নব্যেন্দু হাজরা: ভালবাসা কি শুধুই প্লেটোনিক? নাকি ভালবাসা এখন অন্য কিছুও চায়। অন্তত ভালবাসার দিনে আট বাই দশ ফুটের একটা ঘরে যদি কয়েক ঘণ্টা কাটানো যায় দু’জনে। একান্তে! ভালবাসার দিনের জন্য ঘণ্টায় ঘণ্টায় দর বাড়ছে এক চিলতে ঘরের। সোমবার সকালে যে রুম ছিল ১৩০০ টাকা। বিকেলে তারই দাম চড়ল ১৮০০। ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে ‘গোপনীয়তা’র চাহিদা তুঙ্গে। অনলাইন হোটেল বুকিং অ্যাপের দৌলতে একান্তযাপন এখন হাতের মুঠোয়। তাই মুঠোফোনে হাত বুলিয়ে সবার চোখের আড়ালে বন্ধ ঘরে প্রেমদিবস কাটাতে যেন বেশি স্বাচ্ছন্দ্য জেন ওয়াই। যে কারণে বিভিন্ন সংস্থার খোলা এই হোটেল বুকিং অ্যাপ মাঝে মধ্যেই সাময়িক হ্যাংও হয়ে যায় সোমবার বিকেলের পর।
পার্ক বা রেস্তরাঁ নয়, শহর থেকে শহরতলি, জেলার আনাচ-কানাচ, সিংহভাগ যুগল চাইছে দরজায় খিল তুলতে। সঙ্গে একটা পরিচয়পত্র থাকলেই কেল্লাফতে। অ্যাপ ডাউনলোডের পর অনলাইনে নিজের নাম, ফোন নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নাও। সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে চলে আসবে কী কী করতে হবে আপনাকে। তারপর পছন্দমতো জায়গার নাম দিয়ে ঘর সার্চ করা। আর তা হলেই নিরালায় নিভৃতে কয়েক ঘণ্টা কাটানো যাবে মনের মানুষের সঙ্গে।
‘‘অন্যদিনে ঘর মিললেও ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্য হাই ডিমান্ড। এই দিনের ঘর এক সপ্তাহ আগে থেকেই বুক হয়ে রয়েছে। কয়েকটা ঘর আমরা আটকে রেখেছিলাম। সেগুলো এখন চড়া দামে ছাড়া হচ্ছে। আসলে যারা আগেভাগে একঘরে থাকার প্ল্যান করেননি, তাঁদেরই এখন বেশি দাম দিয়ে বুক করতে হচ্ছে।’’ বলছিলেন রায়চকের এক হোটেলের মালিক।
[আরও পড়ুন: ‘জীবনে উঁচুতে উঠতে প্রেমে পড়তে হয়’ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালবাসার পাঠ কঙ্গনা রানাউতের]
বান্ধবীর জন্য গোলাপ, দামি চকোলেট, রাংতায় মোড়া গিফট, আর পকেট ভারী হলে সোনা বা হীরের লকেট, আংটি। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমিকার চোখে চোখ রাখতে উপহারের ডালি সাজানো হয়ে আসছে বছর কয়েক ধরে। কিন্তু ট্রেন্ড বদলেছে। আর তাই বদলেছে বিশেষ দিনের চাহিদাও। সেকথা মাথায় রেখে হোটেলের ঘরে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে অফারও। যেমনটা সোনার গয়নার মজুরিতে নানান অফার, তেমনই ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে কোনও কোনও জায়গার হোটেলের ঘরেও আকর্ষণীয় ছাড়। একটু দামি ঘরে ঢুকলে লাঞ্চ বা ডিনার কমপ্লিমেন্টারি। প্রেমিকার জন্য হরেক কিসিমের ভালবাসার উপকরণ দিয়ে সাজানো থাকবে ঘর । রাখা থাকবে কেক-পেস্ট্রি। রায়চক, ডায়মন্ডহারবার, বকখালি, মন্দারমণি ছাড়াও যে এ শহর-শহরতলিতে চার দেওয়ালের ভিতরে বান্ধবীকে একটু ‘আদর’ করা যায়, তা এখন বিলক্ষণ জানে তরুণ প্রজন্ম। তাই তো হোটেলের ঘর বুকিংয়ে স্ক্রিনশট পাঠিয়ে সোমবার রাতে সারপ্রাইজ গিফটটা তানিয়াকে দিয়ে দিল সন্তোষপুরের রূপ। যা দেখে হোয়াটসঅ্যাপে চুমুর স্মাইলি পাঠিয়েছে বান্ধবী। তাতেই দিল ধড়কনে দো রূপের।
তবে এর বাইরেও জগৎ আছে। এর বাইরেও প্রেম আছে। তা সোমবার বোঝা গেল নিউ মার্কেটে যেতেই। গিফটের পসরায় সেজেছে দোকান। যা কেনার হুড়োহুড়িও রয়েছে স্কুলপড়ুয়া থেকে সদ্য চাকরি পাওয়া অফিসবাবুর। মনের মানুষকে ভালবাসার দিনে ছোট্ট উপহার তুলে দিয়ে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টা। সেজে উঠেছে রেস্তরাঁ, ক্যাফেগুলোও। ভ্যালেন্টাইনস ডে স্পেশাল ডিশ। তবে এসব নিয়ে খুব বেশি মুখ খুলতে নারাজ হোটেল মালিকরা। হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়শন অফ ইস্টার্ন রিজিওনের সভাপতি সুদেশ পোদ্দার বলেন, ‘‘কোনও পার্টিকুলার ডেটের বুকিং নিয়ে কোনও হোটেল সঠিক তথ্য জানায় না। বছর শেষে রিপোর্ট দেয়। ফলে বলা সম্ভব নয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি কত বুকিং হল! বুকিং অ্যাপের আওতায় যে হোটেল আছে, তারাই বলতে পারবে।’’