নন্দন দত্ত, সিউড়ি: সমীরের কাছে নন্দিনীকে ফিরিয়ে দেওয়ার পণ করেছিলেন ভনরাজ। কিন্তু শেষ অবধি ‘সাত জন্মের বন্ধন’ ছিড়ে প্রথম প্রেমের কাছে ফিরতে পারেনি নন্দিনীরূপী ঐশ্বর্য। ভনরাজ ওরফে অজয় দেবগণের কাছে ফিরে গিয়েছিল সে। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ায় সত্যি হল না সেলুলয়েডের চিত্রনাট্য। মল্লারপুরের স্মৃতি মণ্ডল স্বামীর মধ্যস্থতায় ফিরল ছেলেবেলার প্রেমিকের কাছে।
শনিবার বীরভূমের মল্লারপুরের মল্লেশ্বরতলায় বাল্যপ্রেমিক কৃষ্ণেন্দু মণ্ডলের সঙ্গে নতুন ঘর বাঁধলেন নাড়ুগোপাল মণ্ডলের পাঁচ বছরের বিবাহিত স্ত্রী। চোখের জলে স্ত্রীকে বিদায় জানালেও প্রেমিকের সঙ্গে স্মৃতি যেন সুখী হয় অনুরোধও করলেন। তবে তিন বছরের ছেলে যে তাঁর কাছেই থাকবে সে কথা জানিয়ে দিলেন স্বামী নাড়ুগোপাল।
[আরও পড়ুন: চলছে গুলি, লুটিয়ে পড়ছে রক্তাক্ত মানুষ! দেখুন মস্কোয় হাড়হিম করা জঙ্গি হামলার ভিডিও]
মল্লারপুর থানার পোড্ডা গ্রামের নাড়ুগোপাল মণ্ডলের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল সন্ধিগড়া বাজারের স্মৃতির। তাঁদের তিন বছরের সন্তান আছে। দিন তিনেক আগে পুরনো শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে প্রেমিকের কাছে চলে যান স্মৃতি। নাড়ুগোপাল মল্লারপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। চারদিন পর স্মৃতি জানান, তিনি আর স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান না। শুক্রবার মল্লারপুর থানায় তিনি জানান, প্রেমিক কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গেই বাকি জীবন কাটাবেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর,পঞ্চম শ্রেণি থেকে সহপাঠী কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে স্মৃতির প্রেমের সম্পর্ক। কিন্তু পরিবারের চাপে তাঁদের চারহাত এক হয়নি। স্মৃতির বিয়ের পরেও দুজনের মধ্যে ফোনে যোগাযোগ ছিল। কানাচি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সত্যবান মণ্ডল জানান, এর আগেও একবার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন স্মৃতি। সেবার বুঝিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। এবার আর তিনি কিছুতেই ফিরতে রাজি নয়। তাই প্রেমিকের কাছেই তাঁকে ফিরিয়ে দিল স্বামী।
[আরও পড়ুন: প্রশান্ত কিশোর ‘ওভারহাইপড’! প্রাক্তন ভোটকুশলীকে নিয়ে বিস্ফোরক অভিষেক]
পেশায় চাষি নাড়ুগোপাল জানান, “আমার জীবনে যত কষ্টই আসুক, শুধু প্রেম সত্য হোক। ছেলে আমার কাছে থাকবে। আমরা দুজনে স্বেচ্ছায় ছাড়পত্র লিখে নিলাম।” স্মৃতি মণ্ডল জানান, “আমি বাকি জীবন প্রেমিকের সঙ্গে বাঁচতে চাই। শ্বশুরবাড়িতে দমবন্ধ হয়ে আসছিল। তাই সেখান থেকে মুক্তি নিলাম। আমিই স্বামীর কাছে ছাড়পত্র চেয়ে নিলাম।” নতুন স্ত্রীকে মল্লেশ্বরের বাইরের কালীতলায় পুরনো স্বামীর সামনেই সিঁদুর পড়িয়ে দিলেন কৃষ্ণেন্দু। তিনি জালেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মধ্যে ভালোবাসা আছে। আমি ওকে ছেড়ে অনেক কষ্টে ছিলাম। বাড়ি নিয়ে গিয়ে ওর সঙ্গে জীবন কাটাতে চায়। ওঁর বিয়ের পর থেকে আমি বেশ কয়েকবার নিজেকে শেষ করার কথা ভেবেছি। কিন্তু বেঁচেছিলাম শুধু এই দিনটার জন্য। আমি কৃতজ্ঞ ওঁর স্বামীর কাছে। আমার ভালোবাসাকে আমার কেছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।” এর পরেই নতুন জীবনের জন্য প্রেমিকের হাত ধরে শাকির পাড়ার নতুন বউ হিসাবে নতুন ঠিকানায় নতুন শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন স্মৃতি। শুধু ছেলেকে নিয়ে পাঁচ বছরের স্মৃতিকে আকড়ে বাড়ি ফিরলেন তাঁর প্রথম স্বামী।