সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ২২ মার্চ অকস্মাৎ দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে তরতরিয়ে বেড়েছে নারীর প্রতি গার্হস্থ্য হিংসার প্রকোপ। ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন’ (National Commission for Women)-এর তথ্যানুযায়ী, লকডাউনের এক সপ্তাহও গড়ায়নি, শুধুমাত্র মেল মারফত গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ এসেছে ৫৮টি। চিঠি মারফত তারও বেশি, তাও লকডাউনের যোগাযোগহীনতার কারণে কিছু কম। মেল মারফত অভিযোগের সংখ্যাটি আপাত দৃষ্টিতে কম মনে হলেও এক সপ্তাহের নিরিখে এই সংখ্যাটি উদ্বেগজনক। ‘এনসিডব্লিউ’-এর চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা জানান, মেল মারফত জানানোর মতো সুবিধাপ্রাপ্ত নারী এদেশে কজনই বা। সমাজের নিচের স্তরে, এমন অগণিত মহিলা রয়েছেন, যাঁদের এই সুযোগটুকু নেই। তাই এই ৫৮ সংখ্যাটি কিছুই নয়। গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজস্থানের এক কন্যার বাবাও। ওই ব্যক্তির অভিযোগ, লকডাউনের পর থেকে তাঁর মেয়েকে খেতে দেয়নি তার শ্বশুরবাড়ির লোক, উপর্যুপরি চালিয়েছে শারীরিক অত্যাচার।
লকডাউন মানেই, এ যেন অনুমোদিত রূপে নারীর বন্দিদশা, বিশেষত যাঁদের সঙ্গী স্বভাব-চরিত্রে গার্হস্থ্য অত্যাচারী। বাড়িতে বসে থেকে থেকে বিরক্ত স্বামী বা পুরুষ সঙ্গীরা সমস্ত হতাশা গিয়ে ফেলছে স্ত্রী, সঙ্গিনীদের উপর। করোনা আতঙ্কের এই সময়ে স্ত্রী শুধু বারবার হাত ধোয়া এবং ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে সচেতন ও ‘খিটখিট’ করেছেন বলে তামাম হেনস্তার শিকার হচ্ছেন স্বামীর কাছে। দেশজুড়ে আরও বিভিন্ন ‘নারী অধিকার’ সংক্রান্ত সংস্থাতেও এসেছে গার্হস্থ্য হিংসার বিচিত্র অভিযোগ। “অল ইন্ডিয়া প্রোগ্রেসিভ উইমেন’স অ্যাসোসিয়েশন”-এর সম্পাদক কবিতা কৃষ্ণণ মন্তব্য বলেন, এমন সব পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে লকডাউনের আগে কিছু সময়ের প্রস্তুতিপর্ব দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে অন্তত কিছু মেয়ে তাদের সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার সময় পেত। এখন প্রশাসনের এই ভ্রান্তিরই খেসারত দিতে হচ্ছে! একইসঙ্গে তিনি জানান, মহিলাদের ধারণা কাজ করছে, লকডাউনের সময় পুলিশ এসব বিষয়ে মাথা ঘামাতে চাইবে না, কিন্তু এমন ধারণা ভুল। কোনওরকম গার্হস্থ্য হিংসার আঁচ পেলেই স্থানীয় পুলিশকে নির্ভয়ে জানানো হোক, এমন অভয় দিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কের জের, দেশে একধাক্কায় ২০ শতাংশ বেড়েছে মানসিক রোগ]
এই মাসে ‘এনডব্লিউসি’-র কাছে, শুধুমাত্র মেল মারফতই আসা অভিযোগের সংখ্যা ২৯১-এর বেশি। নারী-অধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজের যে কোনও সংকটে জাত-শ্রেণি নির্বিশেষে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে নারীই, আর করোনার দিনেও তার ব্যত্যয় ঘটল না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ফ্রান্সে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার নারীদের বিনামূল্যে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে প্রশাসন, এমনকী, তাঁদের জন্য রাখা হয়েছে কাউন্সেলিং ব্যবস্থাও। ভারতের মতো দেশে যেখানে গার্হস্থ্য হিংসার দৃষ্টান্ত আকছার, সেখানে কি প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেবে? প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
The post লকডাউনের মধ্যে দেশে বাড়ছে গার্হস্থ্য হিংসা! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিকার নারীরাই appeared first on Sangbad Pratidin.
