সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঝাড়খণ্ডের রাঁচি থেকে হু হু করে শীতল হাওয়া ঢুকছে। বুধবার দুপুর থেকেই শুরু হয়েছে উত্তুরে হাওয়ার দাপট। পুরুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৮। যদিও সাধারণ প্রশাসনের তাপমাত্রা পরিমাপে যা আলিপুরে পাঠানো হয় তাতে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৮। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃহস্পতিবার বড়দিন থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও নামবে পাহাড়ি পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়ায় যা সর্বনিম্ন থাকে তার থেকে এক বা দু'ডিগ্রি বরাবর কম থাকে অযোধ্যা পাহাড়ে। তাই হাড়কাঁপুনি শীতে পুরুলিয়ার অযোধ্যার পর্যটনে বারবিকিউ ও বনফায়ার ফ্রি। সেই সঙ্গে বড়দিনের খানাপিনার মেনকোর্সেও চমক অযোধ্যা পাহাড়ে। গ্রামবাংলার ট্রাইবাল থালি যা ২৪ ডিসেম্বর বুধবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে। চলবে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। রাজ্য পর্যটন বিভাগের লিজপ্রাপ্ত রিসর্টে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার ফেস্টিভ্যালের জন্য এই জোড়া আয়োজন।
অযোধ্যা হিলটপের কচুরিরাখায় রাজ্য পর্যটন বিভাগের চার তারা রিসর্টে পর্যটক টানতে এই নজরকাড়া বন্দোবস্ত। প্রত্যেকটি কটেজ এবং রুমের জন্যই বারবিকিউ ও বনফায়ারের পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। শাল কাঠের আগুনে ঝাঁ চকচকে রিসর্টে বনফায়ারের আনন্দ। সেইসঙ্গে একেবারে পিকনিক মুডে বারবিকিউ। যা একেবারে নিজ হাতে করার সুযোগ। পর্যটন বিভাগের লিজ প্রাপ্ত ওই রিসর্টের জেনারেল ম্যানেজার সুদীপ্ত কুমার বলেন, "অযোধ্যা পাহাড়ে এখন ভীষণ ঠান্ডা। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচে রয়েছে। এই হাড়কাঁপুনি শীতে বড়দিন ও নতুন বছরকে মাথায় রেখে আমরা বারবিকিউ ও বনফায়ার ফ্রি দিচ্ছি। কোন রুম বুকিং করলেই বারবিকিউ এবং বনফায়ারের সুযোগ পাচ্ছেন পর্যটকরা। এই দু'টি ইভেন্ট ২৪ শে ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। থাকবে একেবারে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।"
কী রয়েছে গ্রামবাংলার ট্রাইবাল থালিতে? প্রথমেই রাজবাড়ির হাজারদুয়ারির সরবত। এবং তা পরিবেশন করা হচ্ছে একেবারে মাটির গ্লাসে। যারা পরিবেশন করছেন তারা একেবারে জনজাতির পোশাকের স্টাইলে। কাঁসার থালা, বাটি, গ্লাসে। মেন কোর্স শুরু হচ্ছে গ্রিন স্যালাড, গন্ধরাজ লেবু ও লঙ্কা, নারকেল পোস্ত বড়া, বেগুন ভাজা, শাক ভাজা, পাঁপড় ভাজা, ধনেপাতা বাটা, মিষ্টি কুমড়ো ভর্তা, মরিচ- পোস্ত বন আলু ভাজা, পাহাড়ের গন্ধের মসুর ডাল, বনের খোসা পোস্ত চচ্চড়ি, পাহাড়ের আলু চাপলি তরকারি, পটল চিংড়ি, রুই মাছের টক ঝাল, পালক- পাতা মুরগি বনকসা দিয়ে। সঙ্গে কালো চালের ভাত। এছাড়া টমেটো চাটনি, নলেন গুড় রাজভোগ, নলেন গুড়ের জলভরা, অগ্নি পোড়া ভাপা দই। এই ট্রাইবাল ভেজ থালির দাম ৫৪৯ টাকা। নন ভেজ ৬৯৯। আলাকার্ট নিতে হলে শালপাতা পোড়া চিকেন, বাঁশভরা গহনা মাংস বিরিয়ানি, পোড়া হাঁড়ির দেশি মুরগি সেইসঙ্গে ঝিল পাড়ের গুগলির ঝাল। সাধারণভাবে জনজাতির মানুষজন যেভাবে খাওয়া-দাওয়া করেন গ্রাম বাংলার ট্রাইবাল থালিতে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। ওই জেনারেল ম্যানেজার বলেন, "আমরা কয়েক বছর ধরেই বড়দিনে এই গ্রাম বাংলার ট্রাইবাল থালি করছি। কিন্তু এবারে থালিতে আরও বেশি পরিমাণে মাটির গন্ধ রয়েছে।" সেই কারণে এই থালি পেতে রীতিমতো বুকিংও চলছে ওই রিসোর্ট-এ। ওখানে থাকা পর্যটকদের পাশাপাশি স্রেফ ওই থালিতে লাঞ্চ করতেই আগেভাগে সিট বুক চলছে।
