সুমন করাতি, হুগলি: কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে? পাতকুয়োয় পড়ে গিয়েছিলেন অশীথিপর বৃদ্ধা। দীর্ঘ সময়ের পর তাঁকে জীবিত উদ্ধার করলেন পুলিশ ও দমকল বাহিনীর কর্মীরা। হুশ ফিরতে হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃদু গলায় বললেন, "চা খাব।" চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে হুগলির পাণ্ডুয়ার বৈঁচীগ্রাম দক্ষিণপাড়ায়। বৃদ্ধার প্রতিবেশীরাও হাঁফ ছেড়েছেন।

ঘটনাটি শনিবারের। দক্ষিণপাড়ায় বাসিন্দা বছর ৮৫-এর বৃদ্ধা শোভারানি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন আগেই। একমাত্র ছেলে পরিবার নিয়ে কলকাতায় থাকেন। বৃদ্ধাকে প্রতিবেশী মহিলা বর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায় দেখাশোনা করেন, প্রতিদিন খাবার দেন। গতকাল ওই প্রতিবেশী বাড়িতে গিয়ে দেখতে পান শোভারানি ভিতরে নেই। একা বৃদ্ধা কোথায় গেলেন? দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। খোঁজাখুঁজিও শুরু হয়। ওই বাড়িতেই পাতকুতো রয়েছে। সেখানে যেতেই চক্ষুচড়কগাছ হয় ওই মহিলার।
উদ্ধার করার মুহূর্ত। নিজস্ব চিত্র
ওই কুয়োর মধ্যে গভীরে জলের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই বৃদ্ধাকে। সময় নষ্ট না করে দ্রুত তিনি অন্য প্রতিবেশীদের খবর দেন তিনি। পাণ্ডুয়া থানার বৈঁচী পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেওয়া হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যান পুলিশ ও দমকল কর্মীরা। কুয়োর মধ্যে মই নামিয়ে দমকলকর্মীরা সেখানে উদ্ধারের জন্য নামেন। কিছু সময় পরে ধীরে ধীরে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে উপরে তোলা হয়। তখন তাঁর আর তেমন সংজ্ঞা ছিল না। তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সম্বিত ফিরে আসে শোভারানির। সামনে থাকা নার্সকে দেখে তিনি বলেন, "চা খাব।" এই কথা পরে শুনে প্রতিবেশীরা আশ্বস্ত হয়েছেন। বৃদ্ধা যে বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন। সেই কথাও বলছেন অনেকে। প্রতিবেশীরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
বৃদ্ধার ছেলে সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামের লোকের কাছে খবর পেয়ে কলকাতা থেকে সোজা হাসপাতালে পৌঁছান। তিনি বলেন, "মা বাড়িতে একাই থাকেন। তাঁকে দেখাশোনার জন্য লোক আছে। আমাকে গ্রামের ছেলেরা খবর দিল পাতকুয়ায় পড়ে গিয়েছেন।" মাকে সুস্থ দেখে হাঁফ ছাড়েন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধা জল নিতে গিয়ে পাতকুয়োয় পরে গিয়েছিলেন। তাঁকে দমকল কর্মীরা উদ্ধার করে। বৃদ্ধা বুদ্ধি করে কপিকলের দড়ি ধরে ভেসেছিলেন বলে জানা গিয়েছে।