সুলয়া সিংহ: বলিউডের অন্যতম পছন্দের বিষয় ২৬/১১ মুম্বই জঙ্গি হামলা (Mumbai Terror Attack)। ছবি কিংবা ওয়েব সিরিজের তালিকা দেখলে তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার দরকার হয় না। তাই সেই ঘটনার তেরো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন চিত্রনাট্যের ভিত হিসেবে এই সন্ত্রাস হানাকেই বেছে নেওয়া হয়, তখন নিঃসন্দেহে তা পরিচালকের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে। পরিচালক নিখিল আডবানি এবং নিখিল গোঞ্জালেজ এই প্রেক্ষাপটকে অন্যরকম ভাবে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মন ভরাতে পারলেন কই! অধিক সন্ন্যাসীতে যেভাবে গাজন নষ্ট হয়, তেমনই অতিরিক্ত উত্তেজনায় ‘মুম্বই ডায়েরিজ ২৬/১১’ সিরিজটাই এক্কেবারে মাটি হয়ে গেল।
‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ ছবি কিংবা ‘কাফির’ মতো সিরিজে অভিনয় করা মোহিত রায়না (Mohit Raina), অভিনেত্রী কঙ্কনা শেনশর্মার মতো তারকাদের নিয়ে যে পরিচালকরা ভাল কিছু একটা উপহার দেবেন, তেমনটাই আশা করেছিলেন দর্শকরা। কিন্তু সে গুড়ে বালি। কারণ অবশ্য একটা নয়, একাধিক। এক এক করে বলি। টানটান চিত্রনাট্য ফুটিয়ে তুলতে ২৬/১১ পাক জঙ্গি হামলার বাস্তব ঘটনায় কল্পনার রং লাগিয়েছেন পরিচালক। মুম্বই জেনারেল হাসপাতালে জঙ্গিদের ঢুকে তাণ্ডব, সঙ্গীকে বাঁচানোর চেষ্টায় হাসপাতাল কর্মীর গায়ে বোমা বেঁধে দেওয়া, হাসপাতালের চিকিৎসকের উপর পুলিশের প্রাণরক্ষা না করে জঙ্গিকে বাঁচানো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বিষয়গুলি দেখে সেভাবে গায়ে কাঁটা দিল না। আতঙ্ক গ্রাস করল না।
[আরও পড়ুন: নুসরতকে ভুলে মডেলিংয়ে মজলেন নিখিল জৈন]
আসলে জঙ্গি হামলার মাঝেও চিকিৎসকরা ব্যস্ত থাকল ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা নিয়ে! নতুন চাকরিতে জয়েন করলে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে কি না, বাবা কেন মেয়েকে ভালবাসে না- এই সব আর কী। মাঝে মাঝে যখন মনে পড়ছে, জঙ্গিরা তো এলোপাথাড়ি গুলি চালাচ্ছে, তখন আবার ভয় পাচ্ছে তারা।
আরও একটা বিষয় বড়ই দৃষ্টিকটু। মুম্বইয়ের মতো এত বড় শহরকে এই সিরিজে দেখে মনে হতে পারে অতি মামুলি। এক মুম্বই জেনারেল হাসপাতাল ছাড়া রোগীদের আর কোনও গতি নেই। দুনিয়ার সমস্ত চোটগ্রস্তরা সেখানেই হাজির। বলতে পারেন, গল্পের স্বার্থে এমনটা হয়েছে। কিন্তু তাই বলে, যখন গোটা দেশ জেনে গিয়েছে, রাতে সেই হাসপাতালে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে, তার পরের দিনও সেখানে রোগী ভরতি হচ্ছে! আজব ব্যাপার।
এবার আসা যাক একটু ডাক্তারি কার্যকলাপে। অপারেশন থিয়েটার এখানে সবসময় ভরতি! অথচ সর্বসাকুল্যে খুঁজে পাওয়া গেল তিনজন চিকিৎসককে। জেনারেল ওয়ার্ডের ভিড়ের মাঝেই নির্দ্বিধায় অস্ত্রোপচার করছে তারা। এমনকী পুলিশের বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়েও রোগীর হার্ট সেলাই করতে সমস্যা হচ্ছে না! শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত রোগীদের সামনেই গলা ফাটিয়ে চিৎকারও করছে ডাক্তাররা। এ কীভাবে সম্ভব! বুঝে ওঠার আগেই দেখবেন ডাক্তার হিসেবে কাজে যোগ দিয়ে প্রথম দিনই তিন শিক্ষানবিশ হাসপাতালের অর্ধেকেরও কাজ করে ফেলছে। এমনকী, হাসপাতালের আনাচে-কানাচে সব চেয়ে তারা। তারা না থাকলে যে এত ‘নামী’ সরকারি হাসপাতালের কী হত, কে জানে বাবা!
অবাক হওয়ার এখানেই ইতি নয়, পরিচালক আরও রসদ জুগিয়েছেন। জঙ্গিদমনে পুলিশ, এনএসজির থেকে এখানে যেন সিরিজের চিকিৎসক, নার্স, হোটেলের কর্মীদেরই দায়িত্ববোধ বেশি। পুলিশ তো হাসপাতালকেই জেল হেফাজত বানিয়ে জঙ্গিকে মারধর শুরু করে দিল। একটা দৃশ্যে তো আবার জঙ্গির গলায় তার বোনের কথা শুনে করুণাও হয়! যাক গে। সব মিলিয়ে এ সিরিজ কোনও দিক থেকেই মনে দাগ কাটতে পারল না।
[আরও পড়ুন: এলোমেলো চুল, মুখ ভরতি দাড়ি, অতনু ঘোষের ‘শেষ পাতা’য় নতুন লুকে প্রসেনজিৎ]
চিত্রনাট্য নড়বড়ে হলে চরিত্রের কিছু করার থাকে না। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে মোহিত রায়না, কঙ্কনারা নিজেদের সেরাটাই দিয়েছেন। তবে জঙ্গি হামলা নিয়ে মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত, সরকারি হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতা, রোগীদের ওষুধ নিয়ে নাজেহাল অবস্থার দিকগুলো মন্দ নয়। যদিও তা আটটা পর্ব দেখে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়। তবে লস্করদের হামলা কীভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল মুম্বই, আর তারপরও প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে ভর করে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল স্বপ্নের নগরি, সেই স্মৃতিচারণা করতে আমাজন প্রাইমে এই সিরিজ একবার নাহয় দেখেই নেবেন। তবে দ্বিতীয় সিজনের জন্য অপেক্ষায় যে থাকবেন না, তা হলফ করে বলে দেওয়াই যায়।