পর্শের গভীরতার এমনতর ব্যাঞ্জনা চোখে পড়ে কই?

নিজের হাতের উলটো পিঠে মুখ গুঁজে থাকা কামনা কি কাঁদছিলেন? তাঁর চোখে কি অশ্রু এসেছিল? মনে পড়ে গুলজার, 'তুমহারি খুশক সি আঁখে ভালি নেহি লাগতি/ উও সারি চিজে জো তুমকো রুলায়ে, ভেজি হ্যায়।' তোমার এই শুকনো চোখ ভালো লাগে না। যা কিছু তোমাকে কাঁদায়, পাঠিয়েছি। প্রিয় নারীর চোখের জল সঙ্গে করে শুভাংশু উড়ে গিয়েছেন মহাকাশে। যাত্রাপথে, কিংবা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ভারহীন জগতে মাথার ভিতরে ঘাই মারবে সারা জীবনের যত মুহূর্তের কোলাজ। ছোট থেকেই আকাশে উড়তে চেয়েছিল ছোট্ট ছেলেটা। আকাশ নয়। আকাশের ওপারে থাকা মহাকাশ। কসমসের অনন্ত শূন্য তাকে স্বপ্ন দেখাত। মা-বাবার সাহায্যে সেই স্বপ্নকে আজ রক্তমাংসের বাস্তবে পরিণত করেছে সে। কিন্তু কেবল অভিভাবকরাই নন, এই স্বপ্ন নির্মাণে পাশে ছিল আরেকজন মানুষও। সেই কবে তৃতীয় শ্রেণিতে লখনউয়ের স্কুলে পড়তে গিয়ে আলাপ! বড় হয়ে একজন বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন। অন্যজন ডেন্টিস্ট। দুই থেকে তিন হয়েছেন তাও কয়েক বছর হল। কামনা-শুভাংশুর ছেলের বয়স এখন ছয়। এই দীর্ঘ সময়ে শুভাংশুর স্বপ্নের মহাকাশে কল্পযান ভাসিয়ে রেখেছেন কামনা। সেকথা মানেন শুভাংশুর মা আশা শুক্লা। জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলের পাশে এই মেয়েটির খাকাটাই যেন বদলে দিয়েছে সব কিছু।

মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার আগে লম্বা একটা নোট লিখেছেন শুভাংশু। সেখানে অনেককে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তাঁকে লিখতে দেখা গিয়েছে, 'বিশেষ ধন্যবাদ কামনাকে, এক সুন্দর সঙ্গী হওয়ার জন্য। তুমি না থাকলে এসব ঘটা সম্ভবই ছিল না। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল এত সব কিছুতে কিছুই যেত আসত না।' অর্থাৎ দ্বিতীয় ভারতীয় নভোচর হিসেবে মহাকাশযাত্রা কিংবা প্রথম ভারতীয় হিসেবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পা রাখার এই সব নজির তাঁকে আসলে স্পর্শই করত না কামনা পাশে না থাকলে। কিন্তু এই নোট, এই স্বীকারোক্তি বোধহয় দরকার ছিল না। মুখোমুখি দাঁড়ানো শুভাংশু-কামনার ওই ছবিই সবটা বলে দেয়। সবটা। তুমি আছ তাই... তুমি না থাকলে...

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • ভারতীয় নভোচর শুভাংশু শুক্লা ও তাঁর স্ত্রী কামনার এই আশ্চর্য ছবি বুধবার থেকে যাকে বলে 'ভাইরাল'।
  • কিন্তু ভাইরাল কথাটা এখানে কি আদৌ সঠিক ভাবে প্রযোজ্য হতে পারে?
  • আধুনিক ইন্টারনেট যুগের তাৎক্ষণিকতা দিয়ে ওই ছবিকে বুঝতে পারব না আমরা।
Advertisement