সন্দীপ্তা ভঞ্জ: আধুনিকতার পালে যতই হাওয়া লাগুক, ধর্ম নিয়ে হানাহানি আজ একবিংশ শতকে গিয়েও প্রাসঙ্গিক। গোটা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার টুকরো টুকরো ছবি কোলাজে ধরলেই তা স্পষ্ট হয়। ‘সাম্প্রদায়িক উগ্রতা’ যে একপ্রকারের সামাজিক বিষফোঁড়া, তা এই যুগেও মানতে কষ্ট হয় মনুষ্য নামক জীব গোষ্ঠীর একাংশের। তাই তো মৃত্যুপুরীর স্বপ্ন দেখে দাঙ্গাবাজ দৈত্যরা! পরিচালক শৈবাল মুখোপাধ্যায়ের ‘কুরবান’ও এরকমই এক প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে। যেখানে গ্রামের এক সাদামাটা ছেলের জেহাদি হয়ে ওঠার জেদের গল্প বলা হয়েছে।
গল্পে কোনও নতুনত্ব নেই। কারণ এযাবৎকাল একাধিকবার ভিন্ন ভাষায় ভিন্নভাবে এমন গল্প দর্শকদের প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সিনেমার ট্রিটমেন্টের মেরুদণ্ড কতটা শক্ত? তা আতসকাচের নিচে থাকা বাঞ্ছনীয়। শৈবাল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘কুরবান’-এর চিত্রনাট্য অনেকাংশে দুর্বল। গল্পের একাধিক প্লটে হিন্দু-মুসলিম কিংবা মেরুকরণের রাজনীতির কথা বোঝাতে চাইলেও দৃশ্যায়ণের ক্ষেত্রে আরেকটু জোড় দিলে ভালো হত।
সিনেমার সারপ্রাইজ এলিমেন্ট অবশ্যই অঙ্কুশের লুক এবং অভিনয়। তবে গ্রামবাংলার বাঙাল ভাষার উচ্চারণ অভিনেতার প্রতিটা সংলাপে স্পষ্ট নয়। ‘শিকারপুর’ সিরিজের পর অঙ্কুশের কাছ থেকে প্রত্যাশা আরও বেড়েছে। আশা করা যায়, লুক নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে সিনেমার বিষয়বস্তুতেও বাড়তি নজর দেবেন অভিনেতা। প্রসঙ্গত, এর আগে ‘অন্দরকাহিনি’ সিনেমায় গ্রামবাংলার মেয়ের চরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। ‘কুরবান’ ছবিতেও তার অন্যথা হয়নি। বরং ছবির অন্যান্য চরিত্রের তুলনায় তাঁর বাঙাল ভাষার উচ্চারণ যথাযথ।
[আরও পড়ুন: কালীপুজোর আবহেই গায়ে কাঁটা দেবে ‘পর্ণশবরীর শাপ’, দুরন্ত ‘ভাদুড়ি মশাই’ চিরঞ্জিৎ]
আজকের দিনে প্রাসঙ্গিক একটা বিষয়বস্তুর সিনেমার ট্রিটমেন্টে যদি আরও নতুনত্ব আনা যেত, তাহলে ‘কুরবান’ দেখতে বসে একঘেয়ে লাগত না! তবে সিনেমার বেশ কয়েকটি দৃশ্যের ফ্রেমকে ফটোগ্রাফিক ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। সেগুলো প্রশংসার দাবিদার। চিত্রনাট্য এতটাই আলগা যে, প্লটগুলো একসুতোয় গাঁথতে গিয়ে কী, কেন, কবে? সেই প্রশ্নের উত্তর বুঝতে দর্শককে বেগ পেতে হবে। উল্লেখ্য, স্টুডিওতে শুট করা গাড়ির দৃশ্যে ভিস্যুয়াল এফেক্ট (ক্রোমার) ব্যবহার বড্ড চোখে লাগে!
সিনেমার দৈর্ঘ্য আরেকটু কম হলে টানটান বিষয়টি বজায় থাকত। কাঞ্চন মল্লিকের চরিত্রটি গল্পের অন্যতম শেড হলেও খুবই দুর্বল ট্রিটমেন্ট। তবে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, সিনেমার দুটি গান ‘এক আঁজলা জ্যোৎস্না’ এবং ‘দূর দূর’ শুনতে মন্দ লাগেনি। তবে সমস্ত উপকরণ বিদ্যমান হলেও যথাযথ রান্নার অভাবে স্বাদ জমল না!